গত দুই মৌসুমে ফেডারেশন কাপে নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা মিলেছিল। শেখ জামাল ও শেখ রাসেল শিরোপা যেতার নাম লেখায়। এবার আর নতুন নয়, ফাইনালে লড়াই হবে শিরোপা পুনরুদ্ধারের। আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকাল পাঁচটায় ওয়ালটন ফেডারেশন কাপ ফুটবলে ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্র। যারাই জিতবে তারা হারানো ট্রফি ফিরে পাবে।
শেখ জামাল ২০১১ ও মুক্তিযোদ্ধা ২০০৫ সালে ফেডারেশন কাপে শেষবারের মতো ট্রফি জিতেছিল। কথা হচ্ছে হারানো গৌরব ফিরে পাবে কারা? সত্যি বলতে কি ফাইনালে শেখ জামালের জায়গা না হলে তা হতো অপ্রত্যাশিত। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা এত দূর যে আসবে তা ছিল অনেকের ধারণার বাইরে। কারণ মৌসুমে সেরা দল গড়েছে শেখ জামাল, তারপর মোহামেডানকে ফেবারিট বলা যায়। শেখ রাসেল বা আবাহনীও একেবারে দুর্বল দল না।
সুতরাং তাদেরকে পেছনে ফেলে মুক্তিযোদ্ধা শিরোপার রাস্তা এসে পেঁৗছবে তা ছিল ভাবনার বাইরে। ফেডারেশন কাপের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ফেবারিট দলকে পেছনে ফেলে ওয়ান্ডারার্স ও আরামবাগ ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু মুক্তির এ সাফল্যকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। গ্রুপে শেখ রাসেল থাকার পরও তারা শীর্ষে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল।
এরপর ব্রাদার্স আর সেমিতে টিম বিজেএমসিকে হারিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ঠাঁই হয় ফাইনালে।
সত্যি বলতে কি কাগজে কলমে তেমন শক্তিশালী দল না হলেও মৌসুমে প্রথম আসরে মানিকের শিষ্যরা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। বিশেষ করে তাদের আক্রমণভাগ বেশ গোছানো। ধানমন্ডির সনি নর্দে যেমন দলে একাই একশো হয়ে দেখা দিয়েছেন। তেমনিভাবে কিংসলে এলিটা প্রতিপক্ষের ঘুম হারাম করে দিচ্ছেন।
হ্যাঁ, মুক্তিযোদ্ধা আসরে যতই দক্ষতার স্বাক্ষর রাখুক না কেন ফাইনালে যদি শক্তির বিচার করা হয় তাহলে দুই দলের পার্থক্যকে আকাশ-পাতাল বললেও ভুল হবে না।
কি নেই শেখ জামালের। তাদের বড় প্রাপ্তি ছিল ২০০২ সালে একবার সেমিফাইনাল খেলা। ২০১০ সালে নতুন নামকরণে নতুনভাবে আবিভর্ূত হওয়ার পর ধানমন্ডিকে ফুটবলে প্রধান শক্তি বললে ভুল হবে না। এবার তারা দেশের ফুটবলে স্মরণকালের সেরা দল গড়েছে। লোকাল কানেকশন যেমন তেমনিভাবে বিদেশিরাও মাঠ কাঁপাচ্ছেন।
এমন শক্তিশালী দল থাকার পরও শিরোপা হাত ছাড়া হয়ে গেলে তা হবে তাদের জন্য বড় ট্রাজেডি। যাক তারপরও শেখ জামাল প্রতিপক্ষকে তুচ্ছ চোখে দেখছে না। দলের নাইজেরিয়ান কোচ জোসেফ আফুসির বললেন, অবশ্যই ছেলেদের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট। আশা রাখি ফাইনালেও তারা হতাশ করবে না। তবে মুক্তিযোদ্ধাকে যোগ্য প্রতিপক্ষ ভেবেই মাঠে নামব।
তিনি বলেন, মানিক একজন মেধাবী কোচ। ও জানে টেনশনপূর্ণ ম্যাচে দলকে কীভাবে খেলাতে হবে। সুতরাং মাঠে সতর্ক থাকতে হবে। সুযোগ পেলেই ওরা জ্বলে উঠতে পারে। অধিনায়ক মামুনুল বলেন, দলবদলের সময় আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি মৌসুমে সব ট্রফি জিততেই মাঠে নামব।
ফাইনালে এসেছি, আশা রাখি প্রথম ট্রফি ঘরে নিয়েই সেই রাস্তায় হাঁটব। তিনি বলেন, সনি নর্দে অবশ্যই তার যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছেন। কিন্তু ফাইনালে একজন ভালো খেললে চলবে না। শিরোপা জিততে হলে পুরো দলকে ভালো খেলতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিপক্ষরা ভালো খেলা উপহার দিয়ে ফাইনালে উঠছে।
ওরাও ট্রফি ঘরে নিতে মরণ কামড় দেবেই। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধার বিদেশিরা নজর কাড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করছেন। আক্রমণ ও রক্ষণভাগ দুটোতেই তারা পারদর্শিতার ছাপ রাখছে।
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধার কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, কোনো সন্দেহ নেই শেখ জামাল এবার সেরা দল গড়েছে। ঢাকার মাঠে এমন ব্যালেন্সড দল কমই দেখা গেছে।
সনি নর্দে এতটা অপ্রতিরোধ্য যে তাতে আমি বলব অনেক দিন পর ঢাকার মাঠে একজন মানসম্পন্ন বিদেশিকে পাওয়া গেছে। যার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। অর্থাৎ শিরোপা জিততে হলে মাঠে এগারজনকেই সেরা খেলা দেখাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ছেলেরা তাদের নৈপুণ্য দিয়ে হারানো ট্রফি উদ্ধারে সহায়তা করবে। অধিনায়ক মারুফ আহমেদ বলেন, আল্লার অশেষ রহমতে প্রথমবারের মতো অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে দলকে ফাইনালে উঠিয়েছি।
আশা রাখি শিরোপা জিতেই মাঠ ছাড়ব। সবাই সনি নর্দের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না আমাদেরও কিংসলে এলিটা রয়েছে। সেমিফাইনালে আহত হয়ে নিয়মিত গোলরক্ষক আমিনুল আজ ফাইনাল খেলতে পারছেন না। মারুফ বলেন, আমিনুল ভাই খুব উঁচুমানের গোলরক্ষক।
উনি থাকলে ভালো হতো, কিন্তু উনি উঠে যাওয়ার পর সেমিফাইনালে বদলি গোলরক্ষক হিসেবে রাসেল মাহমুদ লিটন ভালোই খেলেছেন। অর্থাৎ কাগজে কলমে শক্তির দিক দিয়ে আমরা হয়তো পিছিয়ে আছি। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে আমরা কম কিসের। এতদূর যখন এসেছি, তখন আশা রাখি ট্রফি নিয়েই ঘরে ফিরব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।