The Calm Motionless $leeping City.. Busy Roads R Becoming Uproar.. I’m Walking Alone To My Desire City..!! রমিজ মিয়া লাশটাকে দেখে যত ভয় পেলো তা মনে হয় সারাজীবনে সে কোনদিন পায় নাই। এইটাই তার পেশা,কবর খুঁড়ে লাশ নামানো। বেশিরভাগ বেওয়ারিশ লাশ এইখানে কবর দেওয়া হয়।
রমিজ মিয়ার এইসব লাশ কবরে রাখতে খুব মায়া হয়। লোকটা পৃথিবীতে এতদিন কত আমোদেই কাটাইলো আর এহন মারা যাওনের পর তার লাশডাও কেউ খুজতে আইলো না।
এই লোকের ভাগ্যে হয়ত এইটাই লেখা ছিলো। এসবই ভাবে রমিজ মিয়া লাশগুলারে মাটি দেয়ার সময়।
কিন্তু এই লাশটার ক্ষেত্রে তার এমন কোন অনূভুতি কাজ করলো না। বরং ভয় পেয়েছে সে। লোকটার মুখ দেখে বয়স আন্দাজ করেছে রমিজ মিয়া,প্রায় ৫০ হবে।
কিন্তু চেহারায় রাগি রাগি ভাব। বেশিক্ষন লাশটার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে নাই সে। এত বীভৎস!!
লোকটার এমন কি অপরাধ ছিলো যে কে বা কারা তাকে এভাবে মেরেছে। প্রথমে মাথা শরীর থেকে আলাদা করেছে,তারপর সারা শরীর চাপাতি বা এই জাতীয় কিছু দিয়ে কুপিয়ে গায়ে এসিড ঢেলে দিয়েছে।
ওহ কি নৃশংস!!এই লাশটার কোন পরিচয় পাওয়া যায় নাই।
এমনকি ৪-৫দিন শহর থেকে কেউ হারিয়ে গেছে এমনটাও শোনা যায় নাই। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে থানা থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে পোস্ট মর্টম করে লাশ কবর দিয়ে দিতে।
কিন্তু মফস্বলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে যা হয়,তাই হয়েছে এই লাশটার ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ পোস্ট মর্টম করে কোনমতে দায়সারা সেলাই দিয়ে লাশ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে কবরস্থানে। সরকারি হাসপাতাল থেকে পাঠানো বেওয়ারিশ লাশগুলোকে দাফন করা হয় যে কবরস্থানে তার পাহারাদার রমিজ মিয়া।
আজ যখন এ্যাম্বুলেন্স এসে এই লাশটা কবরস্থানে রেখে গেলো তখন রমিজ মিয়া বুঝে গেলো আরো একটা বেওয়ারিশ লাশ তাকে যত্ন নিয়ে কবর দিতে হবে। কিন্তু লাশটিকে দেখার পর তার সেই পুরোনো মায়া দরদ কাজ করলো না।
এমনিতেও প্রায় সন্ধা হয়ে এলো,তাই তাড়াতাড়ি ঝন্টুকে ডাক দিয়ে কবর খুড়তে লেগে গেলো সে। আর বারবার তার চোখে ভাসতে লাগলো দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন মাথাটার কথা। সরকারী হাসপাতাল গুলো এত গাফেলতি করে যে বেওয়ারিশ বলে লাশটার মাথা সেলাই করে লাগিয়ে দেয় নাই।
তার ওপর হাসপাতালের মর্গে ৪-৫দিন পরে ছিলো। কি যে দূর্গন্ধ বের হচ্ছিলো। ।
রমিজ মিয়া আর ঝন্টু মিলে যখন লাশটা কবর দেয়া শেস করলো তখন মাগরিবের আজান পড়ে গেছে। রমিজ মিয়া গোছল করতে গেলো আর কাজ শেস বলে ঝন্টুও চলে গেলো।
ঝন্টু ১০-১২ বছরের একটা ছেলে রমিজ মিয়াকে কাজে সাহায্য করে,সন্ধা পর্যন্ত থাকে তারপর চলে যায়। আর তখন কবরস্থানে থাকে শুধু রমিজ মিয়া একা।
কবরস্থানে যে জায়গাটায় মু্র্দার জানাযা পড়ানো হয়,তার সামনে গেট থেকে বের হয়েই পাশে খুপরি মত একচালা ঘরে রমিজ মিয়া থাকে। নাম মাত্র গেট থেকে বাইরে,বলতে গেলে কবরস্থানের ভিতরেই থাকে সে। মফস্বলের কবরস্থান বলে কথা,তার উপর আবার বেওয়ারিশ লাশের,তাই বলতে গেলে শহরের এক কোণায়,জনবসতি থেকে একটু দূরের জায়গাটাই বেছে নেওয়া হয়েছে।
একজনের রান্না,তাই প্রতিদিন এশার নামাজ পড়ে রাণ্ণা করে খেয়ে শুয়ে পড়ে রমিজ মিয়া। মাঝে মাঝে বাইরে এসে কবরস্থানের দিকে তাকায় একবার। তারমতে কবরস্থানে পাহারা দেয়ার কিছু নাই। বড় বড় শহরে তো নাকি লাশ চুরি হয় কিন্তু এই শহরে এমন কিছু ঘটেছে বলে শোনে নাই সে।
তবুও তার চাকরী যখন এইটাই তাই ঘুমানোর আগে আজও নিয়মমাফিক খাওয়া দাওয়া সেরে একটা বিড়ি ধরিয়ে এসে তাকায় কবরগুলার দিকে।
স্বভাবমতই চোখ যা্য নতুন দেয়া কবরটার দিকে। চোখের ভুল নয় তার স্পষ্ট মনে হলো কবরটার মাথা'র দিকে কি যেন আছে!!
কাছে গিয়ে দেখলো মাটি খোড়া!! কি ব্যাপার!!
মাত্র ৩-৪ ঘন্টা আগেই তো সে আর ঝন্টু মিলে পরিপাটি করে কবর দিলো। একটু তাড়াহুরা সে করেছিলো অন্যদিনের তুলনায় কিন্তু এভাবে রেখে যায় নাই। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ মাটি খোড়ার চেষ্টা করেছে এবং কতটুকু খুড়েও ফেলেছে।
পরমূহুর্তে সে ভাবলো হয়ত গেট দিয়ে ঢুকে কোন কুকুর এই কাজ করেছে।
তাই সে হাত দিয়ে মাটি জায়গামত চাপা দিয়ে দিলো,কিন্তু এইটা সে একবারও চিন্তা করলো না যে সে নিজহাতে প্রতিদিন গেট লাগিয়ে তালা লাগায় দেয়। তারপর কোন কুকুর কেন,মানুষের পক্ষেও কবরস্থানে ঢোকা সম্ভব নয়!!
ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে নিশ্চিত মনে ঘুমিয়ে পড়লো সে। প্রচন্ড অস্বস্তিতে ঘুম ভেংগে গেলো তার রাতে। তার এমন হয় না কখনো,একঘুমেই রাত শেস হয়ে যায়। তার কাছে ঘড়ি না থাকায় বুঝলো না রাত ঠিক কয়টা বাজে।
ঘুম ভাংলে তার এধরনের অনূভুতি হয় না কখনো,কিন্ত আজ তার কেন জানি দরজা খুলে বাইরে যেতে ইচ্ছা হলো।
দরজা খুলে বাইরে যাবার পর তার নাকে পচাঁ কটু গন্ধ এসে লাগলো। গন্ধের উৎস খুজতে আশে-পাশে তাকালো সে। পরিষ্কার চাদেঁর আলোয় দেখলো মূর্দার জানাযা পড়ানো হয় যে জায়গায় সেখানে সাদা কাপড়ে মোড়া কিছু একটা রয়েছে সম্ভবত একটা লাশ!!
রমিজ মিয়া ভীতু কখনোই নয় তাই ভয় সে একটুও পেলো না বরং কাছে এগিয়ে গেলো ভালো করে দেখার জন্য। ঠিক মূর্দার খাটিয়া যেখানে রেখে জানাযা পড়ানো হয় সেখানে একটা লাশ পড়ে আছে।
এতরাতে কারা লাশ নিয়ে আসলো ভাবতে শুরু করলো রমিজ মিয়া। যদি কেউ এনে থাকে তাহোলে তাকে ডেকে তুললো না কেন। আবার ভাবলো ভিতরে ঢুকতে হলে গেট দিয়েই ঢুকতে হবে যার চাবি একমাত্র রমিজ মিয়ার কাছেই আছে!!
এবার চারিদিক থেকে ভয়ের অনূভুতি গ্রাস করলো তাকে। হাটার শক্তিও মনে হলো কেউ কমিয়ে দিয়েছে। তবুও বিকারগ্রস্থের মত সে এগিয়ে গেলো লাশটার দিকে।
কাপড় খুলে যা দেখলো তাতে তার মনে হলো সে বুঝি এখনই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে!!
সেই মুখটা,যা দেহ থেকে আলাদা করা হয়েছে এখন তার সামনে আবার। বিকালে কবর দেয়া লাশটা এখানে কিভাবে আসবে??এসিডে পোড়া পচা শরীর থেকে ভুরভুর করে গন্ধ বের হচ্ছে। রমিজ মিয়ার মাথায় এসব কিছুই ঢোকে না। অতি শোকে পাথর হবার মত সে অতি ভয়ে বিহবল এখন!! হঠাৎ তার মনে হলো এখনই বুঝি প্রত্যেকটি লাশ উঠে এসে এভাবে পড়ে থাকবে তার সামনে। কিন্তু এমন কিছুই ঘটলো না।
রমিজ মিয়ার সামনে নিথর পড়ে আছে লাশটি।
রমিজ মিয়ার মনে হলো সে গায়ে শক্তি ফিরে পেলো হঠাৎ বা ভয়ের ঝাপটা টা চলে গেলো তার উপর দিয়ে। কিভাবে কেন লাশ কবর থেকে উঠে আসলো এসব চিন্তা না করে সে ভাবলো লাশটাকে আবার কবর দিতে হবে।
এই ভাবা মাত্রই সে লাশটাকে কাধে তুলে নিলো। জীবনে মনে হয় এত ভারী লাশ সে কোনদিন বহন করে নাই তাই মনে হলো রমিজ মিয়ার।
ভার সামলাতে বেশ বেগ পেতে হলো তার। ৫-৬ দিনের পুরানো লাশ রমিজ মিয়া জোরে ধরা মাত্রই ধুমড়ে মুচড়ে গেলো। মনে হলো এখনই বুঝি হাত বা পা খুলে পড়বে। রমিজ মিয়ার মনে ছিলো না যে লাশটার মাথা শরীর থেকে আলাদা,তাই সে লাশটা ঘাড়ে নেওয়া মাত্রই মাথাটা থপ করে পড়লো কাপড়ের ভিতর থেকে। আর একহাতে মাথাটাও তুলে নিলো রমিজ মিয়া,চললো কবরে লাশটি রেখে আসতে।
লাশটি কবরে রেখে মাথাটা ঠিক জায়গায় বসানো মাত্রই চোখ কপালে উঠলো তার। বড় বড় হলুদ চোখ দিয়ে লাশটা তাকিয়ে আছে তার দিকে আর একটা হাত দিয়ে ধরে রেখেছে রমিজ মিয়ার হাত এবং এ্ত জোরে যে কারো সাধ্য নাই সেই হাত ছাড়ানোর!!
রমিজ মিয়ার গায়ের সব লোম খাড়া হয়ে গেলো এবং এতকিছু আর সহ্য করতে না পেরে সে জ্ঞান হারালো।
যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন সকাল,সে দেখলো ঝন্টু তার মুখের উপর ঝুকে আছে। ঝন্টু জিগেস করলো রাতে কি হয়েছিলো এবং কিভাবে নতুন কবর দেয়া লাশটা মুর্দার জানাযা পড়ানোর জায়গায় গেলো!!
এই কথা শুনে রমিজ মিয়ার কানে তালা লাগার জোগাড় হলো। সে নিজে কাল ২য় বারের মত লাশ কবরে রেখে এসেছিলো শুধু মাটি দিতে পারে নাই।
কেন পারে নাই তা আর কাউকে বললো না শুধু বললো সে আর এখানে কাজ করবে না এবং তখনই চলে গেল।
কবরস্থান কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপার নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি না করে লাশটিকে আবার কবর দিয়ে নতুন দারোয়ান নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলো। সেদিন কার মত কাউকে না পেয়ে কবরস্থান কর্তৃপক্ষরাই গেটে তালা লাগিয়ে চলে গেলো।
সেদিন শুক্লপক্ষের রাতে কেউ যদি কবরস্থানে উকি দিতো তাহলে দেখতে পেতো,নতুন কবর দেয়া লাশটি থেকে একটা হাত বের হয়ে অতিকষ্টে হাতড়ে কবর থেকে মাটি সরিয়ে নিজের মাথাটা একহাতে ধরে উঠে দাড়ালো। তারপর ধীরে,অতি ধীরে এগিয়ে গেলো মুর্দার জানাযা পড়ানোর জায়গায়,চুপচাপ সেখানে শুয়ে পড়লো।
মুসলমানের ঘরে জন্ম তার,জানাযা ছাড়া কবরে থাকতে চা্য় না সে। বড় কষ্ট এতে,বড়ই কষ্ট..... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।