আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের দুই নয়া দুশমনঃ ভিরাট কোহলি,মাহেন্দ্র সিং ধোনি

এডিটেড ভিরাট কোহলি আর মাহেন্দ্র সিং ধোনি আজকাল যেন ওয়ানডেতে শ্রীলংকাকে পেলেই হল,আর টার্গেট নিয়ে ব্যাটিং করলে তো কথাই নাই,লংকানদের সুখের স্বপ্ন ছাড়খার করেই ছাড়বেন তারা। মনে পরে ২০১০ সালের কথা,কোহলি নতুন এসেছেন ক্রিকেটে,লংকানদের মাস্টউইন ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করে তিনশর মত টার্গেট দাঁড় করালো লংকানরা। প্রথমেই দ্রুত ভারতের দুইউইকেটের পতন হলেও কোহলি শেষমেষ সেঞ্চুরী করে ম্যাচটা ভারতকে জিতেয়ে দেন। সেই শুরু। এরপর একাধিক ম্যাচেই কোহলির ইনিংস শ্রীলংকার জন্য বিপদজনক হয়ে দাঁড়ায়।

পরবর্তীতে সেই দৌড়ে যোগ দেন মাহেন্দ্রসিং ধোনি। আরেকটা মাস্টউইন ম্যাচে শ্রীলংকা বেশ ভালোভাবেই ২৯৮ রান সংগ্রহ করে চাপে ফেলে দেয় ভারতকে। কিন্তু নয়ামুখ ধোনি ১৮৪ রানের একটা ইনিংস খেলে ফেলায় সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় এবং বড় অংকের উইকেট ব্যবধানে জয় পায় ভারত। তিনিও শ্রীলংকার সাথে ম্যাচ হলেই বিশেষ করে টার্গেট নিয়ে খেললে এমন সব ইনিংস খেলে ফেলেন যার ফলে শ্রীলংকার প্রায় নিশ্চিৎ হয়ে যাওয়া জয় হাতফসকে বেড়িয়ে যায়। এরমধ্যে রয়েছে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল।

তবে কথিত আছে সে ম্যাচে ভারতকে জেতানোর জন্য মাঠে নেমেছিলো মাফিয়াচক্র। লংকান ক্রিকেটের জন্য হারের তালিকার যেন শেষ নেই। তীরে এসে তরী ডোবানোর মত করেই একে একে তারা হেরেছে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল,২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল,২০০৮ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল,২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল,২০১২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল সহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের ফাইনাল। রানাতুঙ্গা-ডিসিলভা যুগের সমাপ্তির পরে সাঙ্গাকারা,জয়বর্ধনের হাতে গড়া লংকানরা কেন বারবার তীরে এসে তরী ডোবাচ্ছে তা লংকান সমর্থকরা বের করতে পারছেন না কিছুতেই। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল পরিসংখ্যনের বিচারে গত ১০ বছরে লংকানরা ওয়ানডে ক্রিকেটে যতবারই ধরাশায়ী হয়েছে তার বড় একটা অংশই ভারতের হাতে।

আর এখান থেকে স্প্যাশালী বললে কোহলি আর ধ্বনির হাতে। মাঝে মাঝে গৌতম গম্ভীরও লংকানদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতি ইনিংস খেলে ফেলেন। তবে অধিকাংশ ম্যাচেই সর্বনাশটা ঘটান কোহলি এবং ধোনি। ভারতের বোলিংয়কে খুব একটা সমীহ করার মত কিছু নেই। আপনি ৩৫০ রানের টার্গেট পেলেও অবলীলাই সে লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন ঠিকঠাকমত খেলতে পারলে।

এ দুই ব্যাটসম্যানের ধ্বংসলীলার সর্বশেষ সংযোজন ১১-১২ জুলাই রাতের Celkon Mobile Cup ফাইনাল। যদিও এ ম্যাচে কোহলি সুবিধা করতে পারেননি তবে ধ্বনি ঠিকই লংকানদের দিলে দাকোপ দিতে পেরেছেন। লোস্কোরিং ম্যাচের বোলিং পিচে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৩.৩ ওভারে ৪৯ রানেই দুই উইকেট হারানোর পর সাঙ্গাকারা এবং থিরিমান্নে ১২২ রানের জুটি গড়ে দলকে ১৭১ রান পর্যন্ত নিয়ে যান ৩৮.৪ ওভার পর্যন্ত। পিচ রিপোর্ট এবং ধারাভাষ্যে বলা হয় এপিচে ২৫০ রানের টার্গেট একটি বিপদজনক স্কোর হবে। সুতরাং সে পজিশনেই ছিল তারা।

কিন্তু এরপরে লংকান গুণধরেরা এমন ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখালো,স্কোরবোর্ডে ২০১ রান উঠতেই তাদের বাকী আট উইকেটের পতন অর্থাৎ শেষ ৩০ রান তুলতেই আট উইকেট খরচ। যেহেতু ভারতের বোলিংটা তুলনামূলক সহনীয় তাই ভারতের বিরুদ্ধে জেতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পন্হা একটা বড়অংকের টার্গেট সেট করা। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেও শেষমেষ ২০১ রানে সীমাবদ্ধ থাকায় ধরেই নেওয়া হয়েছিল শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিং এ টার্গেটে পৌঁছে যাবে,অবলীলায় হোক বা সংগ্রাম করেই হোক। তেমনটায় যেন হচ্ছিল,অন্তত ভারত যখন ৩১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রানে পৌঁছে যায়। অবশ্য এর মধ্যে বিপদজনক ভিরাট কোহলি গন।

ভারতের জেতার জন্য প্রয়োজন ১১৪ বলে ৬৩ রান আর হাতে আছে ৭ উইকেট। লংকান নয়াক্যাপ্টেন ম্যাথিউসের প্রশংসা করতেই হয় এবং সেই সাথে রঙ্গনা হেরাথের। কারণ এরপরে ভারতের স্কোর যখন ১৫২ রান এবং খরচ ৩৭.২ ওভার,তখন ভারতের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে ম্যাথিউসের কুল ক্যাপ্টেন্সি এবং হেরাথের বিষাক্ত বোলিংয়ের কারণে। অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা আউট হয়ে চলে গেলেও ধ্বনি ক্রিজে টিকে ছিলেন। আর এই ধ্বনিই শেষমেষ সর্বনাশটা করলেন।

ভারতের স্কোর যখন ৪১.৫ ওভারে ১৬৭,তখন অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে। অর্থাৎ ৪৯ বলে ৩৫ রাব প্রয়োজন আর হাতে রয়েছে ২ উইকেট। যখন নবম উইকেটের পতন তখন স্কোরবোর্ডে ১৮২ রান এবং ৪৬.২ ওভার। কিন্তু ধোনি আউট হননি। ভারতের তখন প্রয়োজন ২০ রান আর হাতে বল রয়েছে ২২।

এ পরিস্হিতিতে আগেভাগেই কমটার্গেট দিয়ে দেওয়া ম্যাচে ম্যাচসহ টুর্নামেন্ট জেতার স্বপ্ন দেখতেই পারে লংকানরা। স্কোরকার্ড: Click This Link কিন্তু ধোনির বদলে অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বোলারদের সময় মত আউট করতে না পারার খেসারতই দিতে হল লংকানদের। শেষ ওভারে দরকার ১৫ রান,হাতে আছে ১ উইকেট,সেই প্রায় অসাধ্যটায় সাধন করলেন ধোনি। ঈরাঙ্গার উপর ভরসা করে ম্যাথিউস তাকে শেষ ওভারে বোলিং করার দায়িত্ব দিলেও শেষরক্ষা করতে পারেন নি ঈরাঙ্গা। দুইটা ছক্কা আর একটা চার মেরে ধ্বনি শেষওভারে ভারতকে ম্যাচটা জিতিয়ে দেন।

ম্যাচশেষে ধোনি বলেন তার বিশ্বাস ছিল নিজে স্ট্রাইক নিতে পারলে তিনি একাই জেতাতে পারবেন যত রানই প্রয়োজন হোক না কেন। ম্যাচশেষে হ্যান্ডশেকের সময় সাঙ্গাকারার মুখাব্যক্তি একদম স্বাভাবিক ছিল!এ স্বাভাবিকতা যেন একটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নিয়মকে মেনে নেওয়া। বারবার কোহলি এবং ধোনি নামের দুই ব্যাটিং প্রতিবন্ধকতাকে উৎরে উঠতে না পারার ব্যর্থতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার মুখাব্যক্তি। অথচ ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালেও সাঙ্গাকারার মুখাব্যক্তিতে ম্যাচ হারার ব্যর্থতাকে চাপা দেওয়ার একটা চেষ্টা লক্ষ্য করা গিয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.