আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার বাঙ্গালীরা সৌদিদের টনক নাড়িয়ে দিয়েছে।

আমি সত্যে অবিচল। এমন একটা সময় ছিল, যখন আমাদের দেশের লোকেরা আরবীতে লেখা কোন আদিরসের গল্প বা সিনেমার বিজ্ঞাপন দেখলেও মাথায় টুপি দিয়ে তা পড়ার চেষ্টা করতো। ধারনা করতো, আরবী পড়ছি, ছওয়াব হবে। সেসব আসলে কি জিনিস তা বুঝার কোন ধার ধারতো না। চেষ্টাও করতো না।

আরবী হলেই হলো। শ্রদ্ধায় গদগদ হয়ে যেতো। তেমনিভাবে সৌদি আরব দেশটাও। ভাবতো সৌদি মানেই ইসলাম। সৌদির বিরোধিতা মানেই ইসলামের বিরোধিতা।

সৌদির শাসকদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে জিব্বায় কামড় কাটতো। ভাবখানা এই, অনেক গুনাহের কাজ করে ফেললো। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। মানুষ এখন অনেক সচেতন। ভালমন্দ নিজেরাই বুঝার ক্ষমতা রাখে।

আর এটা হলো তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। কোন তথ্যই আর গোপন রাখা যায় না। এক সময় না এক সময় সত্যটা মানুষ জানতে পারেই। সৌদির পক্ষে প্রচারনায় লিপ্ত তথাকথিত মোল্লারা এবং ইসলামী পন্ডিতেরা এখন আর যেনতেনভাবে সৌদির পক্ষে মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছে না। বাঙ্গালীরা একজন আরব হত্যায় অভিযুক্ত, এটাই যথেষ্ট ছিল সৌদিদের কাছে।

আরব হত্যায় মিছকিন বাঙ্গালী!! আরব জাতীয়তাবাদের অহমিকায় তারা ৮ বাংগালীর কল্লা কেটে ফেলে দিলো। ভেবেছিল, তাদের প্রচার যন্ত্র অতীতের মতোই সবকিছু ম্যানেজ করে নেবে। কিন্তু এবার আর তা হয়নি। মানুষ ফুঁসে উঠেছে। প্রতিবাদের ঝড় এখনো বয়ে যাচ্ছে।

সৌদিরা ইসলামের দোহাই দিলো। নানা কায়দার যুক্তি দিলো। বললো, সৌদিতে সবার জন্যে একই আইন। কিন্তু ২০০০ সালের ডিসেম্বরে উইলিয়াম স্যাম্পসন নামে একজন ব্রিটিশ-কানাডিয়ান নাগরিককে সৌদি সরকার সন্ত্রাসবাদ, গোয়েন্দাবৃত্তি ও খুনের দায়ে গ্রেফতার করার পরও তার শিরশ্চেদ করার সাহস যে সৌদি সরকার বা তার তথাকথিত শরীয়া কাউন্সিলের হয়নি, সেটা বেমালুম চেপে গেলো। দুই বছর পর ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে তারা ব্রিটিশ ও কানাডিয়ান সরকারের চাপে তাকে কোনরকম বিচার ছাড়াই আরো কয়েকজন সহযোগীসহ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সৌদি কর্তৃপক্ষ।

বাংগালী মিছকিনের ক্ষেত্রে তারা সেসব বিবেচনার কোন ধার ধারেনি। সৌদির এদেশীয় এজেন্টরা বাহাবা, সুখবর বলে বেশ বগল দাবালো। তথাকথিত দরবারী মওলানারা সৌদির যে কোন সিদ্ধান্তে ইসলামী লেভেল লাগাতে বরাবরের মতই তৎপর হয়ে উঠলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সৌদিরা জবাবদিহি করতে বাধ্য হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে মানুষের যে ঘৃণা, তা-ও এখন তারা হয়তো অনুধাবন করতে পারছে। ইসলামের দোহাই দিয়ে এখন আর পার পাওয়া যাচ্ছে না। কেননা তাদের ভন্ডামী মানুষ এখন ধরে ফেলেছে। যারা মার্কিনীদের তাবেদারীতে লিপ্ত তাদের মুখে ইসলাম মানায় না। কিসাস ইসলামের আইন।

প্রতিটি মুসলমান কিসাস মানেন। কিন্তু কিসাস কায়েম করতে পারেন তো কেবল ইসলামের খলিফা। কোন মার্কিণ তাবেদার নয়। অপরাধীদের অপরাধ সন্দেহ্তীতভাবে প্রমাণিত না হলে কিসাস কার্যকর করা যায় না। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি ইতিমধ্যেই হয়েছে।

জানা গেছে, ঐ আট বাংলাদেশীকে চাকুরী চু্ত করায় তারা পেটের দায়ে চুরি করেছে, সৌদির কঠোর আইন জানা থাকা সত্বেও। মিশরীয় দারোয়ানকে বেধে রেখেছিল। পরে সে মারা যায়। খুন করা এদের উদ্দেশ্য ছিল না। সে যা হোক, অপরাধীর বিচার হবে সেটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু বিচারটা হলো বিচারের নামে অবিচার। দোহাই দেয়া হলো ইসলামের। আমাদের আপত্তিটা ঠিক এখানেই। তবে বাঙ্গালীরা এবার সৌদিদের টনক নাড়িয়ে দিয়েছে। সৌদির পোষা তথাকথিত আলেমদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.