i want to live simple and die simple আমাকে ভুতে ও ধরে নাই , জ্বীনে ও ধরে নাই
" একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি , একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি...। " মাইকিং করতে করতে রিকশাটি পেছনে হারিয়ে গেলো আস্তে আস্তে । আর আমার মনের মাঝে ভেসে উঠলো ছোটবেলার একটা ঘটনা । ঘটনাটা নিয়ে এখনো পরিবারে আমরা মজা করি , কখনো মনের অজান্তে হেসে ফেলি । কিন্তু এ ও ভাবি একটু এদিক ওদিকই হলে কি ভয়ঙ্কর ট্রাজেডী নেমে আসতো আমাদের পরিবারে !
ঘটনাটা আমার নিজ বড় ভাইয়ের ।
তখন যতদুর মনে পরে ক্লাস ৪/৫ এ পড়ি। স্কুল থেকে এসে শুনি ভাই কে পাওয়া যাচ্ছেনা । শুরু হোল খোঁজাখুঁজি । মেলে না মেলে না । অবশেষে একটি চিরকুট মিললো যাতে লিখা - " আমাকে ভুতেও ধরে নাই , আমাকে জ্বীনেও ধরে নাই ।
আমি নিজেই চইলা গেলাম " !!! হুমম্ মশায় তবে বুদ্ধদেব হয়েছেন ! গৃহত্যাগ ! কারন ?
কারন তেমন কিছুই না । কোন এক অপরাধে আম্মা হুজুর সামান্য পিঠ গরম করেছেন , এই যা । অন্য সময় এই সব মৃদু লাঠি চার্জ বিনাবাক্যব্যয়ে তিনি সয়ে থাকেন । কিন্তু ওইদিন ঘটনা প্যাঁচ খায় এক জায়গায়- আম্মিজান তার একশন প্রদর্শন
করেন সামনের বাসার এক অ্যান্টির সামনে যাদের সাথে আমাদের খুব খাতির ছিল এবং আমাদের খুব আদর করতেন। এতেই জনাবের আঁতে খুব ঘা লাগে এবং তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্তে গৃহত্যাগ (ওয়াক আউট ইশটাইল )।
এদিকে ছেলেধরার ভয়ে সবার কইলজা গেছে শুকাইয়া । শুরু হইলো মাইকিং । টেনশন আর টেনশন। ছোটবেলায় মানুশ মনে হয় অনেক স্বার্থপর থাকে । তাই আমার কিন্তু বেশি টেনশন হচ্ছিলো না ।
বরং বাসার সবাই খোঁজাখুঁজিতে ব্যস্ত থাকার দরুন বাসার পাহারাদার হিসাবে আমাকে ঘরে রেখে যাওয়ায় আমি যে খেলতে যেতে পারছি না , সেই টেনশনটা ই আমার কাছে বড় হয়ে উঠলো।
বিকালের দিকে জনাবকে পাওয়া গেলো বাসা থেকে কিছুটা দূরে এক বাড়িতে । বাড়ির লোকেরা হারানো বিজ্ঞপ্তি শুনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে । আমরা সবাই সঙ্গে সঙ্গে ওই বাসায় যাই। গিয়া দেখি ব্যাটা রাজার হালে আছে !ওই বাড়ির লোকদের ভাষ্য- দরজায় টোকা শুনে খুলে দেখি একটা ছোট ছেলে ।
ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো যে আমাদের বাসায় কাজের লোক লাগবে কিনা । ছেলেটির চেহারা ভালো , চুল পরিপাটি আর গায়ে দামি সোয়েটার । ধারনা করলাম বাসা থেকে পালিয়েছে । আমরা যদি কাজে না রাখি হয়তো খারাপ লোকের পাল্লায় পরবে । তাই বাসায় ঢুকিয়ে গোসল করালাম , খাবার খাওয়ালাম।
এর পর তো মাইকিং শুনলাম। বর্ণনা শুনে বুঝলাম এইটা ই সেই ছেলে ।
ছোটবেলায় কৃতজ্ঞতার বোধ ও হয়তো ভোঁতা থাকে । কারন ওই সময় ওই বাসার লোকদের প্রতি তেমন কৃতজ্ঞতা বোধ করি নাই। কিন্তু আজ বুঝি আমাদের পরিবারের কত বড় উপকার তারা করেছেন।
যাই হোক প্রাথমিক কান্নাকাটি ( ওই সময় এই সব ন্যাকামি অসহ্য মনে হয়েছিলো ) শেষে আসরের মধ্যমনি করে বড় ভাইকে সবাই ঘিরে ধরে বড় তার চিরকুটের রহস্যটা ভাংতে বলা হোল। সে কেন লিখেছে - "
আমাকে ভুতেও ধরে নাই , আমাকে জ্বীনেও ধরে নাই " !!!
উত্তরে বড় ভাই যা বলল তার সারমর্ম - কয়েকদিন আগে আমাদের এক আত্মীয় এর একটি ছেলে হারানো যায় । একদিন পরে আবার তাকে ফেরত পাওয়া যায়। সবাই তখন বলাবলি করেছিল যে - এটা জ্বীন , ভুতের কাজ । আর এই কথাটা বড় ভাইয়ের মাথায় গেঁথে ছিল।
আর তাই তাকে জ্বীন , ভুতে ধরেছে এমন মনে করে কেউ যেন ভয় না পায় এজন্য চিরকুটে এমনটা লিখেছে সে !
বড় ভাইকে বাড়িতে ফেরত আনার পর বেশ কিছু দিন আমার বেশ খারাপ কাটল । ঘর পালানোর সুবাদে ঘরে তো বটেই স্কুলে ও যে রকম আদর , আহ্লাদ ও ছাড় পাইল তাতে আমার প্রায় ই মনে হইতো- ইশ্ , আমি কেন পালাইলাম না আগে ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।