আমি একটি প্রাইভেট বিশ্বঃ খন্ডকালিন শিক্ষক হিসাবে চাকরি করি। ফক্যাল্টি অব সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিঃ এ একটি ইঞ্জিঃ সাব্জেক্ট এ ক্লাস নেই। তো ক্লাস শেষ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ও শেষ হল। খাতা দেখার পর্ব শুরু। উল্লেখ্য মিড টার্ম পরীক্ষা তে ছাত্র রা আমাকে বলল যে স্যার আপনি নাম্বার কম দিয়েছেন।
২০ নাম্বারের পরীক্ষাতে একজন ১৯, তারপর ১৮, তারপর ১৭ তারপর ২ জন ১৬ এ রকম নাম্বার পাইছে। গড় নাম্বার ১০-১২ এর মাঝে। তাই তাদের এত অভিযোগ। একজন বললোস্যার সরাসরি বলি আমাদের ভর্তি হবার সময় ই চুক্তি হয়েছে যে আমাদের অনেক সুবিধা দেয়া হবে ভাল করার জন্য এবং পড়ালেখা করার ব্যাপারে কোনো চাপ দেয়া হবে না। তারপর আমার আর কি বলার থাকতে পারে? যাহোক সেমিঃ ফাইনাল খাতা দেবার সময় এক সিনিয়র স্যার বললেন একটু ইজি ভাবে দেখার জন্য।
আমি ও একটু ইজি ভাবে দেখার চেস্টা করলাম। ৫০ এর মাঝে একজন ৪৮, ৪৭, ৪৪, এই নাম্বার এক জন এক জন করে পেয়েছে। আর গড় নাম্বার ৩০-৩২ এর আশেপাশে হবে। যা হোক তারপর ও বুঝতে পারলাম আমার দেয়া নাম্বার এবারও কিম হয়েছে। কি করব আমি কেউ যদি সমীকরন ভুল করে তাকে তো ফুল নাম্বার দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
এরপর এলো এসাইনমেন্ট দেখার পর্ব। এসাইনমেন্ট জমা দেবার ডেট দিয়েছিলাম ১৯ সেপ্টেঃ কিন্তু ৪ জন দিল সেই ডেটে আর বাকি সবাই ৬৬ জন দিল ৭ অক্টোবর। বলেছিলাম লেট সাবমিশনের জন্য ২ মার্ক কেটে নিব কিন্তু ফাইনাল খাতার অবস্থা দেখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলাম। কিন্তু ৩০-৩৫ জন আমি যে শিট দিয়েছিলাম তা ফটোকপি করে দিয়েছে। আবার অনেকে তার ক্লাসমেটের টা ফটোকপি করে দিয়েছে।
এমনকি টপ শিট সহ। পরে ফ্লুইড দিয়ে নাম ঠিক করেছে। ২ জন কোর্স টিচার হিসাবে আমার নাম না দিয়ে অন্য এক স্যারের নাম দিয়েছে যিনি গত বছর এই কোর্স টা নিয়েছিলেন। অর্থাৎ তারা কোর্স টিচারের নাম ও জানেনা না জানার ই কথা কারন অনেক ছাত্র আছে যারা সম্পুর্ন সেমিঃ একদিন ও ক্লাস করেনি। একজন ছাত্র তো টপ পেজে আমার নামের আগে Md. না দিয়ে Mrs দিছে।
যাহোক আমি ৩০-৩৫ টা খাতা আলাদা করলাম জিরো দেবার জন্য। পরে এক স্যার কে বললাম ঘটনাটা। তিনি যা বললেন তা হল জিরো তো দেয়াই যাবে না কমপক্ষে ৫-৬ দিতে হবে। শুনে আমার এত রাগ হল যে বলতে ইচ্ছা করছিল যে আপনাদের চাকরি আমি করবো না। তারপর অফিস বয় কে বললাম ৫ বসিয়ে দিতে।
সে আরো যোগ করলো স্যার যদি কেঊ ফেল করে তবে আপনি ঝামেলার মাঝে পড়বেন। আরো একটা ঘটনা। পরীক্ষার হলে এক ছাত্র প্রবেশ পত্রের পিছনে নকল করে নিয়ে আসছে। এক স্যার তাকে ধরে বহিস্কার তো দূরে থাক খাতা ৫/১০ মিনিটের জন্য ও কেড়ে নিল না। আর অন্য অনেকের কাছে ত টুকরা কাগজে নকল অহরহ পাওয়া গেল।
কিন্তু তাদের কাছ থেকে শুধু নকল ই নেয়া হয় কোনো শাস্তি দেয়া হয় না।
সবশেষে নিজেকে এই ভেবে সান্তনা দিলাম যে আমি তো অতিশয় ক্ষুদ্র একজন লেকচারার কিন্তু যারা দেশ বিদেশ থেকে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে এইভাবে তাদের চাকরি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিবেক যদি বাধা না দেয় তবে আমি এত ভেবে কি করবো? (শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা আরকি)!!! তবে কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্বঃ ভালো করছে তবে তাদের সংখ্যা অতি নগন্য। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।