আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দৈনিক কালের কন্ঠের এই খবরটা আমাগো দ্যাশের নেতা-নেতড়ীরা বুঝলেই হয়!!

দেশি উদ্যোগেই সম্ভব পদ্মা সেতু নির্মাণ ছয় বছরে পদ্মা সেতু নির্মাণের অনুমিত খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। অনেক দেনদরবার করে চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের পরও থমকে আছে এ সেতুর কাজ। কাজে দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে_সবচেয়ে বড় ঋণের প্রতিশ্রুতিদাতা বিশ্বব্যাংকের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টেন্ডার-প্রক্রিয়াই শুরু করা যাচ্ছে না। এ অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়ে কবে নাগাদ কাজ শুরু করা যাবে, তা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তবে নির্মাণ খাতের বিশেষজ্ঞদের মত, সেতু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও দক্ষতা দেশেই আছে।

অর্থায়নের জন্যও বিদেশে হাত পাতার দরকার নেই। সাহস করে উদ্যোগ নিলেই দেশি উপকরণ, দক্ষতা ও অর্থ দিয়ে এ ধরনের সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। এতে খরচ ও সময় বাঁচবে, অনিশ্চয়তাও কাটবে। চীনের উদাহরণ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশি অর্থ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীনে কম খরচে ও দ্রুতগতিতে তৈরি হচ্ছে একের পর এক সেতু। ছয় কিলোমিটারের কিছু বেশি দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার।

আর এর চেয়ে আট গুণ দীর্ঘ জিয়াওঝাউ বে ব্রিজ তৈরি করতে চীনের খরচ পড়েছে ২৩০ কোটি ডলার। সময় লেগেছে চার বছর। চীনের প্রধানমন্ত্রীও ছুটে যাননি, কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পৃথিবীর দীর্ঘতম এ সমুদ্র সেতুটিতে যান চলাচল শুরু হয় গত ৩০ জুন থেকে। একই দিন সমুদ্রের তলদেশে নির্মিত চীনের বৃহত্তম টানেলসহ আরো তিনটি সেতু খুলে দেওয়া হয়। এগুলোর দৈর্ঘ্য ১০২, ৭১ ও ৩০ মাইল।

এ চারটি সেতুসহ বিশ্বের ১৫টি বড় সেতুর ১১টিই চীনে। সবগুলোই তৈরি হয়েছে তাদের নিজেদের অর্থ, উপকরণ ও প্রযুক্তিতে। ফলে কম খরচে ও কম সময়ে এগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। প্রকৌশল ও নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, সেতু তৈরির মূল উপকরণের ৭০ শতাংশ দেশেই পাওয়া যায়। বিশ্বমানের সিমেন্ট ও রড দেশেই তৈরি হচ্ছে।

পরামর্শ দেওয়া ও নির্মাণকাজের তদারকি করার মতো দক্ষতা দেশের প্রকৌশলীদেরই রয়েছে। এর পরও কাজের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার জন্য কিছু উপকরণ ও পরামর্শসেবা প্রয়োজনে অন্যান্য দেশ থেকে নেওয়া যেতে পারে। বড় সেতুর প্রসঙ্গ এলেই বিদেশে ধরনা দেওয়া প্রতিটি সরকারের একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কারণ হিসেবে সাহসের অভাবকেই চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। 'তা ছাড়া আর কী কারণ থাকতে পারে? আমরা যে পদ্মার ওপর সেতু বানাতে পারি সেটা ভাবার সাহসই আমাদের নেই! সে জন্য সেতু প্রসঙ্গ এলেই দেশ-বিদেশে ছোটাছুটি শুরু করেন নীতিনির্ধারকরা', বললেন ডেভেলপমেন্ট কনস্ট্রাকশনস লিমিটেডের (ডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নুরুল আমিন।

২০০১ সালে তাঁর কম্পানিকে যখন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে দেশের প্রথম উড়াল সড়কের কাজ দেওয়া হয়েছিল, তখনো কথা উঠেছিল, অভিজ্ঞতাবিহীন একটি দেশি কম্পানিকে এত বড় কাজ দেওয়া ঠিক হলো কি না। কিন্তু কম খরচে মানসম্মত কাজ করে দক্ষতার স্বাক্ষর আর প্রমাণ রেখেছে দেশের এ নির্মাণপ্রতিষ্ঠান। তত্ত্বাবধানে ছিল সরকারি সংস্থা এলজিইডি। ১ দশমিক ৯ কিলোমিটারের এ উড়াল সড়ক নির্মাণে খরচ পড়েছিল ৮১ কোটি টাকা। নির্মাণ শেষ হয় ২০০৫ সালের মার্চে।

মাঝখানে মহাখালী উড়াল সড়কের কাজ শুরু হয়। সড়কটির দৈর্ঘ্য খিলগাঁও উড়াল সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ হলেও এতে খরচ পড়েছে ১১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এটি তৈরি করেছে একটি চীনা কম্পানি, অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। এটির নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, খিলগাঁও উড়াল সড়কের জন্য উপকরণের যে দাম ধরা হয়েছিল, একই উপকরণের দাম মহাখালী উড়াল সড়কের জন্য দেখানো হয়েছে চারগুণ বেশি। বিদেশি কম্পানির অংশগ্রহণে কিভাবে খরচ বাড়ে এর একটি ধারণা দিয়েছেন একজন তরুণ প্রকৌশলী, যিনি পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নের কাজে যুক্ত ছিলেন।

তিনি জানান, কনসালটিং ফার্মগুলো তাদের নিয়োজিত জনশক্তির ওপর থেকে কমিশন নেয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একজন বিদেশি প্রকৌশলীর বেতন দেখানো হলো ৩০ হাজার ডলার, কিন্তু ওই প্রকৌশলীর প্রকৃত বেতন ১০ হাজার ডলার। আবার একই যোগ্যতার একজন দেশি প্রকৌশলীকে দেওয়া হচ্ছে এক হাজার ডলার। ডিসিএলের কর্ণধার নুরুল আমিন বলেন, বড় সেতু নির্মাণের মতো পর্যাপ্ত কারিগরি দক্ষতা অবশ্যই দেশে আছে। দরকার হচ্ছে সরকারের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা।

এ ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। তিনি বলেন, এর পরও যদি দরকার পড়ে তবে দেশের বাইরে থেকে দক্ষ জনবল নিয়োগ করা যেতেই পারে। দেশি-বিদেশি যে কম্পানিই নির্মাণকাজ করুক, কিছু উপকরণ ও সেবা দেশের বাইরে থেকে আনতে হয়। নুরুল আমিনের মতে, সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কারিগরি জ্ঞানের অভাব থাকায় তাঁরা বড় প্রকল্পের ব্যাপারে অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এসব কাজে বড় বড় প্রকিউরমেন্ট লাগে, সে ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়।

এ ধরনের বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য ভারতে সরকার বেশ কিছু কম্পানি গঠন করে দিয়েছে। এতে ব্যক্তিখাতের কম্পানিগুলোর কাজের সুবিধা হয়। চীন সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক পলিটব্যুরোর সদস্যদের ৭৫ ভাগই প্রকৌশলী। ফলে অবকাঠামো উন্নয়নে তারা অনেক এগিয়ে। পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে ৬১৫ মিলিয়ন, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে ১৪০ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তিও স্বাক্ষর করেছে সরকার।

নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, নদী সেতু বা উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণের ৭০ ভাগই দেশি। ভালো মানের সিমেন্ট, স্টিলের রড বা পাত দেশেই তৈরি হচ্ছে। আরো লাগে বালু, ইট, পাথর। স্টিলের কিছু বড় বড় পাত অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করতে হয়। আর নদীতে পাইলিংয়ের কাজে সারা বিশ্বের মধ্যে সেরা প্রযুক্তি ও দক্ষতা রয়েছে নেদারল্যান্ডসের।

দেশি হোক আর বিদেশি হোক, সব কম্পানিকেই কিছু উপকরণ ও সেবা বাইরে থেকে আনতে হয়ই। দেশি দক্ষতা ব্যবহার করে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের কাজ করতে তেমন অসুবিধা হবে বলে মনে করেন না অবকাঠামো নির্মাণ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক। 'প্রয়োজন হলে আমরা নিজেরাই বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে পারি। ভারত ও চীন এ ধরনের বড় প্রকল্পের যথাযথ নকশা প্রণয়নে নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগায়', বলেন তিনি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের এই অধ্যাপক আরো বলেন, পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের নকশা নিজেরা করতে পারলে একটা গর্বের বিষয়ও থাকে।

নির্মাণকাজের দক্ষতাও দেশে রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, দেশে সড়ক ও জনপথ, সেতু বিভাগের মতো সরকারি সংস্থা থাকতেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ১০ ঠিকাদারের আটটিই চীনের। পাকিস্তানের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে, যার পেছনে খরচ হবে ৮৮ কোটি টাকা। চার লেন অর্থাৎ রাস্তা চওড়া করার মতো সাধারণ একটি কাজ তদারকির দক্ষতাও যদি সড়ক ও জনপথ বিভাগের না থাকে, তাহলে সত্যিই জাতির জন্য তা দুর্ভাগ্যজনক। বিদেশি অর্থায়নে বড় বড় প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শকের আবশ্যকতা হয়তো থাকতে পারে, তবে সরকারি অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্পেও বাইরের পরামর্শক নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বুয়েটের এ অধ্যাপক।

অবকাঠামো নির্মাণকাজে দেশি কম্পানির দক্ষতা যে বেড়েছে, এর প্রমাণ হিসেবে তিনি কুড়িল ইন্টারসেকশনের উদাহরণ দেন। সম্পূর্ণ দেশীয় পরিকল্পনা, নকশা আর পরামর্শক ব্যবহার করে চলছে ৩০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ। ২০১২ সালে এর কাজ শেষ হলে এয়ারপোর্ট রোডে যানজট বহুলাংশে কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বড় সেতু প্রকল্পে দেশি অর্থায়নের ক্ষেত্রেও তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ড. শামসুল হক বলেন, ভারত ব্যাংকের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন বন্ড ছেড়ে জনগণের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছে, তাতে তাদের বিদেশি অর্থের জন্য হাত পাততে হয় না।

ওই অর্থ দিয়ে তারা একের পর এক সেতু, গভীর সমুদ্রবন্দর, এয়ারপোর্ট নির্মাণ করছে। একই রকম ধারণা পোষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওসমান ইমাম। তিনি বলেন, অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের অনেক হাতিয়ার রয়েছে। ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড, জিরো কুপন বন্ড ইত্যাদি নানা নামে বন্ড সরকার সিকিউরাইটাইজ করতে পারে। নানা ধরনের বন্ড বিক্রি করে প্রাপ্ত তহবিল কাজে লাগানো যেতে পারে বড় বড় সেতু প্রকল্পে।

এমনকি তৈরি হয়ে যাওয়া যমুনা সেতুর জন্যও ইনকাম বন্ড ছাড়া যেতে পারে। তবে এসব বন্ড শুধু ছাড়লেই হবে না, জনগণ যাতে এগুলো কেনে সে জন্যও বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করতে হবে। বিদেশে এসব বন্ড জনপ্রিয় করার জন্য নানা রকম কর অবকাশ, আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই এসব ছাড় দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের সভাপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ বলেছেন, সরকার চাইলে পদ্মা সেতু নির্মাণের টাকা স্টক মার্কেট থেকেও তুলে নিতে পারে।

এর আগে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাদের বীমা তহবিলের বিপুল অঙ্কের টাকা তারা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। সরকারেরও রয়েছে অনেক ধরনের বন্ড ও বিল। সেকেন্ডারি মার্কেট চালু করে সেগুলো বিক্রির মাধ্যমেও জনগণের কাছ থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এতে নিজেদের প্রয়োজনে প্রকল্প হাতে নেওয়া এবং সময়মতো সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এতে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্তিও বেশি হবে, বৈদেশিক ঋণের বোঝাও ভারী হবে না।

কালের কন্ঠ থেকে সরাসরি পড়তে চাইলে এখানে গুতান ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.