আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাজী আরেফ হত্যার নীলনকশা করা হয়েছিল ঢাকায় ইনুর বাসায় : সংবাদ সম্মেলনে ঝন্টুর পরিবার

ডালিম হোসেন/11/10/11-দৈনিক আমার দেশ দীর্ঘ ১২ বছর পর জাসদ নেতা কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানালেন মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রাশিদুল ইসলাম ঝন্টুর পরিবার। রোববার চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ আনা হয় কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও ষড়যন্ত্রকারী জাসদের আরেক নেতা হাসানুল হক ইনু। তার বাসায় বসেই জোট সরকারের সাবেক ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী আহসানউল্লা মোল্লা পচার উপস্থিতিতে আরেফ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা নেয়া হয়। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চরমপন্থী নেতা চুয়াডাঙ্গার নুরুজ্জামান লাল্টু ও তার অনুসারীদের কাজে লাগানো হয়। তবে হাসানুল হক ইনু আসামিদের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত রাশিদুল ইসলাম ঝন্টুর বড় ভাই মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মণ্টু। লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, আমার ভাই ঝন্টু ১৯৮৫ সালে আনসার বাহিনীতে চাকরি করত। এ সময় সস্ত্রাসী সিরাজ আমাদের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেয়ার কারণে সিরাজ একই রাতে আমার ৩ মামাকে হত্যা করে। পরে প্রতিশোধ নিতে ঝন্টু চাকরি ছেড়ে সন্ত্রাসী নুরুজ্জামানের বাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে নাম লিখিয়ে বাহিনীতে জড়িয়ে পড়েন।

সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও জানান, আরেফ হত্যা মামলায় আমার ভাই রাশিদুলকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট । কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছেন। তিনি দাবি করেন, কারারুদ্ধ আমার ভাই আরেফ হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরের সব ঘটনা খুলে বলেছে আমাকে। তাই আজ আমার সংবাদ সন্মেলন । সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, হাসানুল হক ইনু পূর্বশত্রুতার কারণে কাজী আরেফ আহমেদ ও লোকমানকে হত্যার নীল নকশা করেন।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী আহসানউল্লা মোল্লা পচার মধ্যস্থতায় ঢাকায় হাসানুল হক ইনুর বাসায় বসে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেখানে কিভাবে আরেফকে হত্যা করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় হাসানুল হক ইনু জানায়, এক সপ্তাহ পরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর স্কুল মাঠে জনসভা হবে। সেখানে কাজী আরেফ বক্তব্য রাখবেন। ‘এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ওই জাসদ নেতার পক্ষ থেকে নুরুজ্জামান লাল্টুকে দেয়া হয় দুটি এসএমজি, গুলি ও ৫ লাখ টাকা।

কাজী আরেফ আহমেদের জনসভার ৩ দিন আগে অস্ত্র, গুলি ও ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসে মান্নান, হাবলু, রওশন ও বাচ্চু নামের ৪ জন চরমপন্থী। কাজী আরেফের জনসভাস্থলের পাশেই ঘটনার দিন নুরুজ্জামান লাল্টুর নির্দেশে আমার ভাই ঝন্টুসহ আরও কয়েকজন একটি তামাকের ক্ষেতে আত্মগোপন করে ছিল। মান্নান, রওশন ও বাচ্চু ওই তামাক ক্ষেতে গিয়ে ঝন্টুদের বলে ‘অ্যাটাক কর। ’ দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশ না মানলে জীবন যাবে। এ ভয়ে ঝন্টু ও তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন এগিয়ে যায় মঞ্চের দিকে।

সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মন্টু ভাইয়ের পক্ষে আত্মসমর্থন করে বলেন, এ সময় সময় ঝন্টু উপলব্ধি করে তার অস্ত্র জ্যাম হয়ে গেছে। ওই অবস্থায় ঝন্টু অস্ত্র উঁচিয়ে রেখে ছিল। মঞ্চের সামনে থাকা এলাচ মণ্ডল, রওশন, মিলিটারি, রফা, নজরুল ও জাহান বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। তখনও কাজী আরেফ আহমেদের গায়ে গুলি লাগেনি। তিনি মঞ্চের নিচে পড়ে গিয়েছিলেন।

ওখান থেকেই তিনি বলেছিলেন, তোমরা আমাদের মারছো কেন?’ এরপর খুব কাছ থেকেই কাজী আরেফকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে সবাই মোটরসাইকেলযোগে এলাকা ত্যাগ করে। সংবাদ সম্মেলনে ঝন্টুর বোন নারগিস আক্তারসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। কাজী আরেফসহ ৫ জাসদ নেতাকে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রাশিদুল ইসলাম ঝন্টুর পরিবারের পক্ষ থেকে রোববার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উত্থাপনের পরই চুয়াডাঙ্গায় পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এতদিন পর কেন হাসানুল হক ইনুর নাম? কেন রাশিদুল ইসলাম ঝন্টু পুলিশের কাছে সময় থাকতে মুখ খোলেনি, কেন সে রাজসাক্ষী হওয়ার সুযোগ নেয়নি? এসব প্রশ্নের সুষ্ঠু জবাব না মিললেও সংবাদ সম্মেলনের পর চুয়াডাঙ্গার রাজনীতিক দলের অফিসগুলোতে বিষয়টি প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা জাসদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম পিনুর সঙ্গে যোগাযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা কুষ্টিয়া কুর্শার সেই আলোচিত দাগী ঝন্টুর আত্মীয়-স্বজন। এই ঝন্টু চুয়াডাঙ্গার বহুল আলোচিত আশা খুন-গুম মামলার আসামি ছিল। সে রিমান্ডে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বিভ্রান্তিমূলক বহু কথাই বলেছে। সে আশার লাশ দেবে বলে আলমডাঙ্গার অনুপনগরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিয়ে হয়রানিও করিয়েছে। তারই বরাত দিয়ে তার ভাই ও বোন এতদিন পর কেন সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় নেতা হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করছেন তা আমার বোধগম্য নয়।

তবে এর আড়ালে যে ষড়যন্ত্র রয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কারণ এতদিন পর কেন এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে? হাসানুল হক ইনু বর্তমানে সংসদ সদস্য। তিনি যদি খুনের সঙ্গে জড়িতই থাকবেন, তাহলে জাসদ নেতা কাজী আরেফ হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িতরা তথা খুনিরা পুলিশের কাছে রিমান্ডে থাকাকালে কেন মুখ খোলেনি? কেন তারা আদালতে তা উপস্থাপন করেনি? হঠাত্ করে এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন কতটা আইনসম্মত, তা খতিয়ে দেখতে হবে। ইনুর বক্তব্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। গতকাল আমার দেশ-কে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ইনু বলেন, মামলার গ্রেফতার থেকে শুরু করে সাজা হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কোথাও এ ধরনের কথা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বলেননি।

হত্যার বিষয়ে আসামি প্রকাশ্য আদালতে একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছেন। তখন এই ধরনের কোনো কথাই শোনা যায়নি। হঠাত্ কোত্থেকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এই নতুন গল্প ফাদা হয়েছে তা রহস্যজনক। আমি এই রহস্যজনক গল্পের উদ্ভাবক ও উসকানিদাতা কে তা খুঁজে বের করতে সরকারের কাছে দাবি জানাই। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর স্কুলমাঠে দলীয় জনসভায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে কাজী আরেফ আহমেদসহ ৫ জাসদ নেতা খুন হন।

ওই খুনের মামলায় কুষ্টিয়ার একটি আদালত ২০০৪ সালে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে রাশিদুল ইসলাম ঝন্টুসহ ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং লাল্টুসহ ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। মামলাটি আসামি পক্ষ হাইকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করলে হাইকোর্ট ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে জহির নামে একজনকে খালাস এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১১ জনকেই বেকসুর খালাস দেন। রাশিদুল ইসলাম ঝন্টুসহ মত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড মওকুফের জন্য আপিল করলে তা খারিজ হয়ে যায়। তবে রাষ্টুপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে জহিরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ আবার বহাল রাখেন আদালত এবং পরবর্তী ৬ সপ্তাহের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়।

ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক রয়েছে। এ মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলো কুষ্টিয়া কারাগারে বন্দি রাশিদুল ইসলাম ঝন্টু, আনোয়ার হোসেন ও হাবিব। পলাতক রয়েছে- মান্নান মোল্লা, জাহান ও বাকের। বিচার চলাকালেই এলাচ, কচি ও নুরু মিলিটারি মারা যায়। রাশিদুল ইসলাম ঝন্টুর বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা গ্রামে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.