আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোগের ওষুধ, ওষুধের রোগ

দল মত ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে আমরা আত্মসুদ্ধির মাধ্যমে প্রো-একটিভ সৎ সহনশীল উদার সমমর্মী সৃজনশীল কর্মঠ সময়ানুবর্তী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রয়োগে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত হবো। দেশকে ভলোবাসবো। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশ জাতির অন্তর্ভূক্ত হবো। একটা গল্প শুনেছেন নিশ্চয়ই: এক লোক খুব ঘন ঘন ডাক্তারের কাছে যান বলে এক বন্ধু জানতে চাইলো সমস্যাটা কী। তো সে বলে যে, ‘আরে, ডাক্তারদের খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে না!’ বন্ধু জিজ্ঞাসা করলো, তাহলে ওষুধ কিনছিস কেন? ‘কারণ ফার্মেসির লোকজনের খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে তাই!’ তাহলে, বন্ধু আবার জানতে চাইলো, ওষুধ কিনে সে বাসায় আনছিস, কিন্তু ওষুধ খাচ্ছিস না কেন? হাসিমুখে ভদ্রলোক বললেন, ‘আরে, আমাকেও তো বাঁচতে হবে নাকি?’ গল্পটা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে।

অবশ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটা তো নতুন নয়। বহু আগ থেকেই এ বিষয়ে বলা হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ব্যাপারটা খুব বেশি বেড়ে গেছে। সারাজীবন আমরা পালন করে এসেছি ‘অমুক রোগ-তমুক রোগ নির্মূল’ দিবস। আর এ বছর ৭ এপ্রিল পালন করলাম ‘এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার প্রতিরোধ’ দিবস।

প্রশ্ন আসতেই পারে, এরকম একটা দিবস ঘটা করে পালন করার কী দরকার? রোগের সাথে সাথে এখন ওষুধও প্রতিরোধ করতে হবে কেন? কারণটা হলো রোগের যে ওষুধ, সেটাই যেন রোগের কারণ হতে না পারে সেজন্যে সবাইকে সচেতন করে তোলা। এর পেছনে আছে নানাবিধ কারণ: ওষুধের তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন আছে, তেমনি আছে ওষুধে-ওষুধে প্রতিক্রিয়া। আবার অতিরিক্ত ওষুধ সেবনে কার্যকারিতা কমে যাওয়াও একটা কারণ। আর এটা কেবল এন্টিবায়োটিকের জন্যই নয়, মোটামুটি সবরকম ওষুধের বেলায়ই সমানভাবে প্রযোজ্য। অনেকে হয়তো বলবেন যে বাংলাদেশে যেখানে মানুষের খাওয়া-পরার টাকা নেই সেখানে কি তারা বেশি ওষুধ খেতে পারে? বরং ওষুধ না খেয়ে মারা যাওয়াটা কি বেশি চিন্তার নয়? অবশ্যই তাই।

কিন্তু অনেক মানুষ যেমন একেবারেই চিকিৎসা পাচ্ছেনা, তেমনি অনেক মানুষ, বিশেষত সমাজের মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত অংশ, একটা রোগ থেকে বাঁচতে গিয়ে আরও বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে ডাক্তারদের ভূমিকা কতটুকু? হেলথ ওয়াচ নামের একটা সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে একজন ডাক্তার প্রত্যেক রোগীর পেছনে গড়ে সময় দেন মাত্র ৫৪ সেকেন্ড! এতটুকু সময়ের মধ্যে কি আসলেই সম্ভব সঠিকভাবে রোগ নিরূপন? আবার দোষের ভাগীদার কিন্তু আমরাও। যখন রোগে ভুগি তখন সাময়িক উপশমের জন্য দেদারসে ওষুধ গিলি। বেশিরভাগই এন্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ করি না। আবার কয়েকমাস পর একই উপসর্গ দেখা দিলে সহজে কিন্তু ডাক্তারের কাছে যাই না; আগের ওষুধটা নিজে নিজে খেয়ে ফেলি।

কখনও কখনও পরিচিতদের ‘পরামর্শে’ নিজেরাই ডাক্তার বনে যাই- ‘অমুক ভাই’ উপকার পেয়েছেন বলে আমরাও আশ্বস্ত হই এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ খাই। মূল সমস্যাটা হলো আমাদের অতিরিক্ত ওষুধ নির্ভরতা। ডা. জন রবিন্স এ অবস্থার জন্যে চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে রোগীদের ভ্রান্ত ধারণাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এরা মনে করে যে, সুস্বাস্থ্য বা নিরাময় ডাক্তার, ড্রাগস্টোর বা হাসপাতালে রয়েছে। ডাক্তার তাদেরকে ধন্বন্তরী ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা ইনজেকশন দিয়ে ভালো করে দেবেন।

এ আশায় রোগীরা ডাক্তারের পর ডাক্তার আর ওষুধের পর ওষুধ বদলায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের অবস্থা দিনের পর দিন একই থাকে। আসলে রোগ ও অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য প্রথম প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবন চেতনার পরিবর্তন। অপনাকে জানতে হবে যে, নিরাময়ের ক্ষমতা আপনার নিজের ভেতরেই আছে, ডাক্তার কেবল সহায়ক শক্তি মাত্র। যতক্ষণ নিজে বিশ্বাস করতে না পারছেন যে আপনিও সুস্থ হতে পারেন ততক্ষণ কোনো চিকিৎসাই আপনাকে সুস্থ করতে পারবেনা।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, শতকরা ৭৫ ভাগ রোগের কারণই হচ্ছে মনোদৈহিক। অর্থাৎ কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আপনার মানসিক প্রতিক্রিয়াই ৭৫ ভাগ রোগ সৃষ্টির কারণ। শতকরা ১৫ ভাগ রোগের কারণ হচ্ছে ইনফেকশন, ভাইরাস আক্রমণ, ভুল খাদ্য গ্রহণ ও ব্যায়াম না করা। শতকরা ১০ ভাগ রোগের কারণ হচ্ছে দৈহিক আঘাত, ওষুধ ও অপারেশনের প্রতিক্রিয়া। তাই শতকরা ৭৫ ভাগ রোগই শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সুস্থ জীবনদৃষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে নিরাময় হতে পারে।

অন্যান্য রোগ নিরাময়েও ওষুধ, সার্জারির পাশাপাশি সুস্থ জীবনদৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এখন থেকে কম ওষুধ খাবেন। অবশ্যই জটিল অসুখের ব্যাপারটা আলাদা। কিন্তু সামান্য অসুখে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে যাওয়াটা ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস বা জীবনাচার পরিবর্তন আপনাকে সুস্থ করে তুলতে পারে।

যেরকম শিথিলায়ন হলো সবচেয়ে কার্যকরী ব্যাথানাশক হিসেবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্বীকৃত। তাই হাতের কাছে এরকম নিরাপদ পদ্ধতি থাকতেও আপনি ছোটোখাটো অসুখে পেইনকিলার খাবেন কিনা সেটা ভাববার বিষয়। আর যত মেডিটেশন করবেন তত আপনার অন্তর্গত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, ভেতর থেকে আপনি সুস্থ থাকবেন। তখন দেখবেন, রোগের ওষুধ আর ওষুধের রোগ -দুটো থেকেই আপনি মুক্ত থাকছেন। শিথিলায়ন মেডিটেশনের ডাউনলোড লিংক: শিথিলায়ন সূত্র: কোয়ান্টাম মেথড ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.