জাতি হিসেবে নিজেদের নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি হতাশাবাদী নই, বরং আশাবাদীদের দলে। এরপরও মাঝে মাঝে অনেক কিছু ভাবি। ইদানীং আমার মধ্যে ভাবাভাবির বিষয়টা একটু বেশি-ই কাজ করে। বন্ধুর মুখে 'হুদাই' কথাটা শুনে কী যেন ভাবলাম।
অদ্ভুত সব জিনিস বেরিয়ে এলো আমার সেই ভাবনায়। আমরা প্রায় প্রতিদিন এমন অনেক কিছুই করি এবং বলি যার পেছনে কোনো যুক্তি নাই_ বলা চলে হুদাই।
'একটু শুনবেন' এই কথা বলার চেয়ে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি 'এঙ্কিউজ মি' বলতে। এটা শুদ্ধ করে বলতে না পারলেও আমরা 'একসোজ মি' বলেই গ্যাজাই অযথাই। 'দয়া করে' অথবা 'অনুগ্রহপূর্বক' এই বাংলা শব্দগুলো নির্দোষ হলেও আমরা এগুলোকে কথায় কথায় বনবাসে পাঠাই 'প্লিজ'-এর দোহাই দিয়ে।
'বাবা-মা' কিংবা 'আব্বু', 'আম্মু' এই ডাকগুলোর আবেদন যে কোনো বাঙালি পিতা-মাতার কাছেই চিরন্তন। কিন্তু এই চিরন্তন আবেদনকেও আমরা নিরন্তর অবহেলা করে অযথাই আমদানি করছি 'ড্যাড', 'মাম', 'পাপা'_ এ জাতীয় শব্দ। প্রেমিক-প্রেমিকাকে একসঙ্গে দেখলেই আমরা এদের 'কাপল' বলি। অথচ এদের কত সুন্দর নাম আছে কপোত-কপোতী, জোড়া শালিক, প্রেমিক জুটি ইত্যাদি। কিন্তু যত সুশ্রাব্য বাংলাই থাকুক না কেন আমরা ইংরেজি বলি-অযথাই! প্রিয়তমা, প্রেমময়ী, প্রেয়সী এরকম প্রেমময় শব্দ থাকা সত্ত্বে আমরা ডার্লিং ডার্লিং বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি।
এরও কি আসলে কোনো দরকার আছে। মেহমান, অতিথি কথাগুলোও বোধকরি সুন্দরই। কিন্তু এরপরও আমরা অযথাই এর পরিবর্তে 'গেস্ট' শব্দটি ইউজ করি।
কিন্তু কেন এই আচরণ? আসলে আমরা কম-বেশি সবাই কথায় কথায় ইংরেজি বলতে চাই। অযথা ইংরেজি বলার অবশ্য অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে।
যেমন এতে নিজের জ্ঞান জাহির করার সুযোগ বাড়ে। নিজেকে ইংরেজি জানা পাবলিক প্রমাণ করার জন্য অনেকে 'নাথিং ইস্টিম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড' জাতীয় ইংরেজিও বলে থাকে। খালি কলসি বেশি বাজার কথা ক'জন জানে? এইটা বিল গেটসের, মানে সফটওয়্যার আর কম্পিউটারের যুগ। এই যুর্গের যাবতীয় প্যাচালই ইংরেজিতে। সে জন্য ইংরেজি জানা পাবলিকরা সহজেই এই লাইনে ইন করতে পারেন।
আবার নেট যুগের আলগা পিরিতে তাই ইংরেজি এসেনশিয়াল বটে। দেশে কোনো ফরেনারের সঙ্গে দেখা হলে তার সঙ্গে টক করার জন্য ইংরেজি জানা দরকার। আবার ইংরেজি জানা ব্যক্তিরা বিদেশ গিয়েই এর সুফল ভোগ করতে পারবে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদেশিরা অন্যদের সামনে, আমরা ভাঙা ভাঙা ইংরেজি বলতে অভ্যস্ত তবু সেটাইবা ক'জন পারে। আফটার অল দিস ইজ এ্যা ফরেন ভাষা।
চাকরির বাজারে ইংরেজি জানারা সব সময়ই ফাস্ট চয়েস, অবশ্য এক্ষেত্রে ভালো ইংরেজি জানতে হয়। আর ইংরেজির মাল-মসলাওয়ালা পারসনরা বিয়ের বাজারেও পাকা ক্যান্ডিডেট! হালের সুন্দরীদের অনেকেই কমবেশি ইংরেজি বলায় অভ্যস্ত। কাজেই আপনার ইংরেজি বলার আরেকটা সুবিধা হলো ওই ধরনের সুন্দরীদের সঙ্গে আপনি ইংরেজি বলায় টেক্কা দিতে পারবেন। একজনের সঙ্গে আরেকজনের জ্ঞান না মিললে কি আর সেয়ানে সেয়ানে ফাইট জমে?
তবে হুদাই রোগে কেবল ইংরেজির প্রকোপই রয়েছে তা নয়। মেয়েদের মধ্যে অযথা ন্যাকামো করার একটা ভয়ঙ্কর অভ্যাস রয়েছে।
কোনো কারণ ছাড়াই উল্টাপাল্টা ভাব নিয়ে আল্টামর্ডান সাজার যে চেষ্টা তাকেই ন্যাকামো বলে। কেউ শুদ্ধ বলতে গিয়ে 'র'-এর স্থলে গড়নজাত ধ্বনি 'ঢ়' উচ্চারণ করে ফেলেন। যেমন- আবাঢ় কেন তাঢ় সাথে আমাঢ় দেখা হবে-। ' এই জাতীয় ন্যাকামো বাংলায় উচ্চারণ করতে দেখা যায়। কোনো কোনো মেয়ে 'ছিঃ ছিঃ' অথবা 'না বাবা না,' 'ও বাবা' এ জাতীয় শব্দগুলো যত্রতত্র ব্যবহার করে ন্যাকা সাজার চেষ্টা করে।
আবার ছেলেদের মধ্যে 'উফ শিট', 'শালা!' 'ওহ! নো' এ জাতীয় শব্দগুলোর অযথা প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। আবার ছেলে ও মেয়ে উভয়েই যুগের হাওয়ার নামে নতুন ভাষা ব্যবহার করে। যেমন-'জটিল মুড', 'আজাইরা প্যাচাল', 'এঙ্ট্রা খাতির', 'জোশ', 'জটিলস', 'মুরগা' ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাষানির্ভর ন্যাকামো ছাড়াও ছেলেমেয়েরা অঙ্গভঙ্গি অথবা ভাবের ন্যাকামিও করে থাকে। যার প্রায় সবটাই অযথা।
তবে এই হুদাই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। শুধু আয়নার সামনে তাকিয়ে নিজের কথা, নিজের শেকড়ের কথা, নিজের সংস্কৃতির কথা একটু ভাবতে হবে। এরপর যদি সম্ভব হয় বদলে ফেলতে হবে।
xpertronok@gmail.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।