আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে দলের ভেতর অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের পরও তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় না হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
দলের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আশরাফুল সাহেব তো অদৃশ্য বস্তু। তাঁকে আমরাই পাই না, আবার তৃণমূল!’
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দৃশ্যমান কোনো তত্পরতা ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকায় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা চুপ থাকলেও তিনি ফেরা মাত্রই তাঁরা আবার সোচ্চার হয়ে ওঠেন।
সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য শেখ হাসিনার কাছে আশরাফের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেন। এরপর তাঁর পদত্যাগের গুজব ওঠে।
আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য ও বেলারুশ সফর শেষে দেশে ফেরার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার উপস্থিতিতে সৈয়দ আশরাফের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, ‘দলীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এ পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি কী দায়িত্ব পালন করেছেন?’ সূত্রগুলো বলছে, উত্তর না দিয়ে সৈয়দ আশরাফ সে সময় চুপ করেছিলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, ‘তাহলে আমি পদত্যাগ করি?’
দলের আরেকটি সূত্র বলছে, সৈয়দ আশরাফ একজন প্রতিভাবান রাজনীতিক।
সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন এবং শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য সরব থেকেছেন। এ জন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী চান না সৈয়দ আশরাফ পদত্যাগ করুন। বরং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে তাঁকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফ নজরকাড়া ভূমিকা পালন করে নিরঙ্কুুশ বিজয় অর্জনে অবদান রাখেন। আওয়ামী লীগের ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
এরপর ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর দলের সর্বশেষ সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফ।
সৈয়দ আশরাফের পদত্যাগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘দলের ঐক্যে ফাটল ও বিভ্রান্তি ছড়াতে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে সৈয়দ আশরাফ কোনো পদত্যাগপত্র দেননি। ’ দেলের ভেতর ও বাইরের একটি অংশ কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে এ ধরনের প্রচারণা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তবে এসব বিষয়ে সৈয়দ আশরাফের বিস্তারিত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আজ জাতীয় সংসদে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পদত্যাগের বিষয়টি গুজব বলে তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।
আশরাফের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের যত অভিযোগ
সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের রয়েছে অজস্র অভিযোগ। তাঁরা বলেছেন, তাঁকে (আশরাফ) ফোন করলে তিনি ফোন ধরেন না। এমনকি দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনও আশরাফ ধরেন না বলেও প্রচার আছে। গণমাধ্যমের কর্মীদেরও তাঁর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্র হলেও তাঁর কাছ থেকে অধিকাংশ ইস্যুতে দলের বক্তব্য পাওয়া যায় না। দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিপদে-আপদে সাধারণ সম্পাদককে পাশে না পাওয়া, দলীয় ও সাংগঠনিক কাজে নিষ্ক্রিয় থাকা, এমনকি দিনের পর দিন তাঁর বাসায় গিয়ে তাঁর সাক্ষাত্ না পেয়ে ফিরে আসার বেদনা রয়েছে অনেক নেতা-কর্মীর মনে। তা ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হলেও তিনি অফিস করেন না বলেও অভিযোগ আছে। এ জন্য আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি অংশ আশরাফকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চায় না।
দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের অভিযোগ, দলীয় মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অনুপস্থিতিতে দলের হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছেন অন্যরা।
কখনো যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অথবা প্রচার সম্পাদক আবার কখনো দলের অবস্থান জানান কোনো সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। কার বক্তব্য দলের অবস্থান, এটা বুঝতেও সাধারণ জনগণের সমস্যা হয়।
এ বিষয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ২১ বেইলি রোডের বাসায় গিয়ে বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।