আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জোনাকির জোছনা

[হাজার জোনাকির নিভুপ্রায় নিরুত্তাপ আলোয় জোছনাস্নাত আমার ছেলেবেলা। প্রতিনিয়ত গতিশীল বর্তমানের সামনে স্থির হয়ে থাকা অতীতের বিমূর্ততা নাগরিক ঐশ্বর্য থেকে সামান্য হলেও জঞ্জাল মুছে দিবে। ] মেঘের ঘনঘটাতে সন্ধ্যার রং ঢাকা পড়েছে কিছুক্ষণ হল। ঢেউটিনের ঘরের চালে বৃষ্টির আওয়াজ সাথে রং চা আর চাল ভাজার আমেজ আমাদের আড্ডাতে এনেছে ছেলেবেলার বৃষ্টিবহুল দিনগুলোকে। ছোটবোনের ওড়নাতে চুটকি মাছ ধরার জন্যে আকাশের গুড়ুম গুরুমের অপেক্ষায় থাকতাম।

সারা গায়ে কাদা মেখে বিকেল বেলায় যখন বাড়ি ফিরতাম তখন হাতে থাকত ওড়নায় প্যাঁচানো হরেক রকমের ছোট ছোট মাছ –চুটকি, টাকি, পুঁটিসহ নিজের মত নাম দেওয়া আজগুবি যত্তসব মাছ। এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের মাছকে এক হাত বলে বলে বাবার কাছে, মায়ের কাছে রাতে গল্পের ঝুড়ি পুরাতাম। মা বাটিতে পানি নিয়ে সারারাত মাথার পাশে বসে থাকতেন আর গায়ের তাপমাত্রা কাপড়ের পট্টিতে বেঁধে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেন। বাবা, ধলিয়া খালে সারাদিন থাকার কী দরকার? তোর বাবা বাজার থেকে বড় বড় মাছ কিনে আনবে শুধু তোদের জন্যে। মা, বাজারে কি চুটকি মাছ পাওয়া যায়? দোকান বন্ধ করে এত রাতে ফিরেছেন বাবা।

মা চলে গেলেন বাবাকে খাবারের বন্দোবস্ত করে দিতে। আমি বোনটার সাথে আগামীদিনের কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠি। বাবা-মা দুজন এলে আমরা বোল পাল্টাই। মা, বাবা কি আমাদের মত বাচ্চা মানুষ যে ওনাকে খাবার পাতে তুলে দিতে হবে? আমাদের ছেলেমানুষি দেখে ওনারা হাসেন আর আমরাও হাসি ওনাদের বোকা বানিয়ে। আকাশের আওয়াজ শুনে এখন আর বড় বোনটাকে জড়িয়ে ধরি না।

মাঝি বাড়ির ধানক্ষেতে ছিপ ফেলে রাখা হয় না বহুদিন। কলাগাছ জোগাড় করে ভেলা তৈরি করা, খালের মাঝখানে পৌঁছানোর আগেই সেই ভেলা ভেঙ্গে পুনরায় কলাগাছ হয়ে গেলে ডুব সাতার দিয়ে কূলে ফিরে আসা হবে না আর কোনদিন। আমরা এখন বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় আছি। শহরের অদূরে নতুন বাড়িতে আজই আমাদের শিফট করতে হবে। এই চিরচেনা আবাস ছেড়ে চলে যাবার আগে আমি শেষবারের মত দেখে নিচ্ছি ভেজা চোখের সামনে ভেসে আসা উচ্ছল দিনগুলোকে- পিচ্ছিল কলতলায় ভাঙা বালতিতে গোসল করতে গিয়ে পা মচকানো, শ্যাওলাভরা খসে পড়পড় দেয়াল টপকানো, নার্সারি থেকে গাঁদাফুলের গাছ এনে লাগানো এবং বৃষ্টির মাঝেও সে গাছে পানি দেওয়া।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।