আমি গত বছর থেকে একটি ব্যাপারে বার বার আহবান জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি এ কারণেই যে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয় নিয়ে এখনো আমরা জোরালো কোন ভুমিকা রাখছি না। শুধু লেখালেখি নয় আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে ভুমিকা রাখতে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এ পর্যন্ত প্রতিবাদ সমাবেশ ছাড়া কেউ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বিষয়টা খুব মারাত্মক, শুরু থেকেই এর ভয়াবহ অপকারীতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বিস্তর বলেছেন, বিশাল বিশাল প্রবন্ধ লিখেছেন, বাংলাদেশের জনগণ প্রতিবাদ করেছেন এবং করেছেন বিশাল লং মার্চ।
এরপরেও টনক নড়েনি। সরকারীভাবে প্রতিবাদ জানানো হলে পরে যে ব্যাখা দেওয়া হয়েছে তা শুধু সত্যের আলাপই নয় তা বাংলাদেশের জনগণের জন্য চরম ধৃষ্টতা। এ ধরণের ধৃষ্টতা এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। নানাভাবে টালবাহানা করে বঞ্চিত করা হচ্ছে দেশ ও জাতিকে। তাদের চতুরীপূর্ণ ছেলেভোলানো গল্পের শেষ মহড়া দিয়ে গেলেন বর্তমান মহাশক্তিধর অজানা নামের সরকার প্রধান শ্রী প্রণব মুখার্জী মনি তার ধুতিয়ালী সফরে এসে বিষয়টি নিয়ে যেভাবে আশ্বস্ত করলেন জনগণ তথা প্রধান উপদেষ্টাকে তাতে উনাদের মানব না বলে মহা মানবই বলতে হবে।
বাংলাদেশের জনগণের জন্য তাদের দরদ উথলে পড়ছে, এতেই উদার তা দেখিয়ে গেলেন যে অদূর ভবিষ্যতে যখন জনগণ পানির জন্য হাহাকার করবে তখন উনারা পূন্যজল ছিটিয়ে দিবেন। এদের খুশীতে গদগদ হয়ে নেচে উঠবে দেশবাসী। তবে ব্যাপারটি হল সিলেট অঞ্চলের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জের অদূরে ’টিপাইমুখ’ নামের এলাকায় ইন্ডিয়া কর্তৃক বাঁধ নির্মাণ নিয়ে। বরাক নদীর উৎসস্থলে বাঁধ দিয়ে সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মহাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার ফলে নদীর গতিপথ সম্পূর্ণভাবে বদলে যাবে।
এর সুফল ভোগ করবে একমাত্র ইন্ডিয়া আর এর কুফলের ভাগীদার হবে বৃহত্তর সিলেট বিভাগসহ গোটা দেশবাসী। বাঁধ নির্মাণের প্রথম দিন থেকেই অবর্ণীয় কষ্টের সম্মুখীন হবে সিলেটবাসী, ধীরে ধীরে চারিদিকে পানি শূণ্যতার সৃষ্টি হবে সর্বত্র এবং এক পর্যায়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত আধ্যাত্মিক পূণ্যভুমি বলে খ্যাত সিলেট পরিণত হবে মরুভুমিতে। ক্ষেত খামার থেকে শুরু করে জন-জীবনে নেমে আসবে এক চরম বির্যয়। এমনিতেই ফারাক্কার ধকল সামলানো যাচ্ছে না। ফারাক্কা বাঁধের কারণে নদীর নব্যতা হারিয়েছে, পানির স্বাভাবিক স্রোত রহিত হওয়ার আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করছে জনগণ পানির স্রোত অব্যাহত থাকলে হয়তো বাংলাদেশের জনগণের জীবনমান আরো উন্নত হয়।
কিন্তু ফাঁরাক্কা বাঁধের ফলে সবকিছুর গতিপথ এমনিতেই বদলে ফেলা হয়েছে পর্বেই। যা কিছু বাকি ছিল এখন টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করে ষোলকলা পূর্ণ করা হচ্ছে। আধুনিকতা ও বিজ্ঞানের কল্যাণে আারো বহুপন্থী বিদ্যমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য টেপাইমুখেই কেন শুধু বাঁধ নির্মাণ করা হবে? এ বাঁধ নির্মাণ করলে একটি দেশ ও জাতির ভয়াবহ ক্ষতি হবে জানার পরেও কেন বাঁধ নির্মাণে ইন্ডিয়া সরকার এত উৎসাহ দেখাচ্ছেন!! ব্যাপারটা একটু চিন্তা করলেই দেখা যায়, তবে যাই হোক না কেন তাদের এই উদ্যেগ যে শুভ নয় তা সহজেই অনুমেয়। তাদেরকে তাদের এই দুরভিসন্ধি মূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা দিতে হবে। রুখে দিতে হবে তাদের অসৎ উদ্দেশ্যেকে।
সে জন্য শুধু প্রতিবাদেই চলবে না, করতে হবে প্রতিরোধ। আমরা বাংলাদেশীরা ছড়িয়ে আছি বিশ্বব্যাপী। এবং কাজটা শুধু দেশবাসী কিংবা সরকারের একার নয়। তাই সবাই মিলেই সর্বত্র প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ইন্ডিয়া সরকারের এই অমানবিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমাদের কন্ঠ সোচ্চার করতে হবে আন্তজার্তিক ফোরামে।
জানাতে হবে তাদের এই ান্যায় আচরণের কথা বিশ্বের শান্তিকামী জনতাকে। বিশেষ করে বলতে হবে বিশ্বব্যংক ও দাতা সংস্থাগুলোকে। আমরা যারা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছি, আমাদের জন্য এসব কাজ মোটেই কঠিন নয়। বিলেতে রয়েছে প্রতিটি ইউনিয়নভিত্তিক সংগঠন। আমরা যদি স্ব স্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থানীয় কাউন্সিলার থেকে শুরু করে এমপি পর্যন্ত আমাদের আওয়াজ পৌঁছে দেই, আমাদের বক্তব্য যদি ইংলিশ পত্রিকা ও অন্যান্য গণমাধ্যেমগুলোতে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারি তাহলে কম কিসে? সংখ্যায় দশ পনের জন করে যদি ইন্ডিয়া হাইকমিশনের সামনে প্রতিদিন অবস্থান নেই এবং প্রতিবাদ জানাই তাহলে আন্তজার্তিক সংবাদ মাধ্যমে অবশ্যই ব্যাপারটি স্থান পাবে।
এভাবে একযোগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য আন্দোলন শুরু করলে ইন্ডিয়া কেন গোটা মহাভারতকেই ধরাশায়ী করতে সময় লাগবে না। এভাবে এগুলে অবশ্যই তাদের উপর আন্তজার্তিক চাপ আসবে এবং আমরা আমাদের নায্য অধিকার থেকে আগামীতে বঞ্চিত হব না। দেশকে স্বাধীন করতে যদি প্রবাস থেকে আন্দোলন করে আন্তজার্তিক মহলকে চাপ সৃষ্টি করা যায়, তাহলে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে কেন আমরা প্রবাসে এখন আন্দোলন করতে পারবো না। আমরা দেশ থেকে দূরে অবস্থান করছি ঠিকই কিন্তু এক মুহুর্তের জন্য দেশপ্রেম হারাইনি। অতীতে যে কোর দুর্যোগে আমরা ঝাপিয়ে পড়েছি, দেশবাসীর সুখ-দুঃখে অংশ নিয়েছি।
তা হলে কেন এই মহা দুর্যোগে নীরব হয়ে বসে আছি?
আমাদের ইন্ডিয়া কর্তৃক টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে এক্ষুণি তৎপর হতে হবে এবং জোরালো ভুমিকা নিতে হবে। বিনীত অনুরোধ করব সকল কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, কলম সৈনিক, সজেতন দেশবাসীদের আসুন আমরা আমাদের দেশের জন্য সব মতপথ পরিহার করে একযোগে অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। আশা করবো এ ব্যাপারে সবাই সুষ্ঠ ও সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যদি আমরা তা না করি তা হলে শুধু দেশ ও জাতি নয় আমাদের অস্তিত্ব নিয়েই সম্মুখীন হতে হবে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের।
টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদের আন্দোলনে যখন যেখানে যারাই উদ্যেগ নিবেন তাদের প্রতি আমি অগ্রিম আমাকে ডাক দিলে সবধরণের সহযোগিতা আশ্বাস দিচ্ছি।
কভেন্ট্রি
১৫/০৩/২০০৭
পুরনো লিখা থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।