অবশেষে ক্লাসে ফিরে গেল শিক্ষার্থীরা, দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর। সংবাদপত্রের এমন শিরোনামে কিছুটা স্বস্তি পেলাম মনে। যদিও এমন আশ্বাস এবারই প্রথম নয়, তবে এবার দৃশ্যপট ভিন্ন মনে হচ্ছে। কারন এবার এই আশ্বাসটা জগন্নাতের শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে জানতে পারছে গোটা দেশবাসী। এবারতো জগন্নাথ রীতিমতো সংবাদ শিরোনাম।
তারা বেশ গাড়ি ভাঙচুর করেছে, জনগনকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পেরেছে। তাই এবার তারা সংবাদের প্রধান শিরোনাম হবার যোগ্যতা অর্জন করতে পারলো। আর সেই সাথে সংবাদের ফলোআপ হিসেব তাদেরকে শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসটাও জানতে পারলো দেশবাসী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২৭(৪) ধারা যাতে লেখা আছে- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের (২০০৫) ২৭(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌনঃপুনিক ব্যয় যোগানে সরকার কর্তৃক প্রদেয় অর্থ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাইবে এবং পঞ্চম বৎসর হইতে উক্ত ব্যয়ের শতভাগ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ও উৎস হইতে বহন করিতে হইবে। ’ এই আইনটি বাতিল হবার একটা আশ্বাস অতিপূর্বে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু গত ২৫ সেপ্টেম্বর যখন সংবাদ পত্রের মাধ্যমে তারা জানতে পারলো যে আইনটি বাতিল হচ্ছে না তখন বিক্ষোভে ফেতে পড়ে তারা। আর সেই বিক্ষোভের খবর সবাই মোটামুটি জানেন। ছাত্ররা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়, তারা একজন সাংসদকে অবরূদ্ধ করে, পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে, তারাও ব্যাপক ভাঙচুর করে। এরপর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। আমি নিজেও ব্লগে এই সংক্রান্ত কয়েকটি পোস্ট করেছি।
নৈতিকভাবে এই আন্দোলনের সপক্ষে ছিলেন অনেকে আবার অনেকেই বলেছেন গাড়ি ভাঙচুর কেন? এটা কি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কোনো পদ্ধতি? এমনকি অনেক সংবাদপত্রেও ফলাও করে ছাত্রদের দাবীর থেকে তাদের ভাঙচুরের খবরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেশী। এই কর্মকান্ডের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তারা। তাদেরকে আমার এই লেখাটি উতসর্গ করছি। আমি আগেই বলে রাখি, আমি গাড়ি ভাঙচুর বা জানমালের কোনো ক্ষতি সাধনের তীব্র বিরোধী। এবং জগন্নাথের ছাত্রদের এই কর্মকান্ডের জন্য আমি লজ্জিত।
এবার আসুন মুদ্রার অপর পিঠের কিছু দৃশ্য দেখি।
ছাত্ররা ব্যাপক ভাঙচুর করেছে এটা সত্য। এ আমি খুব দৃঢ় ভাবে বলছি প্রথম পর্যায়ে তাদের আন্দোলন খুবই শান্তিপূর্ণ ছিল। দাবী আদায়ে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ানো কোনো নতুন বা আইন বিরুদ্ধ কোনো কর্মকান্ড নয়। তারপর তাদের বারবার ক্যাম্পাসে ফিরে শান্তিপূর্ন আন্দোলনে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়।
এবং একপর্যায়ে চলে পুলিশের লাঠিচার্জ ও ছাত্র(!)লীগের বর্বর হামলা।
ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ব্যাপারে কিছু কথা না বললেই নয়। বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়িত হওয়ার প্রথম থেকেই এই আইনটি ছিল এবং মোটামুটি বিশ্ববিদ্যালয় জন্মের পর থেকেই এই কালো আইনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা আন্দলন করে আসছে। বিগত ৫ বছরে অনেকবার ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা,ক্যাম্পাসের ভেতর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছে, মিছিল করেছে, মিটিঙ করেছে এমনকি সেইখানেও পুলিশের লাঠি ও টিয়ার শেল খেয়েছে। ফলাফল কিন্তু শুন্য।
এই আন্দোলনের খবর পৌছায়নি সরকারের উচ্চমহল পর্যন্ত। যারা শুনেছে তারাও মনে করেছে, পুরান ঢাকার ওই কোণের মধ্যে কোন আন্দলন হয়েছে না কি হয়েছে তাতে নজর না দিলেও চলবে। এমনকি সংবাদপত্রের নজড় কাড়তেও ব্যার্থ হয়েছে এসব আন্দোলন। কারন যে আন্দোলনে গাড়ি ভাঙ্গা হয়না, রাস্তাঘাট অবরোধ করা হয়না তা আবার খবর হয় কেমনে। ছাত্রদের শান্তিপূর্ন আন্দোলনের এই মর্যাদা দিয়ে আসছে সরকার।
যদিও মাঝে মধ্যে দাবী পূরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তবে তা যে মিথ্যা সেটা নতুন করে বলার কিছুই নেই। আর এসব কারনই তিলে তিলে জমে বিস্ফোরণ ঘটায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর। ফলাফল, একদল হিংস্র ছাত্রদের দেখতে পেল দেশবাসী। দেশের সুধী সমাজ তীব্র নিন্দা জানালেন এই বর্বর আচরনের। নিন্দা জানানো হল সরকারের তরফ থেকেও।
তবে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ছাত্রদের দাবী মেনে নেওয়ার ঘোষনা দেওয়া হোলো আরও একবার। তবে এবারের ঘোষনাটা অনেক বিশ্বাসযোগ্য মনে হোলো।
৫ বছর শান্তিপূর্ন আন্দোলনের পর এমন হিংস্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার দাবী মেনে নিয়ে কি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো? এটা কি প্রমান করে না যে গাড়ি ভাংচুর ছাড়া দাবী আদায় হয় না। এতে কি শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা পেল না যে- কিছু চাইতে হলে ক্যাম্পাসে নয় বরং রাজপথ দখল কর। সরকার কি এদেশের শিক্ষার্থীদের একটি ডাকাত জাতিতে পরিণত করতে চায় যেখানে দাবী চেয়ে নয় বরং ছিনিয়ে নিতে হয়।
গত ২৫ সেপ্টেম্বরের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা যেমন গাড়ি ভাঙচুর সহ অন্যান্য অছাত্রসুলভ কর্মকান্ডের দায় এড়াতে পারবে না তেমনি ছাত্রদের পৃষ্ঠদেশ দেয়ালে ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারও এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।