হরতাল-অবরোধসহ সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা থমকে গেছে। ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী।
পরীক্ষার এই মৌসুমে বারবার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করেও দিশা পাচ্ছে না শিক্ষা প্রশাসন। ছুটির দিনেও নিতে হচ্ছে পরীক্ষা।
রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর মা আসমা সুলতানা গতকাল শুক্রবার রাতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।
পরীক্ষার দিনে স্কুলে গিয়ে জানতে পারছি, পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর অবসান চাই। ’
শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজেই শেষ হবে না। তাই পরীক্ষা বিঘ্ন হয় এমন কর্মসূচি আর না দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে তিন কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে।
এর বাইরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আরও প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী। এখন চলছে পরীক্ষার মৌসুম। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষাও চলছে। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা শেষ হচ্ছে না। একই সঙ্গে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নিয়মিত ক্লাস।
২০ নভেম্বর থেকে শুরু হয় দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। আগের সময়সূচি অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিরোধী দলের অবরোধের কারণে দুই দিনের পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। এর মধ্যে গত বুধবারের পরীক্ষা গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা আজ শনিবার নির্ধারণ করা হলেও নতুন করে ৭২ ঘণ্টা অবরোধের কারণে তা আগামী শুক্রবার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে ৪ নভেম্বর শুরু হয়ে সদ্য শেষ হওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটের (জেএসসি) ১১টি বিষয়ের পরীক্ষার মধ্যে ছয়টিই পেছাতে হয়েছে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চলমান বার্ষিক পরীক্ষাও পিছিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক বিদ্যালয় আগে থেকে কোনো ঘোষণা না দেওয়ায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা পড়েছেন আরেক বিপাকে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে বলায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ঠিক সময়ে পরীক্ষা শেষ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতেই সেশনজট বিদ্যমান। এর মধ্যে বারবার পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন আরও অভিশাপের মধ্যে পড়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন পরীক্ষা হরতাল-অবরোধে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল অনুষ্ঠেয় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে রাজশাহী ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও পেছানো হয়। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ‘ফল সেমিস্টারের’ বিভিন্ন বিভাগের মিডটার্ম পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। এই পরীক্ষার সময় পরে জানানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে এই সংঘাত স্বল্পমেয়াদি হবে বলে মনে হয় না। তাই সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে অন্তত পরীক্ষাগুলো এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখার জন্য। ’
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘মনে হচ্ছে, বিরোধী দল নতুন প্রজন্মের প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে। তাদের প্রতি আবারও অনুরোধ, আপনারা শিক্ষার্থীদের প্রতি দয়াশীল হয়ে পরীক্ষার সময়ে এ ধরনের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকুন। ’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।