আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাগলের কতায় কাউরে রাগ করতে হোনছেন

আমি সুমাইয়া বরকতউল্লাহ। ছাত্রী। লেখালেখি করা আমার ভীষণ পছন্দ। আমি ছড়া, গল্প লিখি। পত্রিকায় নিয়মিত লিখি।

লেখালেখি করে বেশ কয়েকটা পুরস্কারও পেয়েছি। শিশু অধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ (প্রিণ্ট মিডিয়া) পর পর ৩ বার জাতিসংঘ-ইউন একটা পাগল ছুটে চলেছে। পাগলের পিছে বিরাট এক লাইন। ছেলে-বুড়ো সবাই হা: হা: হি: হি: কিৎ কিৎ কোঁৎ কোঁৎ করে হাসছে। মাঝেমধ্যে ঢিল ছুড়ছে।

পাগলটা কোনো ঢিল ছুড়ছে না, হোমানে বকছে। তার আর কোনো অস্ত্র নাই; বকাটাই যেন তার অস্ত্র। লোকটা কতক্ষণ গালাগালি করে, কতক্ষণ চুপ করে থাকে আবার কতক্ষণ বক্তৃতা দেয়। তো লোকগুলো এতো হাসছে কেন? একজন বলল, হাসবে না তো কি! হোনেন না পাগলায় কী যে কয় আর ক্যামনে যে গাইল্লায়। হের গালি দারুন টেষ্ট লাগে।

এর লাইগ্যা আমরা খালি চাক্কাই। চাক্কা মারলে হেয় গাইল মারে আর আমরা মজা পাইয়া খালি হাসি। বিরাট আনন্দ। আমি বললাম, তোমরা পাগলকে ঢিলাও কেনো? বিরক্ত হয়ে তো সে আরো বেশি করে বকা দিবে। আরে আপনি তো কিছুই বুঝেন না।

এমনি কি আর ক্ষেপায় পাগলরে। ক্ষেইপ্যা গিয়া হোমানে বকে। আর এই বকা হুইন্যা দেহেন না হগলে ক্যামনে আনন্দ ফূ’র্তি করতাছে। হে: হে:: আমি বললাম, তুমি এই জিংলাটা হাতে নিয়েছ কেন? আফনে এহানে খারইন। আমি এই কাঁচা জিংলাডা দিয়া পাগলরে ফাঁতফুত কয়ডা বাড়ি দিমু, পরে দেইক্কেন কি বহা যে বহে।

এ কথা বলে সে দৌড়ে গিয়ে সত্যি সত্যি পাগলকে কয়টা বাড়ি মারল। পাগলটা অশ্লীল কথা আর গালি দিতে দিতে ছেলেটার পিছনে ছুটল। তার পেছনে ছুটে চলেছে আরো অনেকে। তারা পাগলের বকা শুনে আর হাসে। হাসতে হাসতে কয়জন একেবারে ধণুকের মতো বাঁকা হয়ে যায়।

তারপরে দেখি আবার কাশেও। আমি বললাম, শুধু বকা খাওয়ার আনন্দের জন্য পাগলকে এভাবে বিরক্ত করা ঠিক না। তোমরা ওকে খেতে দাও। দেখবা আর বকছে না। এআল্লা ইত্তা কি কইন।

হেয় বালা-মন্দ বুঝে না। হের লাইগ্যা সবাই হোমান। হগ্গ¹লরে বহে। এতো বকা খাও শরম করে না তোমাদের? হি: হি: হি। পাগলের বকায় কাউরে রাগ করতে হোনছেন? যেয় রাগ করবে হেরে না মাইনষে পাগল কইবে।

গালি না দিলে হেয় কিয়ের পাগল? দেহেন্না, পাগলে বকা মারলে সবাই ক্যামনে হাইস্যা-কাইশ্যা ভাইস্যা যায়। ছেলেটা একটা পাউরুটি আর এক গ্লাস পানি নিয়ে পাগলটার সামনে নিয়ে ধরল। শ’খানেক বকা দিয়ে রুটি আর পানি হাতে নিল। তারপর বক বক করে শুরু করল বকা। বললাম, এত বকা বকে তারপরেও তোমরা পাগলকে ক্ষেপাও কেন? এসব বকা শুনে শিশুরা খারাপ কিছু শিখবে না? আরে কি কইন ইত্তা।

পাগলের কতায় আবার পোলাপাইন আর বুইড়া আছেনি। পাগলের কি আল-গিরস্থি আছে যে হেয় কাম-কাইজ করবে? হের কামই ত বকাবকি করা। বকা না দিলে কিয়ের পাগল। যেয় যতো বকবে, হেয় তত বড় পাগল। আর এই বকা হুইন্না খুশি অইয়া মাইনষে পাগলরে খাওয়ায়।

কতায় আছে না, পাগলে কি-না কয় আর ছাগলে কি-না খায়। পাগলের কতায় কাউরে রাগ করতে হুনছেন? পাগলের কতায় কেউ রাগও করে না-গোস্যাও করে না। পাগলের কতায় যদি মাইনষে খালি একটুও রাগ করতো তয় উফায় আছিলনি আর? দেশে পাগল থাকত না একটাও। বাইড়াইয়া ফোতাইয়া ফালাইত। হেমাতপুরের পাগলা গরেদের আর দরহার আছিল না।

তাইলে কি পাগলেরা এভাবে বকাবকি করবে আর বকা খাওয়ার জন্য তোমরা ঢিল ছুড়বে, ত্যাক্ত করে যাবে? ত, কি? হোনেন, এই পাগলেরা কিন্তুক একটা দরকারী জিনিস বাছাইয়া রাকছে, হেইডা জানেননি? পাগলেরা আবার কি বাঁচিয়ে রাখল. আশ্চর্য? হোনেন, দিনে দিনে মানুষ লিখাপড়া করে ছভ্য অইয়া যাইতাছেগা। আগের মতো এহন আর বকাঝকা হুনি না। এহন কাউরে বকা মারলে টাশকি মাইরা থাহে। এইডা বহা দিলাম না বালা কতা কইলাম, বুঝবার পারে না। ত পাগলেরা ধরেন এই বকাগুলান কোনোমতে জিয়াইয়া রাকছে।

হেরা নানা জায়গায় ঘুরে। নানান জাতের বকা ওরা জানে। এই দিক চিন্তা করলে দেকবেন, পাগলেরা যে বকা-বাণিজ্য করে এইডারে হাইরা খারাপ কইয়া ফালাইয়া দিতে পারবেন না। বললাম, বকা টিকিয়ে রাখার চেয়ে পাগলকে চিকিৎসা করে মানুষ করা বেশি দরকার না? দরহার, তয় একবার যেয় পাগল অয়, হেয় আর সহজে বালা অয় গো বইন! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।