ভাবনার কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। কোন শুরু নেই কোনো শেষ নেই। ভাবনা ঠিকানাহীন, ভাবনা লক্ষ্যহীন। ভাবনা চলছে.। .।
ভাবনা চলবে.। .। ইচ্ছে মতন। নিজের মতন। গত ২৫/৯/২০১১ তারিখে হাইকোর্টের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবস্থান নেয়ার ঘটনায় এখন প্রায় সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২৭/৪ ধারার সাথে পরিচিত।
কি আছে এই ২৭/৪ ধারায়? সোজা বাংলায় বললে এতে বলা আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৫ বছরের মধ্যে হয়ে যাবে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ৫ বছর শেষ হয়েছে। এখন এর সমস্ত খরচ এর নিজেকেই বহন করতে হবে। নিজেকে বলতে এর শিক্ষার্থীদেরকে। এর মানে হলো শিক্ষার্থীদের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফির সমপরিমান অর্থ পরিশোধ করতে হবে, অথচ সবাইকে বলতে পারবে সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
কি অসাধারণ ব্যবস্থা। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ।
এই আইনের ফলে, এখন একজন ছাত্রকে কি পরিমান অর্থ পরিশোধ করতে হবে? খুব বেশী না, প্রতি সেমিস্টারে ২০-২২ হাজার। অন্যান্য ফি মিলিয়ে হয়তোবা ২৫ হাজার। আগে কত টাকা পরিশোধ করতে হত? প্রতি সেমিস্টারে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার।
প্রত্যেক ছাত্রকে প্রতি সেমিস্টারে কি পরিমানে অতিরিক্ত টাকা এখন দিতে হবে? খুব বেশী না। মাত্র ২১-২২ হাজার।
শিক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালইয়ের বরাদ্দের টাকা বেচে যাওয়ায় এখন নিশ্চয়ই দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইবে। জোয়ারে ভেসে যাবে সারা দেশ।
আগে শুধুমাত্র বর্ষাকালে কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় কিছু কিছু এলাকায় নৌকা চলতো, এখন হয়তো সারা বছরই দেশের মানুষকে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতে হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত কোন পরিবারের ছেলে মেয়েরা পড়ে? উত্তরটা সবারই জানা। নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানেরা। এদের বেশির ভাগই আসে গ্রাম থেকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালইয়ে পড়ুয়া এইসব শিক্ষার্থীরা কোথায় থাকে? উত্তর মেসে।
কারন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন হল নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে ১১ টি হল আছে, তার সবগুলো বেদখল। সবচেয়ে বিচিত্র তথ্য হলো, এই দখলদারদের মধ্যে পুলিশও রয়েছে। কি বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র পাবলিক ভার্সিটি, কিন্তু আমাদের কাছে এসবই সচিত্র। প্রতিদিন দেখি যে!!!
এইসব ছেলে-মেয়েদের বেশির ভাগই টিউশনি করিয়ে তাদের পড়াশোনার ব্যায়ভার বহন করে।
কারন তাদের পরিবারের পর্যাপ্ত আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাই বলে কি স্বপ্ন থেমে থাকে? সারাদিন ভার্সিটিতে ক্লাস করে, রাত ৯-১০ টা পর্যন্ত টিউশনি। শুধুমাত্র বুকে সযত্নে লালিত স্বপ্ন পূরণ করার জন্য-“ পড়াশোনা শেষ করার পর একটা চাকরী জুটবে, তাতে বাবা-মার দু;খ ঘুচবে। “ এই ছোট্ট স্বপ্নটি পূরণ করার জন্য শত কষ্ট হাসিমুখে বরন করে নেয়া। এখন প্রতি সেমিস্টারে যদি ২১-২২ হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি দিতে হয়, তাহলে এরা কি করবে? এরা কি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে? এদের স্বপ্নের কি হবে? জীবনের কত ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এত দূর আসা, সব কি ব্যর্থ হয়ে যাবে? তরুন চোখে আকা কত শত রঙ্গিন স্বপ্ন, সব কি ধুসর হয়ে যাবে? উত্তরটা আমার অজানা।
শুনেছি মন্ত্রী-এমপিদের ছেলে মেয়েরা নাকি এদেশে পড়াশোনা করে না। তারা দেশের বাইরে পড়াশোনা করে সেখানেই স্থায়ী হয়। তাই তাদের বাবা-মায়েরা যে আমাদের মতো সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীদের কথা ভাববেন না এটা আর এমন কি? তাই বলে কি তারা আমাদের সাথে এভাবে প্রতারণা করবেন? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ হাজার শিক্ষার্থীর একজন ও কি ভর্তি হওয়ার সময় জানত, যে এটি অচিরেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়ে যাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়? এতে পড়তে খরচ হবে লাখ-লাখ টাকা? এটা কি প্রতারণা নয়? এখন, এসকল শিক্ষার্থীর কি হবে? তাদের অধিকাংশের পড়াশোনা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এর দায়ভার কে নেবে? এর জন্য কি রাষ্ট দায়ী নয়?
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আমরা জবাব চাই।
***** সবশেষে একটি অনুরোধ, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, দয়া করে ২৭/৪ ধারা বাতিল করুন। এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ হাজার শিক্ষার্থীর জীবনের প্রশ্ন, অস্তিত্বের প্রশ্ন।
আর তা যদি না পারেন, এই ২১ হাজার শিক্ষার্থী সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুড়িয়ে দিন। স্বপ্নের মৃত্যু কি জীবনের মৃত্যু ও নয় ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।