নাজমুল ইসলাম মকবুল
কাচা প্রেমের তেতুল চাটনী
নাজমুল ইসলাম মকবুল
মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে আমাদের এ সোনার দেশে কোন কিছুরই অভাব নেই। মাটিতে বীজ পড়ে অটো সিস্টেমে গাছের জন্ম হয়। এরপর গাছ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পত্র পল্লবে হয় আচ্ছাদিত। ফুলে ফলে হয় সুশোভিত।
কি উর্বর মাটি। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এমন মাটি আছে। বৃষ্টির পানিতে নদী নালা খাল বিল ভরে যায়। সেই পানিতে আপনা আপনি জন্ম হয় স্বুস্বাদু মাছের। মাটির তলদেশে মুল্যবান গ্যাস তেলসহ খনিজ সম্পদে ভরপুর।
দেশে জনসম্পদও মাশাআল্লাহ প্রচুর। প্রচুর জনশক্তি, মুল্যবান অর্থকরী ফসল ও প্রাকৃতিক সম্পদে ঠাসা এমন স্বপ্নপুরীতে শুধু নাই নাই খাই খাই খাবলা খাবলী খামচা খামচি টানা হেচড়া ধর মার কাট অবস্থা দেখলে গা শিউরে না উঠে পারেনা। অনুসন্ধানে দেখা যায় আমাদের দেশের সম্পদ কয়েকজন পুঁজিপতি কুগিত করে নিয়েছে অত্যন্ত সুকৌশলে। তারা একেকজন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। দিন দিন তাদের এসব পাহাড় সমান সম্পদের পরিমাণ ফুলে ফেপে স্ফীত থেকে স্ফীততর হচ্ছে।
রাতারাতি পাহাড় সমান সম্পদের মালিক তথা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে তারা নিশ্চয়ই দেশের সম্পদ জনগনের সম্পদ প্রত্য ও পরোভাবে লুন্ঠন করেছেন ও করছেন। লুন্ঠন করার কৌশলও তাদের জানা আছে। লুটেরা গোস্টির দলও আছে। যারা লুটেরা তারা মতায় গেলে বেপরোয়াভাবে লুট করে, আর বিরোধী দলে গেলে সরকারী দলের লুটেরাদের সাথে সুকৌশলে লিয়াজো করে লুন্ঠিত মালামালে নিরাপদে তা দেয়। সময় সুযোগমতো সমজোতার মাধ্যমে আবার লুটপাটে অংশ নেয়।
এই লুটেরাদের সংখ্যা সীমিত হলেও তাদের শক্তি অসীম। চুর ডাকাত ছিনতাইকারী তাদের পেশাগত কাজ পরিচালনার সময় হাতে নাতে ধরা পড়লে তাদের উত্তম মধ্যম গণপিটুনি কিংবা পুলিশের হাওলা করে দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত সুকৌশলে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা এবং অঢেল সম্পদ যারা লুন্ঠন করছে তাদের শাস্তি হওয়াতো দুরের কথা তারাই সমাজ ও রাস্ট্রের সবচেয়ে উচুস্থরের নাগরিক হিসেবে গণ্য। তাদের অঙ্গুলী হেলনে দেশ পরিচালিত হয়। রাষ্ট্র ও সমাজে টপ টু বটম পর্য্যায়ে যারা আপাদমস্তক ঘুষ দুর্নীতি ও লুটতরাজে লিপ্ত তারাই সমাজে সবচেয়ে সম্মানিত।
সবচেয়ে দামী।
মজার বিষয় হচ্ছে নিচ মহলে বা বটম পর্য্যায়ে যারা ঘুষ দুর্নীতি লুটতরাজে লিপ্ত তারা তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপকে অংশ দিয়ে খুশি করেই তাদের কার্যক্রম দিব্যি চালিয়ে যেতে থাকে। উর্ধ্বতন কর্তৃপ ভাগ পেয়ে খুশ মেজাজে তাদেরকে আস্কারা দেয়। এভাবে ঘুষ দুর্নীতি বা লুন্ঠনের অংশ ধাপে ধাপে চেলার মতো হেটে হেটে উপরের সারির রথি মহারথীদের পকেটেও সন্তর্পণে ঢুকতে থাকে এবং শেষ সীমা পর্যন্তও নাকি পৌছানোর সুবন্দোবস্ত করা হয়।
প্রশাসনের রাঘব বোয়ালসহ আমলা কামলাদের সিংহভাগ অংশ ঘুষ দুর্নীতি ও লুন্ঠনে লিপ্ত থাকায় ুদ্র অংশ যারা সততার মাধ্যমে দেশের জনগনের সেবা করতে চায় তারা বরাবরই থাকে কোনঠাসা।
প্রশাসনের লুটেরা অংশ স্থায়ীভাবেই চালিয়ে যায় তাদের লুটপাট ব্যবসা। যারা মতায় আসে বা দেশ পরিচালনা করে তাদের সবার অথবা সিংহভাগের মধ্যে যদি সততা থাকতো তবে আমলা কামলারা ঘুষ দুর্নীতি ও লুন্ঠন করে পার পেতে পারতোনা। মুল কথা হচ্ছে দেশ পরিচালনাকারী সকলেই অসৎ বা লুটেরা নয়। কিন্তু লুটেরাদের অংশ সব সময়ই থাকে শক্তিশালী দুর্দমনীয় ও দুর্দান্ত। তাই এদের দমন করা সম্ভব হয়না।
আমাদের দেশে একবার যারা মন্ত্রী এম.পি উপদেষ্টা হবার মহাসৌভাগ্য অর্জন করতে সম হন তাদের সিংহভাগই রাতারাতি কোটিপতি না হওয়াটাই বরং আজগুবি খবর বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু আজব হলেও গুজব নয় কথাটা যে একেবারে মিথ্যে নয় তা প্রায় সকলেরই কমবেশী জানা।
দেশে যে কোন সরকার পরিবর্তন হলেও লুটেরা গোস্টি সব সময়ই থাকে ফুরফুরে মেজাজে। পরবর্তী সরকারের লুটেরাদের সাথে তাদের পুর্ব থেকেই দহরম মহরম থাকায় সমন্বয় করতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয়না। প্রবাদ আছে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।
সিলেটী একটা প্রবাদ হলো চোরে চোরে আলি (হালি), এক চোরে বিয়া করে আরেক চোরের হালি (শালী)। মজার ব্যাপার হলো সব সময়ই সরকারের মুস্টিমেয় সৎ ও দেশপ্রেমিক অংশ থাকে কোনঠাসা। কালোটাকা দিয়ে কালসাপ পুষতে না পারায় মাঠ পর্য্যায়েও তাদের আশপাশে গিয়ে সুবিধাভোগী কর্মী সমর্থক চেলা চামুন্ডারা ঘুর ঘুর করেনা। এই যখন আমাদের দেশের সার্বিক অবস্থা তখন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার উপায়ইবা কী। আর এই উপায় নিয়ে ক’জনইবা ভাবেন।
তবে যারা সত্যি সত্যিই ভাবেন তারা থাকেন সদা সর্বদাই মতাহীন। যে সরকারই মতায় আসে তাদের সামনা সামনি সেই সরকার প্রধান, তাঁর কর্তাব্যক্তি আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব ও চৌদ্দ পনের পুরুষদের যতো বেশি কিংবা মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা বা তোষামোদ করা যায় তিনি ততো বেশি হন উৎফুল্ল। লাগান হাততালি। চামচারা বলে জোরসে বাজাও তালিয়া। যারা অতিরিক্ত তোষামোদ করে বা পাম পট্টি দেয় তারা হয় মালামাল।
তারা মুলত তোষামোদ করে মালামালে টইটুম্বুর হওয়ার জন্যই। যতো বেশি তোষামোদ করা যায় লাভের পাল্লাটাও ততো বেশি ভারি হতে দেখা যায়। নির্বাচনী টিকিট থেকে শুরু করে দলীয় বড়ো বড়ো পদ কিংবা চাকুরী হর কিসিমের সুযোগ সুবিধা এমনকি মন্ত্রনালয় বা উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও বাগিয়ে আনতে তোষামোদই হলো অন্যতম প্রধান অস্ত্র। পার্লামেন্ট পরিচালনায় কোটি কোটি টাকা খরছ হয়। সেখানে দেশের মানুষের ও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সমস্যা সম্ভাবনার কথা বলার পরিবর্তে তোষামোদ বা পাম পট্টিকেই অগ্রাধিকার দেন অনেকেই।
এতে ব্যয় করেন জনগনের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত সংসদ অধিবেশনের মহামুল্যবান সময়। বাজেট অধিবেশনে জনৈক পার্লামেন্ট মেম্বারের মহামুল্যবান ভাষন দুরদর্শনের মাধ্যমে শুনছিলাম। বরাদ্ধকৃত সময় ছিল বোধ হয় দশ মিনিট। ফোর পেয়ে পকেট থেকে বের করে সাথে নেয়া কাগজ আবৃত্তি করতে শুরু করলেন হাসিমাখা মুখে। সেকেলে যুগে ওঝা যেভাবে সাপে কাটা বা অন্যান্য রোগীকে ঝাড়ফুক শুরু করার পুর্বে বন্ধনা গাইতো, পয়লা বন্ধনা করি...........।
এভাবে বন্ধনা গাইতে গাইতে বরাদ্ধ পাওয়া সময়টুকু হাওয়া হয়ে গেল, নিজের নির্বাচনী এলাকার সমস্যার কথাগুলো আর আবৃত্তি করার সুযোগ পেলেন না বরং বাতিটাও ধপ করে নিভে গেল। এসময় তাঁর নির্বাচনী এলাকার জনগনও হয়তো সিমাহীন আবেগ নিয়ে দুরদর্শনের সামনে বসেছিলেন নিজের এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তাদেরই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেশ ও জাতির সামনে কিভাবে উপস্থাপন করেন তা উপভোগের জন্য। কিন্তু তাদের সে আশায় গুড়ে বালি।
তোষামোদের বিষয়টি যখন এসেই গেলো তখন একটি গল্প না বলে আর পারছিনা। সম্রাট আকবর একদিন বাজার দেখতে গিয়েছিলেন।
সঙ্গে ছিলেন মোল্লা দোপেয়াজা। বাজারে আকবরের বেগুন দেখে বড়োই ভালো লাগল। মোল্লাজি বুঝতে পারলেন বেগুন আকবরের বড্ড পছন্দ হয়েছে। দোপেয়াজা এগিয়ে এসে হাসি হাসি মুখে বললেন, সম্রাট এটা খুব আচ্ছাওয়ালা জিনিস, বেহেশতি আনাজ, যেমনই খুবছুরত তেমই ঘ্রান। তার চেয়েও অধিক মজা।
দুনিয়ার অন্য কোন আনাজের সাথে এর তুলনা নেই। আজিব এসব গুণের জন্য জ্ঞানী গুণী সমঝদারেরা এর নাম রেখেছেন বাগুন। মানে সর্বদাই এর গুণ। মোল্লার তারিফ শুনে আকবর বেগুন কিনে নিয়ে আচ্ছামতো পাক করিয়ে পেট পুরে খেলেন। কিছুন পর শুরু হলো বাদশার সারা শরিরে চুলকানি।
রাগে গোস্বায় মোল্লাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি না এর তারিফ করলে। মুল্লাজি বাদশার মলিন মুখ দেখে বললেন হুজুর, এতো খারাপ চিজ আল্লাহপাক দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি সৃষ্টি করেন নাই। যেমন তার রং তেমনই সে খারাপ। এর আন্দর বাহির কোথাও সামান্য গুণ নেই। এ কারনে সমঝদার আদমীরা এর নাম রেখেছেন বেগুন।
মানে যার কোন গুণ নেই তথা গুনহীণ সবজী। সম্রাট বললেন মুল্লাজী, কাল কি বলেছিলেন, আর আজ কি বললেন। মোল্লা হেসে বললেন, আমি বেগুন বা বাগুন এর কোনটিরইতো চাকরি করিনা। চাকরি করি আপনার। কাল আপনার পছন্দ হয়েছে দেখে তারিফ করেছি, আজ আপনার অপছন্দ হয়েছে দেখে নিন্দা করছি।
সম্রাট একথা শুনে হেসে বললেন বেশ বেশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।