আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কষ্টের শেষ এখানে হতেও পারে

মুক্ত আকাশ দেখব বলে বয়ে চলা। আকাশ কেন মুক্ত হয় না। রিতা রানীর কষ্টে সংসার চলে। জামাইয়ের সাথে বনিবনা না হওয়ায় ২ছেলে নিয়ে আলাদা থাকে রিতা রানী। একটা ছোট্ট দোকান দিয়ে রিতা রানীর জীবন চলে।

বড় ছেলে স্কুলে যায়। ছোট ছেলেটা হাঁটতে পারে। অনেক আশা নিয়ে ছোট ছেলের নাম রেখেছে রতন। রতন গোস্বামী রিতা রানীর দীক্ষা গুরুর নাম। এমন ভাল মানুষ রিতা তার জীবনে খুব কম দেখেছে।

রিতা গরীব বলে গুরুবাবা তাকে অনেক কিছু দিয়ে যায় শিষ্য বাড়ি এলেই। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছে দীক্ষাগুরুরা শুধু নেয়, দেয় না। তার ক্ষেত্রে হয়েছে উলটো। তাই রিতা রানীর তার গুরুকে এতো শুদ্ধা। বাবা’র মত ভালবাসে।

সে’বার যখন চাঁদপুর থেকে গুরুমা কে নিয়ে রতন গোস্বামী আসেন-তখনি রিতা রানীর ছোট ছেলে পেটে। যতদিন উনারা ছিলেন গুরুমা প্রতিদিন রান্না করে খাইয়েছেন সবাইকে। রিতা রানীর কোন টাকা খরচ করতে হয়নি। গুরু মাকে দেখলে যে কারো ভাল লাগবে। তিনিও অসাধারন মানুষ।

বাবু ছেলে হলে রিতা রানী নাম ঠিক করে রেখেছে। ছেলের নাম রাখবে রতন। এর চেয়ে ভাল নাম আর তার কাছে কিছু মনে হয় না। সেবার যখন ঘর আলো করে ছোট ছেলে এলো নাম রাখা হল রতন। তার গুরুর এই নামের কারনে যদি ছেলেটা ভাল হয়! তারপর কিছুকাল গেল।

বড় ছেলে স্কুলে যায় না-কোন ভাবেই স্কুলে পাঠানো যায় না। কি আর করা-কটা ঔষধের দোকানে দিয়ে দিল। যদি কাজ শিখে ব্যবসা পাতি করতে পারে। ছোটটা আদরে আদরে মানুষ। কোন মতে প্রাথমিক পার করল।

মাধ্যমিকে যায় না। তাকেও স্কুলে পাঠানো যায় না। রিতা রানীর দুঃখ যায় না। তার সেই বিয়ের পর থেকে কষ্ট যে লেগে আছে সেটা কোনভাবেই সরাতে পারছে না জীবন থেকে। এর মাঝে গুরুবাবা দেহত্যাগ করেছেন।

রিতা রানী শেষ দেখাটা দেখতে গিয়েছিল। সেদিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল। সেখানে গুরু ভাইয়ের আর বোনের সাথে অনেক আলাপ হয়। উনারা বলেন আপনি চিন্তা কইরেন না দিদি আপনার ছেলেগুলো মানুষ হবে। আরও ক’বছর পর গুরুভাই রিতা রানীর বাড়ি আসে।

ভাইটির গায়ের রঙ এতো সুন্দর! দেখতেও সুপুরুষ, লম্বাও। রিতা রানীর অনেক মায়া হয়। ভাইটি কিছু টাকা দিয়ে যায় রীতা রানীকে। ভাইয়ের ঢাকাতে চাকুরী হয়েছে। তাই দেখা করতে এসেছে।

ঢাকা চলে গেলে হয়তঃ আর আসা হবে না। এই শেষ দেখা গুরু ভাইয়ের সাথে রিতা রানীর। রিতা রানীর বড় ছেলেটা যদিওবা কিছু একটা করে। কিন্তু ছোটটা খারাপ ছেলেদের সাথে মিশতে শুরু করে। শোনা যায় সিগারেটও ধরেছে।

রতনকে তাই পাঠিয়ে দেয় নরসিংদিতে প্রান কোম্পানীতে লেবার হিসেবে। যদি ভাল হয়ে ফেরে। কিন্তু না। ২মাস যেতে না যেতেই রতন ফিরে আসে-সাথে গাঁজার অভ্যাস নিয়ে। রিতা রানীর কান্না ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

এর মাঝে বড় ছেলে বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। ক’দিন আগে ছোট ছেলেটিকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয় শেষ চেষ্টা হিসেবে যদি মানুষ হয়ে ফেরে। রিতা রানীর কষ্টের শেষ এখানে হতেও পারে। (গুরু ভাই ঢাকাতে গভঃ ল্যাব স্কুলে শিক্ষকতায় ঢুকেছিলেন। ক’বছরের মাথায় তার ছাত্রদের দ্বারা গুলিতে নিহত হন।

তাই রিতা রানীর সাথে ভাইয়ের আর দেখা হয়নি) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.