সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।
১.
কাল সন্ধ্যায় সাইট থেকে ফোরম্যান ফোন দিয়ে বললো, “স্যার, সকালে হঠাৎ করে হাবিবের বুকে ব্যাথা শুরু হলে আজ সে কাজে যায়নি। বিকালে ক্যাম্পে ফিরে এসে শুনি ম্যানেজার ওর ইউনিফর্ম আর টুলস ক্লোজ করে নিয়েছে ম্যানেজার।
কিছুত বুঝতে পারছি না”
সকালে অসুস্থ হয়েছে আর আমাকে এখন জানাচ্ছ? তোমাদের কি কোন দায়িত্ব জ্ঞান নেই? আচ্ছা আমি দেখছি কি হয়েছে। সাথেসাথে ডাক্তারকে ফোন দিয়ে জানলাম ওর হার্টের সমস্যা, মরুভূমিতে রাখা যাবে না। কাল ভোরেই ওকে হেড অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বুঝতে পারলাম আর কিছুই করার নেই, এই সব ব্যাপারে ডাক্তারের রিপোর্টই চুড়ান্ত।
শেষ চেষ্টা হিসাবে ক্লাইন্টের কান্ট্রি-ম্যানেজারকে ফোন দিলাম।
উনি ফোন ধরেই বললেন, “ইসলাম, ভালো হয়েছে তুমি ফোন দিয়েছ, আমিই তোমাকে কিছুক্ষণ পরে ফোন দিতাম। তোমাদের একজন টেকনিসিয়ানের হার্টের প্রবলেম দেখা দিয়েছে, ওকে তোমাদের হেড অফিসে ফেরত পাঠাচ্ছি। ”
বললাম, “স্যার, রোজার প্রথম দিন, গ্যাস্টিকের সমস্যাও হতে পারে। আর কয়েকটা দিন দেখলে হতো না?”
আমার কিছুই করার নেই, ডক্টর হেজ কনফার্ম দেট ইট ওয়াজ নট ফ্রম গ্যাস প্রবলেম। আই ক্যান্ট টেক এনি রিস্ক।
ইফ সামথিং বেড হ্যাপেন্ড টু হিম ইন দ্যা ডেসার্ট, হু উইল টেক দ্যা রেসপনসিবিলিটি? স্যরি, আই কেন্ট হেল্প ইঊ।
কিছুক্ষণ পর হাবিব ফোন দিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, “স্যার, ক্যাম্প বস আমার ইউনিফর্ম নিয়ে নিয়েছে, আর বলছে আমাকে নাকি কালকে ফেরত পাঠিয়ে দিবে। বিশ্বাস করেন স্যার আমার কিচ্ছু হয়নি। সকালে একটু বুকে ব্যাথা হয়েছিলো, ডাক্তারের সামনে গ্যাস্টিকের টেবলেট খেয়েছি সাথেসাথে ব্যাথা সেরে গেছে। আপনারাই আমার বাপ-মা, এখানে আমার থাকার জায়গাটাও নাই, এখন যদি চাকরিটা চলে যায় আমি কৈ যাবো”
মনটা খারাপ হয়ে গেলো, বললাম তুমি চিন্তা কর না।
কালকে অফিসে এসে সরাসরি আমার সাথে দেখা করবে। তোমাকে হেড অফিসেই কোন কাজে লাগিয়ে দেব। কতটুকু কি করতে পারবো জানি না, কিন্তু তাকে কেন যেন একটু ভরসা দিতে ইচ্ছা করলো। কাল আবার ডাক্তারি চেকআপ করে যদি দেখা যায় সত্যি সত্যি হার্টের বড় সমস্যা আছে তাহলে তাকে দেশে পাঠানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই। গরীব মানুষগুলোর এইসব বড়লোকি অসুখ যে কেন হয়?
২.
হঠাৎ করে সরকারের একটি রুল জারির কারনে গত মাসে আমাদের একটি অয়েল রীগ বন্ধ হয়ে যায়।
এই রীগটা প্রায় আড়াই বছর চলেছিলো। হঠাৎ করে এই রীগের প্রায় ৪০/৪৫ জন এক্সপার্ট ও টেকনিশিয়ানের চাকুরি চলে যায়। বেশিভাগই লোকাল, কিছু ইজিপসিয়ান আর কয়েকজন ফিলিপিনি। এই মাসে শুরুতেই ওদের বিদায় করে দেওয়া হয়। কি যে হৃদয়বিদারক দৃশ্য! লোকগুলোর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না, সে কী নিদারুন কষ্টের ছায়া! একেএকে যখন তারা চলে গেলো শুধু মনে মনে বললাম, “আল্লাহ, ওদের ভালো রেখ”
৩.
পাকিস্তানে বন্যার হাজারের উপর লোক মারা গেছে, আরও হাজার হাজার লোক মৃত্যুর মুখোমুখি।
একই সময়ে চীনের ভূমিধ্বস, এখানেও হাজারের উপর মানুষ মৃত, কত হাজার যে নিঁখোজ আল্লায় জানে। রাতে পরিবারের সবার সাথে বসে খবর দেখছিলাম। পাকিস্তানের বন্যার দৃশ্য দেখাচ্ছিলো, কিছু লোক পানির মধ্যদিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পরিবার পরিজন নিয়ে। দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো, মানুষ কতই না কষ্টে আছে!
চীনের ভূমিধ্বসের উদ্ধারকাজ দেখাচ্ছিলো। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে কতগুলো এস্কাভেটর দিয়ে মাটি সরাচ্ছিলো, পাশদিয়ে হেটে যাচ্ছে অসংখ্যা অসহায় মানুষ।
হঠাৎ আব্বু বললো, একটা জিনিস খেয়াল করেছ! দুনিয়ার তাবৎ শোষিত/নির্যাতিত/অসহায় মানুষগুলোর চেহারা এক!
চমকে উঠলাম! তাই তো! চীনাদের সবার চেহারাই আমার কাছে এক রকম লাগে, কিন্তু তারপরেও এদের মধ্যে অন্যরকম একটা মিল দেখতে পেলাম। কী বাংলাদেশি হাবিব, কী পাকিস্তানি, কী চীনা, কী ইজিপসিয়ান বা ফিলিপিনি! সবার কষ্টের একই রং!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।