আমি আছি সেইখানে............যেখানে নই তোমরা...তাই বলে নই আমি একা সিলেটে ‘বার্গার কিং’ ফাস্টফুডের দোকান নিয়ে কৌতূহল সর্বত্র। ঘটনায় হতবাক অভিভাবকরা। মানবজমিন-এ রিপোর্ট প্রকাশের পর পালিয়েছে বার্গার কিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। গতকাল ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা গেছে তালাবদ্ধ। পুলিশ এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, জিন্দাবাজার এলাকার আলী ম্যানশনে বার্গার কিংয়ের আগে ওই রেস্টুরেন্টটির নাম ছিল বৈশাখী রেস্টুরেন্ট। প্রায় তিন বছর আগে ওই রেস্টুরেন্টের নাম পরিবর্তন করে করা হয় ‘বার্গার কিং’। এই রেস্টুরেন্ট নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে তেমন আগ্রহ ছিল না। ফাস্টফুডের দোকান বলে এখানে সচরাচর সব শ্রেণীর গ্রাহক যেতেন না। ব্যবসায়ীরা জানান, রেস্টুরেন্টের অবৈধ কার্যকলাপ তাদের নজরে আসে প্রায় ৪-৫ মাস আগে।
ওই সময় ব্যবসায়ীরা জানতে পারেন বার্গার কিংয়ের অন্তরালে ওখানে চলছে অবৈধ কর্মকাণ্ড। সিলেট কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জিন্দাবাজার ব্যবসায়ী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এহছানুল হক তাহের জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের নজরে বার্গার কিংয়ের অবৈধ কার্যকলাপ নজরে আসার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে তদারকি শুরু করেন। এ সময় দেখা যায়, স্কুল-কলেজের উঠতি মেয়েরা এখানে বেশি উঠে। এবং তাদের সঙ্গে থাকে তাদের বয়ফ্রেন্ড। তিনি জানান, এই কৌতূহল নিয়ে রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা ওই রেস্টুরেন্টে যান।
ওই সময় সেখানে খাটের মতো লম্বা সাইজের অনেকটা হেলান চেয়ার পাওয়া যায়। এবং তারা দেখেন ওখানে খাটের উপর শুয়ে বিকিনি পরা অবস্থায় এক তরুণী শুয়ে আছে। এবং তার পাশে কনডম পাওয়া যায়। এ সময় ব্যবসায়ীরা খবর নিয়ে জানতে পারেন ওই তরুণী একজন অবৈধ দেহ ব্যবসায়ী। তাকে দিয়ে ওখানে টাকার বিনিময়ে অবৈধ কার্যকলাপ করা হচ্ছে।
এ দৃশ্য দেখে ক্ষেপে যান ব্যবসায়ী নেতা তাহের। তিনি সঙ্গে সঙ্গে রেস্টুরেন্টের মালিককে ডেকে এনে সতর্ক করে দেন। ওই সময় প্রতিবাদের মুখে খাট আকৃতির হেলান চেয়ার সরানো হয়। পরে লম্বা পর্দা লাগিয়ে ছোট ছোট বুথ তৈরি করা হয়। এরপরও থেমে থাকেনি অবৈধ কার্যকলাপ।
বুথের ভেতরেই চলতে থাকে অবৈধ কার্যকলাপ। স্কুল ও কলেজের তরুণীরা সহজভাবে বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে সেখানে উঠে ইজ্জত হারান। ব্যবসায়ীরা জানান, গত মঙ্গলবার বিকালের দিকে এক তরুণী তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ওই রেস্টুরেন্টে উঠতে চাইছিলো না। তখন তার সঙ্গের তরুণটি তাকে টেনে হিঁচড়ে উপরে নিয়ে যায়। এ দৃশ্য ব্যবসায়ীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেন।
তখন কেউ প্রতিবাদ না করলেও পুরো বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করেন। প্রায় ২-৩ ঘণ্টা পর বার্গার কিং থেকে তরুণকে নিয়ে তরুণীটি নিচে নেমে আসে। নিচে নেমেই মেয়েটি কান্না শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টা মেয়েটি বার্গার কিংয়ের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কাঁদে। ব্যবসায়ীরা জানান, তখন ওই মেয়েটিকে স্বাভাবিক মনে হয়নি।
এভাবে প্রতিদিন ঘটনা ঘটতো বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও জিন্দাবাজার ব্যবসায়ী ফোরামের সভাপতি মো. লায়েছ উদ্দিন জানিয়েছেন, তারা বুধবার বার্গার কিংয়ের ভেতরে গিয়ে যে দৃশ্য দেখেন তা সহ্য করার মতো নয়। তিনি জানান, পুণ্যভূমিতে এরকম আচরণ সহ্য করার মতো নয়। এর কারণ সবার ঘরেই মা-বোন রয়েছে। আমরা আমাদের মা-বোনদের নিরাপদ চলাচলের ক্ষেত্র তৈরি করছি না বলে মনে হয়।
তিনি জানান, আমি যা দেখেছি তা চরম লজ্জাকর ও অনৈতিক। নগরীর জল্লারপাড় এলাকার বাসিন্দা ডা. নাজমুল হক জানান, এরকম ঘটনা সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এ অবস্থা থেকে বাঁচতে চাই। এ জন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী ও অভিভাবক স্বপন মোদক জানান, নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে এরকম ঘটনা দীর্ঘ দিন ধরে চলছে।
অনৈতিক কর্ম দেখতে দেখতে অভিভাবক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, এখানে ব্যবসার আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়েছে। তিনি জানান, আর যেন এরকম ঘটনা না ঘটে সেদিকে নজর দিতে হবে। নগরীর জেইল রোড এলাকার অভিভাবক সৃজিব চৌধুরী জানান, জঘন্যতম এই কর্মকাণ্ড অভিভাবকদের চিন্তিত করেছে। যিনি এই রেস্টুরেন্টের মালিক তিনিও একজন অভিভাবক।
সুতরাং প্রতিষ্ঠানের মালিককে একজন অভিভাবক হিসেবে এ বিষয়টি দেখতে হবে। গতকাল বিকালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া জানিয়েছেন, রিপোর্ট প্রকাশের পর পুলিশ এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে। এখানে অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেলে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। মানবজমিনের সিলেট এজেন্ট আলমগীর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, মানবজমিন খুঁজে না পেয়ে অনেকেই ওই রিপোর্টের ফটোকপি ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করেন। তিনি জানান, মানবজমিনে এ রিপোর্ট প্রকাশের পর সকালেই নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে মানবজমিন উধাও হয়ে যায়।
নগরীর জিন্দাবাজার এলাকা থেকে এক সঙ্গে পত্রিকার সকল কপি ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া, নগরীর বন্দর বাজার, সুরমা মার্কেট, দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন পয়েন্টে মানবজমিন ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হয়। দুপুরের পর মানবজমিন আর সিলেটে পাওয়া যায়নি। সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী নেতা তাহের আরও জানান, একটি স্বাধীন দেশে এই রকম কর্মকাণ্ডের সুযোগ দিলে ভবিষ্যতে আমিও আক্রান্ত হতে পারি। আমার মেয়ে, ভাগ্নি-ভাতিজিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে পারি।
এ জন্য সিলেটবাসীকে এখন থেকেই সোচ্চার হতে হবে বলে জানান তিনি।
সূত্রঃ www.mzamin.com ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।