জড় এক প্রসঙ্গ কাঠামোর নিবিড় পর্যবেক্ষক :P
বাবারা সব সময়ই একটু খ্যাত হয়। "রুকনুদ্দিন" এটা কোন নাম হল? বাবার রাখা নামটা রূকুর একদমই পছন্দ না। সবাই তাই "রুকনুদ্দিন" কে রূকু বলে ডাকে। এই বয়সী আর সব ছেলে ছোকরা দের মত পড়াশুনার প্রতি রূকুর তীব্র এলার্জি। বরং একটু বেশি।
অর্থহীন হোমওয়ার্ক এর চেয়ে পাশের বাসার রহিম চাচার জানালার গ্লাস ভাঙ্গাতেই আমাদের রূকুর বেশি আগ্রহ। স্বপ্ন দেখতে ভালো পড়াশুনা করতে হয় না। রুকু ও স্বপ্ন দেখে। একদিন সে ডাক্তার হবে। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে "রুকনুদ্দিন, বাবা তুমি বড় হয়ে কি হবে?" সে বুক ফুলিয়ে বলে, "আমি ডাক্তার হব,আপারেশন করে মানুষ দের মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনব।
" রূকুর বাবা বিদেশে থাকে। বিদেশে থাকা অধিকাংশ মানুষের মত তার কোন স্বীকৃত পেশা নেই (!)। "তোমার বাবা কি করে?" এই প্রশ্নের জবাব হয় "বিদেশে থাকে। " যেন বিদেশে থাকাটাই একটা পেশা।
ঘটনাটা যখন ঘটল তখন রুকু আসলে বুঝতে পারছিল না সে কি করবে।
এইডস একটা মারাত্মক অসুখ। এই রোগটা সম্পর্কে রুকু তেমন একটা জানে না। কিভাবে হয়? কিভাবে ছড়ায় পুরো ব্যাপার টাই রুকুর কাছে ঝপসা। একবার সাহস করে মা কে জিজ্ঞেস করেছিল "মা, এইডস কি?" তার মনে আছে তার মা করলার জুস এর মত তিক্ততা নিয়ে তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছিল যে সে আর এই প্রশ্ন তাকে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করেনি।
এই ভয়ংকর ও রহস্যময় আসুখটাই যে তার বাবার হবে তা রুকু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি প্রথমে।
তার এইডস আক্রান্ত বাবা একদিন ফিরে আসে দেশে। রুকুদের দুঃসময় এর শুরু হয়...
রুকু কে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়। তার প্রিয় শিক্ষকেরা তার সাথে এমন আচরণ করা শুরু করে যেন সে কোন ভয়াবহ অন্যায় করে ফেলেছে। খেলার মাঠে সে হয়ে যায় সঙ্গী ছাড়া। এলাকার সব দোকানদার তাদের কাছে জিনিস বিক্রি করা বন্ধ করে দেয়।
ব্যবসায় নাকি লালবাতি জ্বলবে। রুকুর স্বপ্ন গুলো একে একে রহিম চাচার জানালার গ্লাসের মত ভেঙ্গে পড়ে।
পরিশিষ্টঃ রুকু নামের সেই দুরন্ত ছেলেটার নাম আজ রাকা। আরও নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে গাল-কাটা-রাকা। রুকু আজ অপারেশন করে।
কিন্তু সে অপারেশন কাউকে বাঁচায় না...বরং মানুষদের ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে।
সমাজের 'রুকু'রা এভাবেই দিন দিন 'রাকা' তে পরিণত হচ্ছে। আমরা কি তা দেখছি? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।