প্রদীপ হালদার,জাতিস্মর। আমি রমেশ সাহা । মৃত্যু হয়েছিল পুকুরের জলে । বয়স তখন তিন বছর । আমার মৃতদেহ দুহাতে নিয়ে , আমার মা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ী এলো ।
উঠানে আমাকে নামিয়ে রাখলো ।
আর আমি দাঁড়িয়ে আছি আমার মৃতদেহের পাশে । মৃতদেহ থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিলাম এবং আমার নিজের শরীরের দিকে তাকালাম । দেখি আমার পেটের মধ্যে নানান বর্ণালী রেখা চলাফেরা করছে ।
আমার জেঠিমা বারান্দা থেকে চীৎকার করে বলতে লাগলো-' ওর জামা প্যাণ্ট সব সঙ্গে দিয়ে দে ।
' আমার মৃতদেহের ঠাঁই হলো - নদীর চরে ।
আজ ফিরে এসে জেঠিমাকে বললাম -কেন বলেছিলে ওর জামাপ্যাণ্ট সব সঙ্গে দিয়ে দে । আমার মুখ থেকে এই কথা শুনে জেঠিমা ঘাবড়ে গেল । বললো , ওর স্মৃতি রাখতে চায় নি ।
মাকে বলেছিলাম , আমার কি অপরাধ যে আমাকে নদীর চরে পুঁততে হলো ? আমার খেলনাগুলো মা আমাকে দাও ।
আর কিছু চাই না । মা আমাকে খেলনাগুলো দিতে পারে নি , সব নষ্ট করে দিয়েছে । মা আজও বেঁচে আছে । কিন্তু পৃথিবীর কি পরিহাস, সবই পেলাম , পেলাম না আমার প্রিয় খেলনাগুলো ।
কষ্ট পেয়েছিলাম ।
মা শুধু বললো- ' খোকা তোমার কাছে কেবল একটা জিনিস চায়। মানুষের জন্য কাজ করো । পৃথিবীর সব মানুষ যেন চেনে । '
মাকে কথা দিয়েছি ।
মৃত্যুর পরের কথা আজও কেন মনে আছে ?
ব্রেন ওয়েভ অনুযায়ী - ব্রেনে আলফা ওয়েভ থাকাকালীন অবস্থায় পড়াশোনা করলে মনে থাকে ।
এই অবস্থায় নতুন রকমের চিন্তাভাবনা করা যায় ।
আমি যখন ভূত অবস্থায় ছিলাম , আসলে আলফা ওয়েভ অবস্থায় ছিলাম । এই অবস্থায় ছিলাম বলে , সেই সময়কার ঘটনাগুলো আজও আমার মনে রয়েছে ।
আলফা ওয়েভ অবস্থায় আমি আমার বর্তমান মায়ের গর্ভে থাকা প্রদীপের শরীরে ঢুকি ।
প্রদীপের জন্ম হলো ।
কিন্তু আমি রমেশ , প্রদীপের শরীর থেকে বের হতে পারছি না ।
আজও সব মনে আছে । তাহলে বলতে পারি- এর মূলে আলফা ওয়েভ । ছোট্টবেলা থেকে এখন পর্যন্ত , আমার জীবনে আমি , রমেশ , হরিদাস এবং নন্দী একসঙ্গে একই শরীরে আছি । নেই কোন সঙ্গী ।
আমি , আমার স্ত্রী এবং পুত্র -এই নিয়ে জীবন । আমার নেশা গান শোনা । আলফা ওয়েভই আমাকে বাঁচিয়ে রেখে আমার কাছ থেকে সকলকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে । যেদিন আমার আবিষ্কার শেষ হবে , সেইদিন বোধহয় আমার মুক্তি হবে আলফা ওয়েভ থেকে ।
আমি ভূত ছিলাম , আসলে আমি আলফা ওয়েভ -
মানুষের ব্রেন ওয়েভ সম্বন্ধে বিজ্ঞান যাই বলুক না কেন , মানুষের মৃত্যুর পর ব্রেন ওয়েভ কি করে , সেই কথা বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত কিছু বলে নি ।
এখন অবধি মানুষের ব্রেনে চার রকমের ওয়েভ আবিষ্কৃত - বিটা ওয়েভ , আলফা ওয়েভ , থিটা ওয়েভ , ডেল্টা ওয়েভ । একই সময়ে চার রকমের ওয়েভ ব্রেনে দেখা যায় না । এক এক সময়ে ব্রেনে এক এক ওয়েভের দেখা মেলে ।
যখন আমরা conscious mind বা চেতন অবস্থায় থাকি , তখন ব্রেনে বিটা ওয়েভ কাজ করে ।
যখন আমরা subcobscious mind বা অবচেতন অবস্থায় অর্থাৎ বিশ্রাম অবস্থায় থাকি , তখন ব্রেনে আলফা ওয়েভের দেখা মেলে ।
যখন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি এবং স্বপ্ন দেখি , তখন থিটা ওয়েভের আবির্ভাব ঘটে । যখন আমরা গভীর ঘুমে মগ্ন থাকি , তখন ডেল্টা ওয়েভের দেখা মেলে ।
আর যখনই ঘুম ভেঙে যায় , তখনই আলফা ওয়েভের দেখা মেলে , আর এই অবস্থায় স্বপ্নের কথা কিছু মনে পড়ে । যেই ব্রেনে বিটা ওয়েভ এসে যায় , আর স্বপ্নের কথা মনে করা যায় না ।
এইভাবে চক্রাকারে ব্রেনে ওয়েভের আবির্ভাব ঘটে ।
আমি যা বললাম তা সবই বিজ্ঞানের কথা , আমার কথা নয় ।
এবার আমার কথা - যখন আমরা rest অবস্থায় থাকি তখন আলফা ওয়েভ কাজ করে । এই অবস্থায় পড়াশোনা করলে মনে থাকে ।
তাহলে যারা জাতিস্মর , তাদের ব্রেনে কি আলফা ওয়েভ বেশীক্ষণ কাজ করে ?
আমি যখনই সময় পাই , গান শুনে সময় কাটাই । আমার না আছে বন্ধু -বান্ধব , না আছে আত্মীয় পরিজন ।
গানই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে ।
লেখক ,কবিদের ব্রেনে আলফা ওয়েভ বেশী কাজ করে ।
মানুষের মৃত্যু হলে , এই ব্রেন ওয়েভ তখন কাজ করবে , যেটাকে আমরা ভূত বলি । বলতে পারি সেখানে বিটা ওয়েভ , আলফা ওয়েভ এবং ডেল্টা ওয়েভ
কাজ করবে । সেখানে থাকবে না থিটা ওয়েভ ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।