আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্নীতি ও মৌলবাদ যেভাবে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে

দুর্নীতি ও মৌলবাদ যেভাবে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে ফকির ইলিয়াস ======================================== বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়া অঙ্গনে। চলমান সরকার কী করছে, তাদের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় ফাঁস করেছে উইকিলিকস। এর মাঝে দুটি বিষয় আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র। প্রথমটি হচ্ছে বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়মের খতিয়ান। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাংলাদেশে জামায়াত নিজেকে সুসংহত করছে বলে মার্কিন দূতাবাসের রিপোর্ট।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দুটি বিষয়ই উইকিলিকস ফাঁস করার চেষ্টা করেছে মার্কিনিদের ঢাকা-ওয়াশিংটন যোগাযোগকে নির্ভর করে। এর মাধ্যমে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি, উন্নয়ন পুরোপুরিই মার্কিনি নখদর্পণে। তারা চোখ রাখছে বাংলাদেশে কোথায় কী হচ্ছে। রাখার অন্যতম যে কারণটি হচ্ছে তা হলো, উপমহাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানকে নজরদারি করা। যে কোন ধর্মীয়, গোত্রীয়, বর্ণগত মৌলবাদই উপমহাদেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে- তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

আফগানিস্তানঘেঁষা মরুভূমি পাকিস্তানে মৌলবাদী তালেবান গোষ্ঠী বেশ জোরেশোরে দখল নেয়ার পর ভারত তা নিয়ে শঙ্কিত বৈকি। আর পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী জারদারি-গিলানি প্রমুখের ভাবখানা এমন, আমরা যখন প্রতিদিন রক্তাক্ত হচ্ছি, তাহলে অন্যরাও হোক। এতে পাকিস্তানের কিছুই যায় আসে না। আর সে কারণেই ভারতের কিংবা বাংলাদেশের মাথাব্যথা তো থাকবেই এবং থাকারও কথা। এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থটি বড় হয়ে দেখা দেয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ভারতের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে এবং ভারতও চায় যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গি দমনে, মৌলবাদীদের উত্থান রোধে উপমহাদেশে সবসময় কার্যকর ভূমিকা রাখুক।

ঢাকার মার্কিন দূতাবাস ওয়াশিংটনে যেসব রিপোর্ট পাঠায়, তা সেই মনিটরিংয়েরই অংশমাত্র। সম্প্রতি উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাতে দুটি সংবাদ মুখ্য-এক. দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, দুই. মৌলবাদীদের উত্থান। এ দুই শঙ্কা একসঙ্গে বেড়ে উঠলে বাংলাদেশের পরিণতি কী হতে পারে, সে বিষয়ে অদূর অতীতের দিকে নজর দেয়া দরকার। ২০০১-০৫ সাল বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের স্বর্গরাজ্য ছিল। এসব দুর্নীতিবাজের হোতা নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করার জন্য 'শায়খ রহমান', 'বাংলা ভাই'-এর মতো ফ্রাঙ্কেনস্টাইন মাঠে নামিয়েছিল।

হ্যাঁ, তারা জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীত-এ দুই অপশক্তিকে একসঙ্গে লালন করেছিল; যা ছিল একটি স্বাধীন, ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য চরম লজ্জাজনক হুমকি। ফলে দেশে একযোগে বোমা হামলার পরও, ২১ আগস্টের মতো নির্মম বোমা হামলার পরও তৎকালীন চারদলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কোন মন্ত্রী পদত্যাগ করেননি; বরং তারা প্রকারান্তরে নিজ সরকারের পক্ষে বিভিন্ন সাফাই গেয়েছিলেন। হ্যাঁ, একই চিত্র এবং পূর্বাভাস আমরা ২০১১ সালেও বর্তমান মহাজোট সরকারের সময় দেখছি। এ সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন মহাজোটের শরিক নেতারাও। তারপরও সরকার তথা শাসকশ্রেণীর সামান্য বোধোদয়ও হচ্ছে না।

কয়েকজন মন্ত্রীর বাচালতা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেনের 'আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে নিয়েছে' বক্তব্যকে। তাহলে পার্থক্য কোথায়? ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবক্তা সরকারের যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপিত হবে কেন? টিভিতে দেখলাম, বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী নিজেকে অত্যন্ত 'সৎ' মানুষ হিসেবে দাবি করেছেন। মনে পড়ছে একসময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর কিংবা হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক রহমানও নিজেদের 'ধোয়া তুলসী পাতা' দাবি করতেন। কিন্তু বাস্তবতা যে ভিন্ন ছিল, তা সময়ই প্রমাণ করেছে। ঠিক একইভাবে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরাও নিজেদের 'সততা' দেখাতে গিয়ে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন আর সেই সুযোগে কিছু চরমপন্থি অপশক্তি দেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার জন্য আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এটা খুবই স্পষ্ট কথা, কোন রাষ্ট্রে দুর্নীতি সরকারি পর্যায়ে প্রশ্রয় পেলেই সেদেশে চরমপন্থি, মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী মদদ পায়; যেমনটি পাকিস্তানে পেয়েছে। বাংলাদেশকে তেমনি একটি 'রেড জোনে' ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এজন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কঠোরহস্ত হওয়া প্রয়োজন। আমরা এরই মধ্যে দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-মন্ত্রিপরিষদের রদবদল সহসা হচ্ছে না। এর কারণ কী? কেন হচ্ছে না? সরকার তার তিন বছর মেয়াদ শেষ করার পথে।

অথচ ব্যর্থ মন্ত্রীরা তাদের আসনে রয়েছেন বীরদর্পেই। প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন মন্ত্রীদের সরালে কিংবা রদবদল করলে তার সরকারের দুর্বলতা বেরিয়ে পড়বে তবে তিনি ভুল করবেন। যারা ব্যর্থ তাদের সরানো উচিত। মহাজোট সরকার গঠনের পরপর প্রধানমন্ত্রী তেমনটিই বলেছিলেন। তার ভাষ্য ছিল, মন্ত্রীদের কাজের মূল্যায়ন হবে।

যারা ব্যর্থ হবেন, তাদের সরে যেতে হবে। আমরা দেখছি গেল পৌনে তিন বছরে অন্তত হাফডজন মন্ত্রী চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ার পরও সরে যাননি কিংবা সরিয়ে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশে দুর্নীতি ও মৌলবাদ একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছে এর আগেও। হয়েছে সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায়। রাজাকার মওলানা মান্নানকে ধর্মমন্ত্রী করে মৌলবাদের বীজ বপন করার চেষ্টা হয়েছে গ্রামে-গ্রামান্তরে।

কীভাবে হয়েছে, তা দেশের মানুষ ভুলে যাননি। সেনাশাসকরা হঠাৎ করে জুমার নামাজে হাজির হয়ে দেশের মানুষকে চমক দেয়ার চেষ্টা করেছেন। নেপথ্য উদ্দেশ্য ছিল, ধর্মীয় তমদ্দুনকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। বর্তমানে মন্ত্রীরা দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে প্রকারান্তরে মৌলবাদীদের হালে পানি দিচ্ছেন। না হলে 'পদ্মা সেতু প্রকল্প' বিষয়ে আগাম দুর্নীতি তদন্ত কানাডায় উত্থাপিত হবে কেন? আবারও বলি, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, দাম্ভিক উচ্চারণ মহাজোট সরকারের জন্য কাল হতে পারে_ যে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে না।

নিউইয়র্ক, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ ---------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ /ঢাকা/ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ শুক্রবার ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.