চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং ভারতরাষ্ট্রের চরিত্র
৬৪ কোটি টাকার বোফর্স কেলেঙ্কারি একটি সরকারের পতন ঘটিয়েছিল। আর এখন আমরা প্রায় প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ হতে দেখছি। এটা ঘটনা যে দুর্নীতির মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু আরো বড় কথা হলো আজকের দুর্নীতির চেহারাটাই উদারনৈতিক ও বিশ্বায়িত ভারতরাষ্ট্রের চেহারাটাকে প্রতিফলিত করছে। বৃহৎ পুঁজি ও সাম্রাজ্যবাদী সব সময়েই ভারতরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করেছে।
কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে জাতীয় ও বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থা এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি ক্রমবর্ধমান হারে রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরো প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করছে।
শাসকশ্রেণির রাজনীতিবিদরা কি কর্পোরেটদের দালাল ?
রাডিয়া টেপ দেখিয়ে দিয়েছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি তাদের দালালদের মাধ্যমে কিভাবে মন্ত্রীদের নিয়োগ, সংসদের আইন পাশ এবং নীতিকে তাদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজনীতি ও কর্পোরেট তহবিল এর আলিঙ্গন ক্রমশ বেড়েছে। কয়েকবছর আগে বিজেপির প্রমোদ মহাজন এবং সমাজবাদী পার্টির অমর সিং এর কথা শোনা যেত, যারা তাদের পার্টির জন্য কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েক শো কোটি টাকা তুলে ফেলতে পারেন। এই কর্পোরেট দাক্ষিণ্য নিশ্চিতভাবেই প্রতি দক্ষিণার শর্তের সাথে যুক্ত।
রাডিয়ারা কর্পোরেট লবির হয়ে যে কাজ করে দেন, যেমন এ রাজাকে টেলিকম মন্ত্রী বানানো, তা পরবর্তী উপকারের কথা মাথায় রেখেই। কর্পোরেটদের টাকা রাজনীতিবিদের পরিবারকে ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয়, আর সেই ঘুষের কালো টাকা পরিবারের মাধ্যমেই সাদা হয়। কর্পোরেটদের বিপুল টাকা সুবিধাজনক রিপোর্ট বা সুপারিশের জন্যই যে কাজে লাগে তা নয়, এ দিয়ে এমনকী বিচারপতিদেরও প্রভাবিত করা যায়। এই ছবিটা অমর সিং টেপ, প্রমোদ মহাজন ঘটনাবলীতে নিহিত ছিল এবং রাডিয়া টেপ এ তার পরিপূর্ণ চেহারা বেরিয়ে এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা বিভিন্ন আর্থিক এবং আভ্যন্তরীণ নীতি – এস ই জেড আইন, পেটেন্ট আইন, নিউক্লিয়ার লায়াবিলিটি আইন, বিভিন্ন কালা কানুন, অপারেশন গ্রীন হান্ট প্রভৃতি এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে কর্পোরেট স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই।
উইকিলিকস যা প্রমাণ করেছে
রাজনৈতিক দুর্নীতির সবচেয়ে বড় প্রমাণ সম্ভবত সংসদে নিউক্লিয়চুক্তির প্রেক্ষিতে আস্থাভোটের সময়ে টাকার বিনিময়ে ভোটের কেনাবেচার ঘটনাটি। ইউ পি এ সরকারের আস্থাভোটে জয়ের জন্য সাংসদ কেনাবেচার ব্যাপক অভিযোগ শেষপর্যন্ত উইকিলিকস এর এই সংক্রান্ত কেবল এর প্রকাশ নিশ্চিত করে দিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়দলই উইকিলিকস এর কেবল প্রকশ এর ঘটনার গুরুত্বকে কমিয়ে দেখাতে সচেষ্ট। কেন কংগ্রেস নেতারা আমেরিকান কূটনীতিকদের বলতে গেলেন আস্থাভোটে জয়ের জন্য ভোট কেনার পরিকল্পনার কথা, আর কেনই বা তাদের ট্রাঙ্ক ভর্তি টাকা দেখালেন? এর স্পষ্ট কারণ এটাই যে তারা তাদের আমেরিকি প্রভুদের এটা দেখিয়ে নিশ্চিন্ত করতে চেয়েছিলেন যে ইউ পি এ সরকার যাতে আস্থাভোটে জিতে নিউক্লিয় চুক্তি যাতে নিশ্চিত করতে পারে, তার জন্য তারা যা যা করণীয় তা করছেন।
মন্ত্রীসভার আমেরিকাপন্থী অদলবদল
উইকিলিকস এর কেবলগুলি প্রকাশ করে দিয়েছে ভারতের আর্থিক ও বিদেশনীতির ওপর, এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রভাব কতটা।
৩০জানুয়ারী ২০০৬ পাঠানো আমেরিকান দুতাবাসের কূটনীতিক ডেভিড সি মালফোর্ড এর কেবলবার্তা অনুসারে দেখা যাচ্ছে তিনি লক্ষ্য রাখছেন ২০০৬ এর জানুয়ারীতে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং সরকার নিযুক্ত করছে কেবল এর মতে আমেরিকাপন্থী মুরলী দেওরাকে, সরিয়ে দিচ্ছে মনী শঙ্কর আইয়ারকে, যিনি কেবল এ বর্ণিত হচ্ছেন ইরাণ পাইপলাইন এর উচ্চকিত প্রস্তাবক হিসেবে।
কি বুঝছেন ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।