পর্ব-২
হাবিবুল্লা সাহেব মোটর সাইকেল যোগে নিফাতের বাড়ীতে এলো। লোকজনের নজর ছিলো হাবিবুল্লা সাহেবের দিকে,চেয়্যারম্যান সাহেব আসবে আর লোকজন তার দিকে তাকাবেনা তা হয় নাকি! বেশ আলোচিত চেয়্যারম্যান ভোট যে কেন্দ্রে পাবেনা সেই কেন্দ্রের মানুষজনের চোখের ঘুম হারাম হয়। দরিদ্র মানুষগুলো গ্রামে চোর প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে পাহাড়ার ব্যবস্থা করেছিল,কিন্তু সমস্তদিন হার ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর রাতে গ্রাম পাহাড়া দিতে মন আর চায়না। বিভিন্ন কারনে রাতের পাহাড়া ঠিকমতো চলেনা। এইবার নির্বাচনের আগে হাবিবুল্লা চোরপ্রতিরোধ কমিটিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন আর ঘুম জেগে চোর ধরতে হবেনা এইবার তাকে নির্বাচিত করলে নিশ্চিন্তে ঘুমতে পারবেন।
সাধারন মানুষগুলোর আর বেশীকিছু চাওয়া ছিলোনা, এইটুকুই শান্তি! বুল্লা চোর থেকে হাবিব কিন্তু বুল্লাটা বাদ দিতে পারেনাই তাই হাবিবুল্লা হয়ে জনগনের সামনে এলেন এবং চেয়্যারম্যান হওয়ার পর হাবিবুল্লা সাহেব হয়ে গেলেন। নিফাতের মা বাড়ীর গেটে পা দুটো লম্বা করে বসে পুত্রের শোকে জোরে জোরে কাঁদছে,শ্বাশুরীর পিছনে নিফাতের বউ চোখ দু'টো শাড়ীর আচল দিয়ে মুছে ফেলছে ! শোকে বাতাস বাড়ী হয়ে গেছে এইকি ঘটল! গ্রামের বউবেটি কান্নার শব্দে ভির জমেছে নিফাতের বাড়ীর গেটে। সবার চোখে চোখে পানি আর বিবেক বলছে কি এমন মানুষের ক্ষতি করেছে যে একটা তরতাজা জোয়ান চেংড়ারে খুন করে ফেলতে হবে। মানুষ কি এতই নিষ্ঠুর,এতই হিংস্র! সবার মনে মনে মানুষ জাতীর প্রতি সন্দেহ । শত ভিরের মাঝে এক চেংড়া এসে নিফাতের বউকে বলল'ভাবী চেয়্যারম্যান আসোছে,কোটে বসতে দিবেন?' নিফাতে বউ শ্বাশুরীকে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেল ।
নিফাতের বাবা বারান্দা থেকে আঙ্গিনায় একটা চেয়্যার নিয়ে নেমে এলো। চেয়্যারম্যান বাড়ীর ভিতরে এসে দাড়িয়ে রইল।
নিপাতের বাবা বসতে বলল চেয়্যারম্যানকে। চেয়্যারম্যান বসে এদিকে সেইদিকে তাকিয়ে বলল'শোন নিফাতের বাপ পুলিশ এসেছিলো?' নিফাতের বাপ মাথাটা নেড়ে হাঁ সুচক উত্তর দিলেন। চেয়্যারম্যান বলল 'পুলিশকে যা কওয়ার তা মুই বলে দিম তুই শুধু মোর সাথে থাকিস।
কে খুন করেছে তা সবাই দেখছে। এবার ওদের মাস্তানি বাড় করুম। আর বাড়ীতে কান্নাকাটি করে লাভনাই। মুই দ্যাখোচো কি করা যায়,সাক্ষীরা সবাই ঠিক আছে,কোন চিন্তা নাই। আজ বিকালে পুলিশ আসবে সবাই য্যান থাকে।
এখন মুই উঠনু। ' চেয়্যারম্যান বাড়ী থেকে বাহির হয়ে গেলেন। গ্রামের মানুষ আত্বীয় -স্বজন সবাই হতবাক এমন একটা ঘটনায়। নিফাতের চাচাতো ভাই মনু বলল"চাচা চেয়্যারম্যান যা কলো সব কাম করতে হবে। নিফাতের বাবা রমিজ বলল"হঁ সব শুন্ন এখন মামলা চালাতে টাকা লাগবেনা কে দিবে?" মনু বলল"এলা নিয়ে তোক চিন্তা করতে হবেনা চেয়্যারম্যান সোক ব্যাপার দেখবে।
" রমিজ আবার কিছুক্ষন চিন্তার পর পর বলল"কে খুন করছে,হারা কেউই দেখিনাই,কার নামে কেস করমু" মনু এক ধমক দিয়ে বলল"তুই এতোবেশী বুঝিস ক্যান? তোক যা কছে চেয়্যারম্যান তাই কর। " রমিজ বলল" বাবা মোর দুঃসময়ে তুই রাগ করিসনা। সারাজীবন সত্যের জন্য লড়াই করছি,আন্দাজ করে কারও নামেকেস করুম! আন্দাজ করে কিছু করা যে মহাপাপ। আর যাদের নামে কেস করছি সবাই তো অপরাধী নয়। বাবলা ভালো চেংড়া,এবং নিফাতের ভালো বন্ধু।
সে তাকে খুন করতে পারেনা। অন্যকেউ করেছে। "মনু ত্তেজিত হয়ে বলল"কে করছে ক!,সবাই জানে এবং দেখেছে বাবুল সহ সবাই জোড় করে মোটর সাইকেলে উঠে নিয়ে গেছিলো, তারপর নিফাত আর ফেরেনাই। তুই কি চাস বল তো চাচা?" রমিজ আবার একটা হাঁ নিঃশ্বাস ফেলে বলল" কি চাই তা তো মুই জানোনা,কে খুন করল সেটা পুলিশ বের করুক ওরা তো জনগনের সঠিক বিচার পেয়ে দিবে,এবং প্রকৃত খুনী বার করে ফাঁসী দ্যাখ। " ভাতিজার সাথে বেশ কিছু কথা কাটাকাঠি করে ঘরে ঢুকল।
মনু চেয়্যারম্যান এর পিছনে পিছনে চলে গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।