ইমানের পরীক্ষা হয় সংকট কালে। ইমানের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকুন।
বাংলাদেশের সরকারের অসাধারণ এক পদের নাম রাষ্ট্র দূত। সরকারী চাকরি হলেও এই পদধারীরা যেন সকল জবাব দিহিতার উর্ধ্বে। তাদের কারো কাছে জবাব দিহিতা করতে হয় না।
তাদের আছে মনের সুখে। তাদের পেছনে গরীব এই রাষ্ট্রের এতো বেশী টাকা খরচ হয় যে তাদেরকে হাতি বলে ডাকলেও বেশী বলা হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের এই রকম প্রায় ৫ ডজন হাতি রয়েছে। আমাদের দেশের আম জনতা জানেই না যে তাদের এই ৫ ডজন হাতির পেছনে কত কোটি টাকা জলে যাচ্ছে।
যে দেশের জনগণের সাধারণ মোটা চালের ভাত জুটে না সেই দেশের রাষ্ট্র দূত নামের শ্বেত হাতিরা পতাকা উড়িয়ে দামি মার্সিডিজ গাড়ী হাকায় বিদেশের রাজপথে।
এক জন রাষ্ট্র দূত যে ভাড়া করা বাসায় থাকেন সেই বাসার ভাড়া কোন দেশেই মাসে ৫ হাজার ডলারের নীচে নয়(৫ হাজার ডলার মানে সাড়ে তিন লাখ টাকারও বেশী)। মার্সিডিজের তেল খরচও মাসে হাজার ডলারের মতো। হাতিটি যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়ির ৫ হাজার ডলারের ভাড়া ছাড়াও পানি, বিদ্যুত, গ্যাস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডিশ টিভির বিলও সরকারকে বহন করতে হয়। রাষ্ট্রদূতের নিজের পকেট থেকে কোন খরচই করতে হয় না। তিনারা কেবল কষ্ট করে আহার গ্রহণ করেন।
এমন মজার জীবন আর কে যাপন করতে পারে? মন্ত্রীরা পারেন? এমপিরা পারেন? রাষ্ট্রপতি পারেন? প্রধানমন্ত্রী পারেন? পারেন না। কারণ তাদের জবাব দিহিতা করতে হয়। ৫ বছর পরপর ভোটের জন্য আম জনতার কাছে যেতে হয়।
রাষ্ট্রদূতদের বাসায় ফুট-ফরমাস খাটার জন্য ২ জন করে কাজের লোক দেশ থেকে আনা হয়। বলাই বাহুল্য এই কাজের লোকের বেতন-ভাতা মহান জন্মভূমি বাংলাদেশকেই বহন করতে হয়।
কেননা, সরকারী টাকায় যখন সব হবে তাহলে বাসার কাজের লোকের বেতন কেন হবে না?
থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, বিনোদন সব ফ্রি করার পরও আরো অনেক আয় আছে। সেই আয়ে কয়েক বছরেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয় এক জন রাষ্ট্রদূতের । ধারণা করা যেতে পারে ৩ টি দেশে রাষ্ট্র দূত থাকার পর এক জন লোকের ছড়িয়ে ছিটিয়ে হলেও ১০ কোটি টাকা হার্ড ক্যাশ জমা হয়। এই আয় মিনিমাম মাত্রা। যারা আরো কামাতে পারে তাদের টাকার পরিমান ২০/২৫ কোটি ছাড়িয়ে যায়।
এমন কোন সাবেক রাষ্ট্রদূতকে পাওয়া যাবে না যার ঢাকার অভিজাত এলাকায় বাড়ি নেই। তাদের বেতনের টাকা স্পর্শ করতে হয় না। সেগুলো ব্যাংকে জমতে থাকে ।
রাজধানী ঢাকা থেকে দূতাবাসগুলোতে রাষ্ট্রদূতের নাম বাজেট যায় ডলার হিসেবে। এর পর সেই ডলার ইচ্ছে মতো খরচ করেন রাষ্ট্র দূত মহোদয়রা।
কোন জবাব দিহিতার বালাই নেই। নিয়ম-নীতির বালাই নেই। প্রতি ২ বছর অন্তর ঢাকা থেকে অডিট বিভাগের লোকেরা যায় দূতাবাসে অডিট করতে । অডিট করতে গিয়ে ২/৩ দেশ ভ্রমণই তো অনেক পাওনা। তারপর আছে রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের কাছে আরো কত প্রাপ্তি।
অডিট কর্মীরা ধন্য। অডিট বিভাগের লোকেরা বিরাট টাকার খনির সন্ধান পায় দূতাবাসগুলোতে। পকেট ভর্তি টাকা আর মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে অডিট বাবুরা ফিরে আসেন দুতাবাস থেকে। রাষ্ট্রদূত মহোদয়রাও কোটি টাকার ঘাপলা ঠেকাতে অডিট বাবুদের জামাই আদরে রাখেন। থাকা-খাওয়া ফ্রি।
আসার সময় নগদ নারায়ন। বাংলাদেশে অডিট মানেই অভিনয়। আর দূতাবাসের অভিনয়টা হয় যাত্রাপালার মতোই । বিবেকের গান সেখানে কোন ফল দেয় না। সে কেবল ভোলা মন ভোলা মন করতে থাকে।
তাই বিরাট বিরাট অনিয়ম পেলেও অডিট বাবুরা টাকা খেয়ে বেমালুম চেপে যান।
এই অভাগা বাংলাদেশে দূর্নীতির কারণে একাধিক সাবেক রাষ্ট্রপতির জেল খাটার নজীর আছে। কিন্তু রাষ্ট্র দূতরা দুর্নীতির শাস্তির কোন খবর আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি। যাবেও না। তাদের কিছুই হবে না।
কেননা, তারা সব ধরা ছোয়ার বাইরে। ডঃ ফখরুদ্দিনের কেয়ারটেকার সরকারের সময় সংযুক্ত আরব আমীরাতের রাষ্ট্রদূত নাজিমুল্লাহ চৌধুরীর নামে একটি দূর্নীতির মামলা হয়েছিল। তার শেষ কি জানি না। দুর্বল যুক্তির কারণে সেই মামলাও হয়তো খারিজ হয়ে গেছে। দূতাবাসগুলো তো দেশের বাইরে ।
সেখানে সাংবাদিকের অবাধ যাতায়াত নেই। এমপি, মন্ত্রী, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের দূর্নীতির খবর বেতার-টিভি আর পত্রিকাতে ফলাও করে প্রচারিত হয়। রাষ্ট্রদূতরা যে দুর্নীতি করে তা কেউ কোন দিন জানতেও পারে না। এই খানেই তাদের সুবিধা। এই সুবিধাটা তারা পুরো মাত্রায় ব্যবহার করছেন।
এই সব কারণে বলা যেতে পারে যে, এক একটি রাষ্ট্র দূত যেন এক একটি দানব। সরকার এই দানবকে ক্ষমতা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার চাবিটি তাদের কাছে রাখেননি। তাই তো দেশের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকা তারা নয় ছয় করে খরচ করে চলেছে। যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ এক জগ কলের পানি পায়না পিপাসা নিবারণের জন্য সেখানে রাষ্ট্রদূতরা শ্যাম্পেন আর হুইস্কি নিয়ে উৎসব করে বেড়ান।
এখানে বলে রাখা ভাল যে, এক মাত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্র দূতরাই সকল জবাব দিহিতার উর্ধ্বে। পৃথিবীর আর কোন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এই রকম মহামানব নন। তারা একটি টাকা খরচ করতে চাইলেও অনেক নিয়ম-নীতির সিড়ি মাড়িয়ে খরচ করেন। তাদের সরকার তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখেন। সব চেয়ে বড় কথা তারা বিবেকবান।
দূর্নীতি করতে তাদের বিবেকে বাধে। বিবেক নামক জিনিসটা বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্র দূতের আছে কি?????
আমার প্রশ্ন হচ্ছে- এই ভাবে আর কত কাল? রাষ্ট্র দূত নামক দানবগুলোকে কেন নিয়ম-নীতির আওতায় আনা হবে না? যে দেশের মানুষের ২ বেলা ১ মুঠো মোটা চালের ভাত জুটে না সেই দেশের রাষ্ট্রদূতরা কেন দামী মার্সিডিজ হাঁকাবেন? সাধারণ টয়োটা চালালে কি তাদের শরম লাগে?? অনাহারে আর বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা গেলে শরম লাগে না??????????
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।