আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসিমুখে এসে বিমর্ষ মুখে বিদায়

বুধবার সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস মুজাহিদকে নিয়ে পুরাতন হাই কোর্ট এলাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর উদ্দেশে যাত্রা করে।
সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালে হাজতে আনা হয়। মুজাহিদকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় গেট দিয়ে ঢোকার পর ক্যামেরা হাতে এগিয়ে আসা সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।
মুজাহিদকে আনার ১৩ মিনিটের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের অন্য একটি মামলায় সেই হাজতে নেয়া হয় বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। এই সময় মুখোমুখি চেয়ারে বসে দুজন নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করেন।


প্রায় এক ঘণ্টা চলে তাদের কথোপকথন। ১০টা ৪০ মিনিটে মুজাহিদকে হাজতখানা থেকে বের করে নেয়া হয় ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায়। সালাউদ্দিন কাদের দুপুর পর্যন্ত ছিলেন সেখানেই।
মুজাহিদকে কাঠগড়ায় আনার আগেই এজলাসের সামনের সারিতে বসা ছিলেন তার তিন ছেলে আলী আহমেদ তাহকীক, আলী আহমেদ তাজবীদ ও আলী আহমেদ মাবরুর। এদের মধ্যে মাবরুর বাবার পক্ষে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দেন।


ট্রাইব্যুনালে আনার পরই ছেলেদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করেন মুজাহিদ। আত্মীয়-স্বজনের স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন। ট্রাইব্যুনাল এলাকায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত তাকে বেশ হাসিখুশি দেখা যায়।
পৌনে ১১টার পর বিচারকরা এজলাসে বসেন। ওই সময়ও থেমে থেমে ছোট ছেলে মাবরুরের সঙ্গে কথা বলছিলেন মুজাহিদ।


এজলাসে বসার পর বিচারকরা প্রথমে আলিমের আইনজীবীদের আবেদনের বিষয়ে একটি আদেশ দেন। এরপর শুরু হয় মুজাহিদের মামলা।
নিয়ম অনুসারে বেঞ্চ কর্মকর্তা মামলার নম্বর ঘোষণার পর ওবায়দুল হাসান সূচনা বক্তব্য দেন। মামলার নম্বর ঘোষণার পরই কিছুটা সামনে ঝুঁকে সেদিকে মনোযোগ দেন একাত্তরের আল বদর নেতা।
সূচনা বক্তব্য চলাকালেই এক পর্যায়ে চেয়ারের দুই হাতায় হাত রেখে হেলান দেন মুজাহিদ।

১১ টা ৩ মিনিটে রায় পড়া শুরুর পর আবার সামনে ঝোঁকেন তিনি। এর ১০ মিনিট পর কাঠগড়ার রেলিংয়ে এক হাত রেখে আরো বেশি ঝোঁকেন তিনি। তবে ১১টা ২০ এর দিকে একাত্তরে বদর বাহিনীর ভূমিকা শুরুর পর আবার হাত নামিয়ে নেন।
অভিযোগের বর্ণনা শুরুর পর নড়েচড়ে বসে গা ছেড়ে আবার চেয়ারের পেছনে হেলান দেন মুজাহিদ। তবে এ সময়ও দৃষ্টি ছিল এজলাসের দিকেই।

এরপর চেয়ারেই বারবার বিভিন্নভাবে বসে থাকতে দেখা গেছে তাকে।
এ সময় ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে গম্ভীর হয়ে যেতে থাকেন মুজাহিদ। রায় শেষ হওয়ার পর ১৫-২০ সেকেন্ড দম ধরে থাকেন তিনি।
রায়ের পর উঠে দাঁড়িয়ে ৬৫ বছর বয়সী মুজাহিদ বলে ওঠেন,  “এত বড় একটা অবিচার! ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই এ রায় দেয়া হয়েছে। ”
এরপর কাঠগড়া থেকে নামিয়ে পুলিশ তাকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মুজাহিদ আবার বলেন, “ইসলামী আন্দোলন চলবে।


এরপর জামায়াত নেতাকে পুনরায় ট্রাইব্যুনালের হাজতে নেয়া হয়। সেখানে সকাল থেকেই ছিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের।
সেখানে নামার পর আবার তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন মুজাহিদ। তবে এবার আর হাসতে দেখা যায়নি মুজাহিদকে। মুখোমুখি বসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা সালাউদ্দিন কাদেরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘক্ষণ কিছু একটি বিষয় বর্ণনা করেন মুজাহিদ।


বেলা ২টার পর ট্রাইব্যুনাল থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি নেতার সঙ্গে করমর্দন করে বিদায় নেন মুজাহিদ। হাজতের সামনে থাকা পুলিশ, ছেলে মাবরুর থেকেও বিদায় নেন তিনি।
যাওয়ার সময় বলেন, “হায়াত মউত আল্লার হাতে। ”
তবে এ সময় তাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের বিরুদ্ধে।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।