আজো আমি চাই কষ্ট পেয়ে কেউ কেউ নষ্ট হয়ে যাক এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র, সংলাপ, ঘটনা এমনকি দাড়ি-কমাও সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত। যদি কারও সাথে মিলে যায় তবে তা অনিচ্ছাকৃত কাকতাল মাত্র!
সামারার কথাঃ
উফ! ছুটির দিন ভেবেছিলাম একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠবো তাও হলনা। সকাল সকাল ই কে জানি দরজা ভেঙ্গে ফেলতেসে। আর ভাল্লাগেনা ‘আম্মু আমি বাসায় যাবো!’
দরজা খুলতেই রাহা হুড়মুড় করে ঢুকল।
-কিরে এত সকালে! কোন সমস্যা?
-ইয়ে না মানে হুম
-না মানে হুম কি? ঝেড়ে কাশ!
রাহা সত্যিসত্যিই একটু কেশে বলল ‘নাইম ফোন করেছিলো!’
-হুম তো?
-এম্নিই কি কি লেকচার আছে শনিবারে কোন আইটেম হবে নাকি খোঁজ নিলো।
-হুম শুধু এটুকুই নাকি আরও কিছু?
-না বলল খোঁজ খবর নিও। কন্টাক্ট রেখো!
-তুই কি বললি?
-বললাম ওকে
-হুহ ধান্দাবাজি বুঝলি সব মেয়ে পটানোর ধান্দাবাজি। তুই আবার লক্ষি মেয়ের মতো ফোন দিয়ে পুটুর পুটুর আলাপ শুরু করিস না যেন!
-একটু বাজাই না কয়েকদিন, কি বলিস?
-হুম অফকোর্স। ছেলে মানুষ যে কি চিজ ইউ ডোন্ট নো বেটার দেন মি।
-উরি উরি কয়টা ছেলে ঘুরিয়েছিস রে!
-শোন! ছেলে চিনতে ১০০টাকে ঘুরাতে হয়না, পাতিলের ভাত কয়েকটা টিপলেই হয়।
সব শালা এক!
-তাহলে আশিক?
-এর মাঝে ‘ও’ আসলো কিভাবে! ও কি আর সবার মতো নাকি, ও ডিফারেন্ট, আর এই কারনেই নিলা চুন্নিটা হিংসায় জ্বলে কীসব কথা ছড়িয়েছে দেখিস না। মানুষ এতো নোংরা হয় ছিঃ!
-আরে নাহ আমাদের দুলু অন্নেক ভালো, বাদ দে তো। বাট মুরগীটাকে কি করবো!
-শোন প্রথমেই পুতুপুতু করিস না, লাই পেয়ে যাবে। পাত্তাই দিবিনা একদম।
-যদি কেটে পরে!
-একটা ছেলে তোকে ফোন করার মানে হল ওর সব জামাকাপড় খুলে তোর হাতে দিয়ে পানিতে নামলো।
তুই যতক্ষণ না উঠাবি ততোক্ষণ সোনা বাবু কিছুই করতে পারবেনা!
-হিহিহি!
-হুহু আর শুন কয়দিন হ্যাংলামি করার পর মদন সোনা দেখবি ভেরভের করে এমনি সব বলা শুরু করবে, তখন ওর হিস্ট্রি অফ পাস্ট ইলনেস নিবি।
-যদি আগে কিছু থাকে?
-থাকলে তো আর শিফট ডিলিট করতে পারবিনা তখন ব্যাপারটা কম্পেন্সেট করতে হবে।
-আর যদি রাতুলের সাথে সম্পর্কটা নিয়ে কিছু বলে?
_ধুর! কাজিনের সাথে ওরকম টুকটাক সম্পর্ক থাকতেই পারে! আর এসব নিয়ে প্রবলেম থাকলে ফোন করতে মানা করে দিবি।
-না মানে তুই তো জানিস আমি অন্য মেয়েদের মতো না!
-দিনা ২মাস আগে বিয়ে করে বর ঢাকায় রেখে এখানে প্রতিদিন রবিন কে নিয়ে রিক্সায় ঘুরে, তুই তো আর তা করছিস না। শুন বলবি আগে একটা ভুল করেছিস আর না।
একা আছিস এইতো ভাল!
-তারপর?
-তারপর আর কি অপেক্ষা করবি হিরু সাহেব টোপ গিলে। শুন না ধরি না ছাড়ি কন্ডিশন ক্রিয়েট করবি, ছেলেরা খুব খায় এটা!
রাহা আমার গলা জড়িয়ে ধরল। এম্নিতে ওর সাথে খুব একটা ক্লোজ রিলেশন নেই, আসলে এখন সব মেয়ের সাথেই হাই হ্যালো সম্পর্ক। সারাদিন তো আশিকের সাথেই সময় কাটাই আর এখনকার ছেলেরা যা ঠিকমতো চোখে না রাখলে কখন কি করে বসে ঠিক নেই বাবা!
হোস্টেলে একাই থাকি রুমে, ভালো হয়েছে নাহলে এখানকার মেয়েদের যে বাজে মেন্টালিটি ছিঃ। কোন দুঃখে যে এই পচা জায়গায় পড়তে এসেছিলাম! ‘মাই ফুট’
তাও ভালো আশিকের সাথে সম্পর্ক হয়েছিল নাহলে যে কীভাবে থাকতাম গড নোস! যদিও নভেলের সাথে আগের সম্পর্কটা ভাঙ্গতে একটু সমস্যাই হয়েছিলো, সারাদিন ফোন করে মেয়েদের মতো ফেচফেচ করে কাঁদত আর বলত আমাকে ছাড়া নাকি বাঁচবে না।
শেষ পর্যন্ত তো ওর অত্যাচারে সিমই চেঞ্জ করতে হল। এত সিলি ছেলেটা! আরে বাবা লাইফে কাউকে জোর করে ধরে রাখা যায় নাকি! মুভ আউট ম্যান, মুভ আউট!
আশিক আর আমি ভালোই আছি, ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আর খুব্বি খুব্বি কেয়ারিং। আর হবেই না ক্যান আমি তো আর অন্য মেয়েদের মতো না, তাই না!
এই কথোপকথনের ১৩ ঘন্টা পূর্বে.........
আশিকের কথাঃ
নাইমের মুখটা দেখে সত্যিই মায়া লাগছে খুব, প্রথম প্রথম প্রেমে পরলে আসলেই ছেলেরা কতো অসহায় হয়ে যায় তাইনা!
নিজের স্কুল লাইফের কথা মনে পড়ে গেলো।
আহারে! কি অদ্ভুত ছিলো দিনগুলো। একসাথে প্রাইভেট পড়া, বৃষ্টিতে ভিজে একসাথে হেঁটে বাসায় ফেরা।
আনিলা আর আমাদের বাসা একই কোয়ার্টারে ছিল পাশাপাশি, একই ক্লাসে পড়তাম বলে মাঝেমাঝেই বইয়ের আদানপ্রদানটাও স্বাভাবিক। আমার কোন বইয়ে আমি ইচ্ছে করেই নাম লিখতাম না, কাজটা আনিলাই করতো। কি সুন্দর গুটিগুটি করে নাম লিখে দিতো! টেবিল ল্যাম্পের আবছা আলোয় লেখাগুলোর দিকে তাকালে কিংবা হাত বুলিয়ে দিলে বুক কেঁপে উঠত! মনে হতো এইতো ছুঁয়ে দিলাম আনিলাকে! বাস্তবতা হল ছোঁয়া তো দূরে থাক কখনো ভালোবাসার কথাটাও বলা হয়নি আনিলাকে। এরপর আমরা কোয়ার্টার ছেড়েছি বহু বছর, আনিলার কোন খবরই জানিনা। মাঝেমাঝে ভাবি আনিলাকে ভালোবাসার কথা না বলে কি খুব বড় ভুল করে ফেললাম? পরেই আবার ভাবি, নাহ! এইতো ভালো আছি সামারার সাথে।
নির্বাক অপলক চোখে চেয়ে থাকার কিছু স্মৃতি থাকনা! হয়তো আনিলাকে কিছু বলা হয়নি বলেই সেই দিনগুলো এখনো অদ্ভুত সুন্দর!
ওহ নাইমের কথা বলছিলাম, ও আমদেরই ব্যাচমেট রাহাকে ভালোবাসে কিন্তু কিভাবে কি করবে প্ল্যান ঠিক করতে পারছেনা তাই আমার দ্বারস্থ। আর ক্যাম্পাসে আমার যে ঈর্ষনীয় রোমান্টিক ক্যারিয়ার তাতে না এসেই বা কি করবে, নিলার সাথে টানা ৬ মাস প্রেম করার পর এখন তারই জিগরি সামারার সাথে উথালপাথাল প্রেম আমার!
অবশ্য একটু টেকনিক্যাল প্রবলেমে পড়েছিলাম, নিলার সাথে রিলেশনের সময় বেশ কয়েকবার ওদের হোস্টেলের পাশে একটা হোটেলে গিয়েছিলাম নিলাকে নিয়ে এটা অনেকেই জেনে যায়। তখন এটা নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামায়নি, রিলেশন থাকলে তো এরকম হতেই পারে তাইনা! কথা উঠে নিলার সাথে ব্রেকাপ হবার পর। আরে বাবা নিলার ক্ষুধা ছিল আর আমার ছিল অজানাকে জানার নেশা! এক সময় নিলার ক্ষুধা মিটে যায় আর আমারও ততদিনে অজানাকে জয় করা শেষ, তাই মিউচিয়ালিটির মাধ্যমেই ব্রেকাপ; ব্যাস শোধবোধ!
মেয়েরা তার প্রেমিক প্রবরের জন্য মানসিক এবং মূলত শারীরিক ভাবে যাচ্ছেতাই রকমের উদার হলেও প্রেম করার টাইমে ফেরেশতা চায়! তাই আমারও কিছুটা সময় লাগলো সামারার কাছে ফেরেশতা হতে। তারপর? তারপর আবার কি, আমাদের ট্রু লাভ চলছে, শুধু মাঝখান দিয়ে দুই জিগরি সামারা আর নিলার মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেছে এই আর কি! ক্যাম্পাসের ছেলেদের কাছে আমি এখন বস, ভালোবাসার জায়ান্ট! আর লেডিস হোস্টেলে সেই খারাপ আমি এখন কারো দুলাভাই কারো জামাইবাবা কারো বেটা কিংবা কিবি চিবি কুবা উবা হাবা টাইপ অদ্ভুত কিছু সম্পর্কের আত্মীয়।
নাইমের কথায় ফিরে আসি, ও নাকি ২ সপ্তাহ ধরে রাহার নাম্বার মোবাইলে নিয়ে ঘুরছে অথচ ফোন করতে ভয় পাচ্ছে। পিঠে একটা ঘুষি মেরে বললাম ‘গাধা শুন, একটা মেয়ের সাথে প্রেম করার সবচেয়ে কঠিন স্টেজ হল মেয়েটার ফোন নাম্বার যোগার করা!
নাইমের মুখটা বিষাদে ঢেকে গেলো ‘ওর নাকি ৫ বছরেরে এফেয়ার আছে ওর কোন কাজিনের সাথে’। নাইম বোধয় কেঁদেই দিবে!
আমি সারা রুম কাঁপিয়ে হেসে উঠলাম ‘বলিস কিরে! তাইলে আর তোর প্রেম ঠেকায় কে! একটা মেয়ে প্রেম করবে তার সবচেয়ে বড় সিগনাল হল তার ৫ বছরের প্রেম, তাও আবার কাজিনের সাথে! ডোন্ট ওয়ারী, লাগা লাগা!’
-যাহ্ কি বলস এগুলা!
-ও বিশ্বাস হয়না আমার কথা! গত সপ্তাহে রেবা তার বিদেশ পড়ুয়া কাজিন কাম বয়ফ্রেইন্ডের জন্মদিনের পার্টি দিলো আর সেটাতে দাওয়াত খেয়ে ২সপ্তাহ পরে সেই রেবার সাথেই প্রেম করে ফেললো নাহিদ! মাল যখন উড়াল দিবে তখন বুঝবি শালা কার কয় বছরের প্রেম!
-তাহলে?
-তাহলে আবার কি! অবশ্যই ফোন দিবি! আজকেই দিবি!
-যদি বলে নাম্বার কোথায় পেলে!
-বলবি অন্যদের কাছ থেকে নিছিস
-যদি রাগ করে?
-বলবি লাইফের কিছু কিছু সময় ভালোমন্দ উচিৎ অনুচিত ভেবে কাজ করা যায়না! পিক লাইন ম্যান পিক লাইন ছাড়তে হবে নাইলে পটবেনা।
-পিক লাইন কোথায় পাব?
-আরে এগুলা ইন্সটিংক্ট, একবার শুরু কর কথা বলা, ভয়টা কাটুক, একটু ফ্রি হ তারপর দেখবি কি ডায়লগ মারতেছিস, নিজেই টাস্কি খাবি।
-হেহেহে
-হেহেহে! শুন প্রথম দিনেই আবার প্রপোজ করে দিস না, আগে কথা বল, ফেইসবুক ফ্রেইন্ড হ আলবাল যা পোষ্ট দিবে তাতেই কইসা লাইকাবি, টুকটাক হুদাই প্যাঁচাল পারবি।
-ভালোবাসার কথা বলবো না!
-বেটা শুন এখনকার দিনে তুই যদি রাস্তার ফকিন্নিরেও প্রপোজ করিস তাহলে ফকিন্নিও ফার্স্টে বলবে, না সম্ভব না এইসবে এলারজি আছে!
-রাহা কি ফকিন্নি নাকি? কি বলিস এগুলা!
-আরে হাম্বা তোকে বুঝাচ্ছি ফিল্ডের অবস্থা কতো খারাপ! মানে আমাদের ধীরে আগাতে হবে।
-ও হুম।
-আর শুন, খুব কেয়ারিং শেয়ারিং মার্কা কথা বলবি। মেয়ে তার ব্যাক গ্রাউন্ড কতো ভালো, এখানে বাজে জায়গায় এসে কোনকিছুর সাথে কম্পেন্সেট করতে পারছেনা, আর সব মেয়ের হাজার হাজার বদনাম এইসব পেটপেট ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুনাবে তুই ও সোনামুখ করে সব শুনবি দরকার হলে দুইটা হজমি খেয়ে নিবি, কিন্তু ভাবটা এমন নিবি যে আল্লার দুনিয়াতে ও ছাড়া আর কোন মেয়েকেই তুই চিনিস না, ওকে ছাড়া সব ফাকা সব শেষ।
-শেয়ারিং কেয়ারিং এর কথা বলবো!
-তো ফোন করে কি হাদিস শুনাবি হারামি?
-উম!
-উম হুম না কাজে নেমে যা।
ফোন দে কথা বল যেভাবে বললাম এগুতে থাক এক টাইমে মেয়েই বলবে আমরা কেমন ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যাচ্ছি তাইনা, রাতে দেরি করে ঘুমালে জিসম খারাপ করবে বলে রাগ করবে, তুই সকালে টাইম মতো উঠছিস কিনা খোঁজ দ্যা সার্চ নিবে, কি খাইছিস শুনে তোকে রান্না করে একদিন খাওয়াবে কথা দিবে!
-হেহেহে। নাইমের সব দাঁত বেরিয়ে গেলো।
-যখন মেয়ে এরকম কুঁইকুঁই করবে তখন একদিন খুব গম্ভীর হয়ে বলবি আমরা হয়তো বন্ধুর চেয়েও বেশী কিছু, কিন্তু ভাবটা নিবি এই বেশী কিছুটা কি তা বুঝতে পারছিসনা! এরকম কয়েকদিন মোচড়া মুচড়ি করে যদি মেয়ে কিছু বলে তো ভালো নাহলে তুই ই ডায়ালগ মারবি ‘মে বি আই এম ইন লাভ উইথ ইউ! ব্যাপারটা কয়েকদিন ধরেই মনে হচ্ছিলো আর তুমি আমার বেস্ট ফ্রেইন্ড তাই না জানিয়ে পারলাম না। এখন দেখ তুমি ভেবে। তুমি না চাইলে আমরা নাহয় ফ্রেইন্ড ই থাকবো!’
-যদি বলে ফ্রেইন্ড ই থাকি!
-মক্কু শালা তখন তুই না চাইলেও মেয়ে তোর সাথে জোর করে প্রেম করবে!
নাইম একগাল হেসে সিগারেট এগিয়ে দিয়ে বলল ‘ বস, সামান্য নাজরানা’
সিগারেট টা ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম হাসলাম, ছেলে মেয়ে আবার কোনদিন বন্ধু হতে পারে নাকি!
পরিশিষ্টঃ
আমরা মনে প্রানে বিশ্বাস করি পৃথিবীতে এখনও শুদ্ধ প্রেম বিদ্যমান।
শাশ্বত ভালোবাসা টিকে থাকুক বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের শেষ দিন পর্যন্ত।
PEACE.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।