কিছুটা আমার কিছুটা তোমার.. মেলেনা তো কিছু এখন আর! আমাদের দেশের একটা খুব বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে সেটা হল,
শ্বশুর বাড়ী মধুর হাড়ী
আর এই কথাটাকে আমরা শ্যালক-শ্যালিকারা একটু ঘুরিয়ে বলি,
শ্বশুর বাড়ী মধুর হাড়ী
বেশি আসলে ঝাড়ুর বাড়ী!!!!
কিন্তু যত কথাই বলিনা কেন,আমাদের বাড়ীর জামাইদের ভাব কিন্তু কমে না। যতই দিন যাক না কেন আর যতই পুরনো হোক না কেন,শ্বশুর বাড়ী আসলে পড়ে নতুন জামাই ভাব তারা জীবনেও ছাড়ে না,এমনকি তাদের শ্বশুর মহাশয়রাও তাদের শ্বশুর বাড়ী গেলে এখনো নতুন জামাই ভাব নিয়া থাকে...!তো তাদের আর দোষ কি?...
ব্যাপারটা নিয়া আমি অনেক বার ইনডাইরেক্টলি বহুভাবে খোঁচা তাদের সব সময় দেই কিন্তু কোন লাভ হয় না উল্টা আমার উপরই রিয়াক্ট করে তাদের বউরা,ভাবখান এমন,
আমার জামাই চিরকালই নতুন,তুই শ্যালিকা সারা জীবন তাদেরকে নতুন দুলাভাই ভাববি!
আহারে...ঠিক আছে ভাবতে আমার সমস্যা নাই,আসলে জামাই আদর করতেও সমস্যা নাই কিন্তু যখনই শ্যালিকাকে বখশিশ দেয়ার সময় আসে তখনই দুলাভাইরা ডেট এক্সপারড ভাব নেয়!!তখন আর নতুন জামাই ভাব থাকেনা, তখন শুরু হয়,দুনিয়ার লেকচার!আজীব ব্যাপার!!!সে জন্য তাদের নতুন নাম দেয়ার গবেষনা করছি...
অতি পুরানো সেই স্টাইলটা ফলো করছিলাম কয়েকদিন যেমন,ভাইগ্না-ভাগ্নিদের বলি যে,তোদের বাপ মসজিদ থেকে জুতা নিয়া আসে ছি ছি...!কিন্তু এখন আর সেই স্টাইলটা কাজে লাগেনা মানে তেমন একটা আয় আর হয় না এই পদ্ধতিতে,মহা চালাক হয়ে গেছে দুলাভাইরা!তবে আজকে এই বিশেষ বিশেষ লোকদেরকে নিয়ে লেখার কারন হইল,আম-কাঠাল।
আম-কাঠালের সিজন আসলে শুধু যে বাচ্চারাই আম-কাঠাল খায় তা না আমাদের দেশের জামাইরাও খায় তাও আবার শ্বশুর বাড়িতে জামাই আদরের সাথে...!আর তাই,সে দিন
আম্মু আমাকে ডেকে বলল,শোন,শুক্র বার দিন আমি সারা দিন বাসায় আছি তোর আব্বুও থাকবে তাই ঠিক করছি,আমার সব বোন জামাই,ভাই-ভাবি এবং তোর সব বোন-জামাই আর ভাই-বোনদেরকে আম-কাঠালের দাওয়াত দিব,সারা দিনের জন্য। ''
শুনেতো আমার মাথায় হাত!!বলে কি আম্মু...
;আম্মু,আম-কাঠাল বাসায় বাসায় পাঠায় দিলেইতো হয় কি দরকার সবাইকে বাসায় ডাকা পাগল হয়ে যাব,প্লিজ এই চিন্তা বাদ দাও।
;সবার বাসায় যাওয়ার সময়টা কই আমার?আর অনেক দিন সবাই এক সাথে হওয়া হয়না এই উসিলায় এক সাথে হওয়া যাবে,ঝামেলা না করে সবাইকে ফোন করে দাওয়াত দে।
খাইছে...!ঘুরে ফিরে এই কাজটা আমার উপরই কেন আসে বুঝিনা!আপুদেরকে বলা যায় কিন্তু দুলাভাইদের বলতে গেলেতো দুনিয়ার ঝামেলা,কতো বাহানা দেখাবে সেগুলা সলভ করে জনাবদেরকে আসার জন্য হ্যা বলাতে হয়...কি যে কপাল!
খালা-খালুদেরকে আর আপুদেরকে বলা শেষ করে এবার ডায়াল করলাম বড় দুলাভাইয়ের নাম্বারে,সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করার পর জনাব বললেন,
;কি খবর ম্যাডাম গিন্নি,কেমনে কেমনে মনে পড়ল?
;শুধু শুধু তো আর আপনার কথা মনে পড়েনা,কোন দরকারেই মনে পড়ে সেটাতো জানেনই দুলাভাই...
;হ্যা হ্যা...তাতো জানিই,মহা ভি.আইপি শ্যালিকা আমার আর আমি হইলাম মুল্যহীন দুলাভাই আমারেকি আর এমনে এমনে মনে পড়ে মানুষের...
মনে মনে বলি,খাঁটি কথাই বলছেন,হাসি চেপে রেখে বললাম,
;যাইহোক দুলাভাই,আপনার জন্য একটা সুখবর আছে তাই ফোন দিলাম।
;কি সুখবর,নতুন ভায়রা ভাই আসতেছে নাকি?
;হুহ,আছেন তো খালি এই চিন্তাই,যাইহোক,শুনেন আপনার বড় খালা শ্বাশুরি আপনাকে শুক্র বারদিন তার বাসায় আম-কাঠাল খাওয়ার দাওয়াত দিছে পরিবারবর্গ,বুঝছেন?
;আলহামদুলিল্লাহ,বড়ই সুসংবাদ,কিন্তু আম-কাঠাল কি অরিজিনাল নাকি নকল?
আর যায় কই,এতক্ষনে একটা সুযোগ পেলাম ছক্কা মারার নো মিস...8-}
;আমরা কিপ্টা দেশের মানুষ না দুলাভাই,মেহমানদের আমরা খাঁটি জিনিস ই খাওয়াই,আম রাজশাহি থেকে আনা হইছে আর কাঠাল গাজীপুর থেকে। সেই রকম আয়োজন...
;তাই নাকি?বাপরে...!তা খালি কি আম-কাঠালই খাওয়ানো হবে নাকি আরও কিছু থাকবে?
;আরে দুলাভাই,আমরা হইলাম ঢাকার মানুষ,আমরা সেই সব বিশেষ অঞ্চলের মানুষদের মত নাকি?যে হুদা হানি খাওয়ায় মেহমান বিদায় করি,সব রকমের খাওয়ার ব্যাবস্থা থাকবে বুঝলেন।
কিছুক্ষন খুক খুক কেশে দুলাভাই বললেন,
;আমিতো ভুলেই গেছিলাম যে তোমার সাথে কথা বলতেছি,তুমিতো আবার সকাল বিকাল চিরতার পানি খাও!যাই হোক বাকি কথা শুক্র বারেই বলব।
আমি হাসতে হাসতে সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।
বেচারা দুলাভাই...হাহাহাহা
এবার ফোন দিলাম ছোট দুলাভাইকে,এ আরেক বিখ্যাত জেলার মানুষ। আমার ভাইয়ের মতে এই জেলার মানুষদের কে যদি আমেরিকার প্রেসি্ডেন্ট ও বানানো হয় তার পরেও মনু' বলা ছাড়বে না এরা...!!যাইহোক,জনাব কে সালাম দিয়ে দাওয়াতের কথা বলতেই তিনি বললেন,
;মোর কোন খালা শ্বাশুরি দাওয়াত দিছে বুঝলাম না?
আমি বললাম,
;আম্মের খালা শ্বাশুড়ি কয়ডা কন দেহি?
কিছুক্ষন আমতা আমতা করে বললেন,
;মনে ত হয় পাঁচটা
;পাঁচটা?!!মাত্র?কোন হিসাবে হইল কন দেহি?
;না মানে এই পর্যন্ত পাঁচ খালা শ্বাশুরির বাড়ি দাওয়াত খাইছি তো তাই বললেম আরকি...!
হায়রে আমার খাওইয়া দুলাভাই...আমার খালু দুনিয়াতে আর কাউকে খুজে পাইছিলনা মেয়ের জামাই বানাতে...আফসোস!!
;থাক থাক,আপনের আর শ্বশুর বাড়ি গুনা লাগবেনা,বুঝছি। আর আপনেরই বা কি দোষ কন,শত হইলেও খাবার ছাড়াতো আ্পনেরা বাড়ি থেইকা বাইর হইতে পারেন না তাই না?
;তুমি কি মোরে খোঁচা মারলা?
;আরে না আম্মে এইয়া কি কন,আমরা কি এমন মানুষ কন?আমরা কত সুন্দর দুলাভাই দাওয়াত দিয়া খাওয়াই তাও আবার আম-কাঠাল খালি টক আমড়া ত খাওয়াই না।
;হুম,বোজঝি,তোমার লগে আর কতা কইয়া কাম নাই,আর তোমারে যে কই ছিলাম সকাল বিকাল মধু খাইতে তাতো মনে হয় না খাও।
আমি বহু কষ্টে হাসি চেপে বললাম,
;খাই দুলাভাই খাই,কিন্তু মধুডা না পটুয়াখালির একজন আইনা দিছিল সেই জন্য মনে হয় উল্টা কাম করে...
;বোজঝি বোজঝি আর কথা কইয়া কাম নাই...
বেচারা আর বেশি কিছু বললনা,সালাম দিয়ে ফোন রেখে এবার আমি দুই জনকে ম্যাসেজ করলাম
'''অতি ভালো দুলাভাইরা আসার সময় মনে করে আমার ফিস টা নিয়া আসবেন কিন্তু, না হইলে নিজেদের জুতা সামলায় রাইখেন...''' ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।