আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্বশুর বাড়ির মিষ্টি !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! সন্ধ্যা পার হয়েছে সবে মাত্র । সময় হয়েছে । আমার বুকের ভিতরকার অস্বস্তিটা আর একটু বৃদ্ধ পেল । নিজের মনকে আবার বললাম সময় হয়েছে । যাবার সময় হয়েছে ।

আমি একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চললাম ইভাদের বাড়ির দিকে । এই তো দেখা যাচ্ছে একতলা বাড়িটা । দিনের বেলা হলে লালচে গেটটা দেখা যেত । এখন অন্ধকারে লালচে গেটটা আর একটু গাঢ় কালো দেখা যাচ্ছে । আমি ছোট গেটটা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতে গেলাম ।

গেটটা ধাক্কা দেওয়ার সময় টের পেলাম আমার হাত কাঁপছে । আরে এখানে কাঁপাকাঁপির কি হল ? নিজেকে আরো একবার বুঝানোর চেষ্টা করলাম । আমি তো অকাম করতে যাচ্ছি না । গার্লফ্রেন্ডের বাড়িতে যাচ্ছি । তাও আবার গার্লফ্রেন্ডের মায়ের আমন্ত্রনে ।

আর প্রথম বার যাচ্ছি তাও কিন্তু না । গত কালকেই আমি এ বাড়িতে এসেছি ! গতকাল স্কুল ছুটির পর ব্যাগ গুছাচ্ছিলাম । আমি এমনিতেও স্কুল ছুটির একটু পরে বের হই । স্কুল তখন মোটামুটি ফাঁকা হয়ে গেছে । আমি দরজা দিয়ে বের হতে যাবো ঠিক তখনই ইভা আমার সামনে এসে দাড়াল ।

আমি একটু অবাক হলাম । একটু চমকালামও বটে । এই মেয়ের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? এতো সাহস কেমনে হইল ? ইভার সাথে আমার একটা ভালবাসার সম্পর্ক রয়েছে এটা খুব কম মানুষই জানে । আমাদের সরাসরি কথাবার্তাও খুব কম হয় । ওকে চিঠি লিখি ও আমাকে চিঠি লেখে ! এভাবেই চলছিল ।

কিন্তু একেবারে এভাবে দরজা আগলে দাড়ানোর মানে কি ! যে কেউ দেখে ফেলতে পারে । আর স্যারেরাও এখনও যাই নি । যদি রাশেদুল স্যার দেখে ফেলে তাহলে তো আমার খবরই আছে ! আমি চোখ কপালে তুলে বললাম -এখানে কেন ? কেউ দেখে ফেললে উপায় আছে ? -একটু সমস্যা হয়েছে । -কি সমস্যা ? মফস্বলের প্রেমে হাজার রকম সমস্যা দেখা দেয় । তাই সারাক্ষন একটু টেনশনে থাকতে হয় ।

আমি আবার বললাম -কি সমস্যা হয়েছে ? -তোমার লেখা চিঠি গুলো সব আম্মুর হাতে পরে গেছে । -কি ? কি বললে তুমি ? কিভাবে ? -আমি চিঠি গুলো আলমারির ভিতরে রেখেছিলাম । -আলমারি ! চিঠি কেউ আলমারির ভিতর রাখে ? বেকুব মেয়ে ? ড্রয়ার ছিল না বাসায় ? -কি বললা তুমি ! -না । কিছু বলি নি তো ! বলেছি ড্রয়ারে রাখতে পারনি সোনা পাখি ! -দ্যটস বেটার ! আমি ভেবেছিলাম আলমারি কমন জায়গা । আম্মু হয়তো দেখবে না ।

আমি বললাম -এখন ? -আম্মু তোমাকে বাসায় যেতে বলেছে । -কি ? আমার মনে হল কেউ আমাকে দুইশ বিশ ভোল্টের শক দিল । ইভার মা আমাকে ওদের বাসায় যেতে বলেছে ! এটা কি বিশ্বাস যোগ্য কথা ! আমি বললাম -কখন যেতে বলেছে ? -এখনই চল । -এখন ? -হ্যা এখন । চল ।

ইভা আমাকে সাথে করে নিয়ে গেল । ইভাদের বাসায় যখন পৌছালাম তখন ওর মা নামাজ পড়ছে । আমি ড্রয়িং রুমে বসে অপেক্ষা করছি । কিছুক্ষন পর ইভার মা এসে হাজির হল । আমাকে অনেক কথা বলল ।

অনেক বোঝাল । আমরা যেটা করছি সেটা ঠিক করছি না । ইত্যাদি ইত্যাদি ! ভদ্রমহিলা এমন আস্তে আস্তে কথা বলছিল আর আমার থেকে একটু দুরে বসে ছিলো যে আমি বেশ কিছু লাইন ঠিক মত শুনতে পাইনি । ক্লাসে যখন স্যারের কোন কথা শুনতে পাই না তখন তো হাত উচু করে বলি যে স্যার আর একবার বলেন । এখানেও কি বলবো আন্টি একটু জোরে বলেন ।

কিছুশুনতে পাচ্ছি না । তার উপর এক মশা আমার হাতের উপর বসে আরাম করে রক্ত খাচ্ছে । একটু একটু হাত নাড়ালাম কিন্তু মশাটা উড়ে গেল না । আপন মনে রক্ত খেতে লাগল । মশাটা মনে হয় পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছে ।

আমি যে ওকে মারবো না সেটা ও বোধহয় খুব ভাল করেই বুঝেছে । কথা শেষ করে ইভার মা বলল -ঠিক আছে ! আমি কি বললাম মন দিয়ে শুনেছ তো ! আমি অতি ভদ্রভাবে মাথা নাড়িয়ে বললাম -জি আন্টি । একদম পরিস্কার বুঝেছি । -কাল সন্ধ্যার দিকে আবার এসো ! ইভা যেই চিঠি গুলো তোমাকে লিখেছিল ও গুলো নিয়ে এসো । কেমন ! -জি আন্টি ।

এই জন্যই আমার আজ ইভাদের বাসায় আগমন । ইভা আমাকে যত চিঠি লিখেছিল সেই গুলো নিয়ে হাজির হয়েছি ওর মার কাছে জমা দেওয়ার জন্য । আমি কাঁপা হাতেই ইভাদের কলিং বেলে চাপ দিলাম । কাল অবশ্য কলিংবেল বাজাই নি । ইভা সাথে ছিল তো ! তবে একটা ব্যাপার বেশ অবাক লেগেছে যে কালকে ইভা বেশ স্বাভাবিক লাগছিল ।

একটা মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ড কে নিজের মায়ের সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে যাচ্ছে অথচ কি শান্ত আর স্বাভাবিক । আশ্চার্য ব্যাপার ! ইভা মনে হয় আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল । কলিং বেল বাজার প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে বেরিয়ে এল । আমাকে দেখে একটু হাসল । যদিও বারান্দায় অন্ধকার ছিল তবুও ওর হাসি টা আমি ঠিকই দেখতে পেলাম ।

আমি একটু যেন ভরসা পেলাম । আসলে সত্যি কথা বলতে কি ইভার হাসি আমি যখন দেখি বুকের ভিতর কেমন একটা আনন্দ হয় । সেই আনন্দ সব ভয় ভীতি কে অতিক্রম করে ফেরে । আমি বারান্দায় উঠে এলাম । আমার হাতের ব্যাগটা দেখে ইভা চোখ কপালে তুলে বলল -এতো চিঠি লিখেছি ? আমি একটু হেসে বললাম -তাও তো সব আনি নি ।

ইভা কিছুক্ষন ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল -যে গুলো রাখতে বলেছিলাম সেগুলো রেখে এসেছো তো ? কালকের পর থেকে আমি আর ইভা দুজনেই খুব এক্সাইটেড ছিলাম । আমি ছিলাম এই কারনে যে ইভার মা খুব বেশি উচ্চবাচ্চ করে নি । সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছে । কালকে আবার আমাকে নাস্তাও খাইয়েছে । আর আজকে আবার বাসায় যেতেও বলেছে ।

সব মিলিয়ে একদম ফাটাফাটি অবস্থা । আর ইভা এক্সাইটেড ছিল এই কারনে যে আমার সাথে তার মা কি কথা বলল এটা জানার জন্য । সকাল বেলা পড়তে যাচ্ছি । ব্যাচে ঢোকার আগেই ইভা আমার পথ রোধ করে দাড়ালো । পুরো দিনের ভিতর এই সকাল বেলা টাই আমরা একসাথে দেখা করতে পারি ।

এক কথা বলতে পারি । আমাকে প্রথম প্রশ্নই করলো -আম্মু কি বলল ? -কি বলবে ? এই একটু বোঝালো । বলল এই বয়সে আমাদের এই কাজ করা ঠিক হয় নি । ইত্যাদি ইত্যাদি । -আর কি বলল ? -বলল তোমার চিঠি গুলো ফেরৎ দিতে ।

ইভা কিছুক্ষন ভাবলো । তারপর বলল -কবে ফেরৎ দিতে বলেছে ? -আজকেই । -আচ্ছা এসো তাহলে । আর সব কিন্তু ফেরৎ দিও না । প্রথম চিঠিটা কিন্তু রেখে দিবা না ! মনে থাকবে তো ? -আমি কাল রাতেই কিছু আলাদা করে রেখেছি ।

-আচ্ছা । তাহলে সন্ধ্যার পর পরই চলে এসো । কেমন ? -আচ্ছা । আর একটা কথা ! ইভা বলল -কি ? -তোমরা কি মিষ্টি কম খাও ? ইভা আমার কথা শুনে খানিকটা অবাক হল । -কেন এই কথা কেন বলছো ? -না মানে কাল যে পিঠা খেতে দিছিলে মিষ্টি কম ছিল ।

ইভা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল -শ্বশুর বাড়ির মিষ্টি পেয়েছ ? এতো মিষ্টি খেতে হবে না বুঝেছ ! -বুঝলাম । ইভা আবার আমাকে প্রশ্নটা করলো । -রেখে এসেছো তো ? -হুম ! -আচ্ছা এসো । -তোমার আম্মু কোথায় ? -আছে । এসো তো ।

ইভা আমার হাত ধরে ঘরের ভিতর নিয়ে এল । বারান্দায় খুব বেশি আলো ছিল না । ঘরের ভিতর এসে ইভাকে ভাল করে দেখলাম । বেশ ভালই প্রস্তুতি নিয়েছে তো । বেশ সুন্দর করেই সেজেছে ।

আমি বললাম -তোমাকে সুন্দর লাগছে । -বলেছে তোমাকে ? বস চুপ করে । ইভার মুখে কেমন একটা লজ্জা মিশ্রিত হাসি । ওর এই লজ্জা মাখা মুখটা ওর চেহায়ার সৌন্দর্য যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে । -সত্যি বলছি ! ওর মুখের লালিমা আর একটু যেন বাড়ল ।

-হয়েছে । চুপ । আম্মু এখনই চলে আসবে । বলতে বলতেই ইভার মা ঘরে ঢুকে পড়ল । ইস ! বড় বাঁচা বেচে গেছি ।

আর একটু হলে আমি ইভার হাত ধরতে যাচ্ছিলাম । ধরলে উপায় ছিল ? ইভাও একটু দুরে গিয়ে বসল । ইভার মা বলল -এসেছ ? -জি আন্টি । -কোথায় চিঠি গুলো ! -এই তো । আমি শপিংব্যাগটা আন্টির হাতে তুলে দিলাম ।

ব্যাগটার সাইজ দেখে আন্টি একটু অবাকই হলেন । একবার ইভার দিকে তাকাল আর একবার আমার দিকে ! -তোমরা কি এই কাজই করতে পড়াশুনা না করে ! আমি ইভার দিকে তাকিয়ে দেখি ও মিসমিস করে হাসছে । ইভার মা ইভার দিকে তাকিয়ে বলল -হাসবি না । থাপ্পর দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল -তোমার চিঠি গুলো দেখে মনে করেছিলাম কেবল তুমিই চিঠি লিখতে কিন্তু এখন দেখছি আমার মেয়েও কম যায় না ।

-জি আন্টি । ইভার দিকে তাকিয়ে দেখি ও অন্য দিকে তাকিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে । আমি মনে মনে বললাম শ্বাশুড়ী আম্মা সব চিঠিতো দেই ই নি । দিলে বুঝতেন ! তারপর খুব বিনয়ের সাথে বললাম -আন্টি আমি যাই তাহলে ! -না একটু বোস ! আন্টি চলে গেল । আমি ইভার দিকে তাকালাম ! চোখে জিজ্ঞাসা ! ইভা বলল -বস ! তোমাকে তোমার শ্বশুরবাড়ির মিষ্টি খাওয়াব ! -তাই নাকি !! ইভা চলে গেল ।

ফিরে এল একটু পরেই ! হাতে একটা ট্রে ! ইভা যখন ট্রে টা নিচে নামিয়ে রাখলো তখন দেখি ওখানে প্রার ৫/৬ রকমের মিষ্টি !! দই ! ইভা একটু হাসলো ! বলল -এবার খাও তোমার শ্বশুর বাড়ির মিষ্টি ! -আসল মিষ্টি কই ? ইভা ভুরু কুচকে বলল -আসল মিষ্টি মানে ? আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন । তারপর বলল -তোমাকে না একটা থাপ্পড় লাগাবো ! -লাগাও ! শ্বশুর বাড়ির মিষ্টি খেয়ে যখন বাইরে বের হয়ে এলাম মনের ভিতর একটা আনন্দ বয়ে যাচ্ছিল । মনে হল জীবনটা নেহত মন্দ না !! বিঃদ্রঃ গল্পটা খানিকটা সত্য ঘটনা নিয়েই লেখা ! অনেকদিন পর ইভার কথা মনে পড়ল ! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।