আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!
আজকের সকাল কি একটু অন্যরকম ? মনে হয় ! সকাল থেকেই লীনার তাই মনে হচ্ছে ! একটু অস্বস্থি লাগছে । কোন কাজ করেই যেন ঠিক শান্তি পাচ্ছি না ।
এই যে এখন এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ তার সামনে রয়েছে অল্প অল্প ধোয়া উঠছে, এই দৃশ্যটা লীনার খুব পরিচিত । কিন্তু আজকে এই দৃশ্যটা লীনার মনে ঠিক মত শান্তি দিতে পারছে না ! মনের ভিতর সব সময় একটা অস্থিরতা ঠিকই কাজ করছে । মনে হচ্ছে আজকে কি যেন হবে !
প্রতিদিন খুব সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে ও ।
সকাল বেলা সূর্য ওঠার আগেই এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ নিয়ে বারান্দায় বসে সকালের সূর্য কে উঠতে দেখে । সূর্যের আলোটা যখন দুর থেকে আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে আসে সেটার দিকে এক ভাবেই তাকিয়ে থাকে ও ! এক ভাবেই তাকিয়ে থাকে ! এই তাকিয়ে থাকার ভিতর একটা নেশার মত আছে ! আস্তে আস্তে আলোটা দুর থেকে ওর দিকে এগিয়ে আসে । দৃশ্যটা লীনার খুব ভাল লাগে । এই ভাবেই দিন শুরু হয় লীনার ।
কিন্তু আজকে এর ব্যতীক্রম হয়েছে ।
কারনটা অবশ্য ও নিজে নয় । রাতে জনির সাথে কথা বলতে বলতে বেশ খানিকটা দেরি এমনিতেই হয়ে গিয়েছিল তার উপর ফোন রাখার পরেও বেশ খানিকটা সময় জনির কথাই ভাবছিল । ইদানিং কি যে হয়েছে সারাটা সময় কেবল এই ছেলেটার কথাই মাথার ভিতর ঘোরাফেরা করে ! সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমুতে যাওয়া পর্যন্ত কেমন একটা চেহারাই চোখের সামনে ভাসতে থাকে । মাঝে মাঝে নিজের স্বপ্নের ভিতর এসেও হানা দেয় ছেলেটা !
কি আশ্চার্য ভাবেই না ছেলেটা ওর জীবনে ঢুকে পড়ল । প্রথমে ভার্চুয়াল তার পর বাস্তব জীবনে ।
আর আজকে পারিবারিক ভাবেও ও জীবনে ঢুকতে যাচ্ছে । এই জন্যই লীনার খানিকটা অস্বস্থি লাগছে ।
খানিকটা অস্থিরতা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার কারনে ঠিক মত ঘুম আসে নি । শেষ রাতের দিকে আবার একটা অদ্ভুদ স্বপ্নও দেখেছে ! কোন আগা মাথা নাই !
স্বপ্নে দেখলো লীনা জনির জন্য সব কিছু তৈরি করে অপেক্ষা করছে এমন সময় জনি এসে হাজির । সেদিনের মত হাফ প্যান্ট পরে ! তাও আবার লাল রংয়ের হাফ প্যান্ট ! লীনা তো থ !
মুখ দিয়ে কথা সরছিল না !
লীনার মা সাফ জানিয়ে দিল এ ছেলের সাথে কিছুতেই মেয়ে বিয়ে দিবে না ! যে ছেলে লাল হাফপ্যান্ট পরে শ্বশুর বাড়িতে আসতে পারে সে ছেলে নিশ্চই সমস্যা আছে ! জনি দরজা দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লো ! লীনা বারান্দায় দাড়িয়েই ওর চলে যাওয়া দেখছিল !
এমন সময় কোথা থেকে যেন পাড়ার পাগলটা এসে হাজির হল ।
জনির লাল প্যান্ট ধরে টানাটানি শুরু করে দিল ! জনিতো সেই প্যান্ট বাঁচাতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল !
এর পরেই লীনার ঘুম ভেঙ্গে যায় । বাইরে তখন বেশ অন্ধকার । লীনা উঠতে গিয়েও উঠলা না ! সামনের দিনের কথাই ভাবতে লাগলো ! কখন যে আবার চোখ লেগে এসেছিল টের পায় নি !
তাই সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে । ঘুম ভাঙ্গার পর অস্বস্থিটা যেন আরো বেড়েছে । সব কিছু যেন ঠিক মত হচ্ছে না ! কিছু কি উল্টাপাল্টা হবে ? এটা ভেবেই লীনার মনের ভিতর অস্বস্তিটা লেগেই রইলো !
এতো দিন জনির সাথে কেবল ওর নিজের পরিচয় ছিল আজকে ওর পুরো পরিবারের সাথে পরিচয় হবে ।
অবশ্য পুরো পরিবার বলতে ওর বাবা আর মা । তবে লীনার বাবা বাসায় নেই । গত দুদিন আগে গ্রামের বাড়িতে গেছে । এই সুযোগেই লীনা মাকে ধরেছে । কোন ভাবে যদি মাকে রাজি করানো যায় তাহলেই কাজ হয়ে যাবে ।
বাবাও ঠিক রাজি হয়ে যাবে ।
লীনার বারান্দায় বসে এইসব কথাই ভাবছিল অন্যমনস্ক হয়ে । কাপের কফি কখন ঠান্ডা হয়ে গেছে ঠিক টেরও পায় নি ।
-কি ভাবছিস ?
ঘুরে মা কে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো । একটু যেন লজ্জাও পেল মনে মনে ।
লীনার কেন জানি মনে হল ও মনে মনে এতোক্ষন যা ভাবছিল তার সবই ওর মা টের পেয়ে গেছে ।
-এখানে বসে আছিস কেন ?
-এমনি !
-তোর ঐ গেষ্ট কখন আসবে ?
মায়ের মুখে গেষ্টের কথা শুনে একটু লজ্জাই পেল ও ।
-হুম । আসবে । নামাজ পরেই আসবে ।
-আচ্ছা । কি কি রান্না করবো ?
-মা তোমার কিছু চিন্তা করতে হবে না । আমি সব কিছু করবো ।
-পারবি তো ?
-মা ? তুমি কি যে ভাবো না ?
মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো । মা এখনও তাকে বাচ্চাই মনে করে ।
সে যে বড় একটা অফিসে চাকরী করে এটা তার এখনও বিশ্বাসই হয় না !
-হ্যালো ।
-হুম ।
-কি খবর জান ?
-জান ?
-কেন ? তুমি আমার জান না ?
-শুনো ! তোমায় সেই বয়স নেই যে টিন এজ ছেলেদের মত নিজের গার্লফ্রেন্ড কে জান টান বলে ভাসায়ে দিবে !
-কি বল এই সব ! শুনো প্রেমিকরা কখনও বুড়ো হয় না ! তারা সদা তরুণ !
-হুম ! বুঝলাম ! শুনো, এদিককার খবর ভাল । তোমার খবর বল ?
ওপাশ থেকে খানিকক্ষন নিরবতা । লীনা বলল
-কি ব্যাপার ? চুপ করে গেলে কেন ?
-না মানে একটু কনফিউশনে পড়েছি ।
-কি রকম ?
-কি পরে আসবো তাই ভাবছি । প্রথম বারের মত হবু শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছি । পোষাকের একটা ব্যাপার তো আছে তাই না ?
-হুম তা তো আছেই ।
-কি পরে আসবো বলত ?
-কালকেই না আলোচনা হল !
-হুম ।
-কিন্তু ...
জনি কথাটা শেষ করলো না ।
-কিন্তু কি ?
-না । কিছু না । আসলে থ্রী কোয়াটারেই আমার বেশি সুবিধা ! এইটা পরেই আসবো কি না বুঝতে পারছি না !
-এই খবরদার বলছি । হাফ প্যান্ট পরে আসলে কিন্তু দরজা খুলবো না । পাঞ্জাবী পরতে বলেছিলাম না ? না পরলে নাই ।
তবে হাফ প্যান্ট না ।
-আচ্ছা । আচ্ছা । দেখি ।
-দেখা দেখির কিছু নাই ।
সিম্পল শার্ট প্যান্ট পরে আসো । কোন সমস্যা নাই ।
ফোন রাখার পরেও যেন অস্বস্থিটা কাটলো না । জনির বিশ্বাস নাই । কি জানি কি পরে আসে !
সকাল থেকেই লীনার প্রস্তুতি শুরু হল ! জনি বলেছিল গরুর ঝাল মাংস রাঁধতে ! এটা নাকি ওর ওর খুব প্রিয় ! প্রথমে লীনা একটু আপত্তি করেছিলে যে ডাক্তার জনিকে সাফ মানা করে দিয়েছে গরুর মাংস খেতে ! আর তাছাড়া লীনাদের বাসাও গরু খাওয়া নিষেদ আছে ! কিন্তু সেটা সম্ভব হয় নি ! ওর কথা শুনে জনি খানিকটা উদাস হলে বলল
-প্রথম বার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে যদি পছন্দ মত খাইতেই না পারলাম তাইলে এ জীবন রাইখ্যা কি লাভ ?
-মানে কি ?
-তুমি বুঝবা না !
-আরে কিসের সাথে কি মিলাচ্ছ তুমি ?
-কোন কিছু মিলাচ্ছি না ! থাক ! লাগবে না ! পুটি মাছ আর আলু ভর্তা রান্না কর ! আর কিছু লাগবে না !
-আচ্ছা ! বাবা ঠিক আছে ।
গরুর মাংস থাকবে ! আর কিছু ?
-আচ্ছা ! আচ্ছা ! বড় রুই মাছও আমার পছন্দ ! তবে থাক ! দরকার নাই ওত ঝামেলার ! গরূর মাংস যখন হয়েছে আর কিছু দরকার নাই ! আর দেশী মুরগী অনেক দিন খাওয়া হয় নাই ! থাক ! থাক ! এসবে দরকার নাই !
লীনা জনির কথা শুনে কেবল হাসলো ! কিছু বলল না !
-শুনো ! ঢাকাইয়া বিয়েতে এক প্রকার আইটেম বানায় না জর্দা না কি নাম ! একবার খেয়ে ছিলাম সেই কবে ! স্বাধটা কেমন যেন ! তুমি খেয়েছ?
-শুনো এতো ঢং করতে হবে না ! কি কি খাবা তাই বল !
জনি একটু হেসে তার লিষ্ট দিতে শুরু করলো !
-হ্যালো !
-হুম !
-রান্না শেষ ?
-হুম ! তুমি কোথায় ?
-তোমাদের এলাকায় ? কিন্তু বাসা খুজে পাচ্ছি না ! কি রংয়ের বাড়ি তোমাদের বল তো ?
-আরে বাবা ! আমি বাসায় নাম্বার দিয়ে দিলাম না তোমাকে ! বাড়ির রং দিয়ে কি করবা ?
-আরে কতক্ষন ধরে খুজতেছি ! পাচ্ছি না ! তাই তো বাসার রং জানতে চাচ্ছি !
-আচ্ছা ঠিক আছে । তুমি কোথায় আছ ?
-আরে একটা বড় ডাষ্টবিন আছে না ! বিকট গন্ধ বের হয় সেখান থেকে !
-আচ্ছা ! আচ্ছ ! আমি বুঝেছি তুমি কোথায় আছো ? তুমি ওখানেই থাকো আমি আসতেছি !
-একটু জলদি আসো !
লীনা আয়নায় নিজেকে ভাল করে দেখে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো ! দরজা খুলে সামনে যাবে তখনই দেখে সামনে জনি দাড়িয়ে ! এক হাতে এক গুচ্ছ রজনিগন্ধা ফুল অন্য হাতে মিষ্টির প্যাকেট !
লীনার বুকের ভিতর একটা ধাক্কার মত লাগলো । লীনা অনুভব করলো ওর বুকের ভেতর একটা তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে ! এই ছেলেটাকে দেখলেই এমন শুরু হয় ! আর এই ছেলে টা এমন ঢং কে কেন করে !
জনির ফুলে রগুচ্ছটা লীনার দিকে বাড়িয়ে বলল
-তোমার জন্য ! মাই ডিয়ার !
ফুলের তোড়াটা নিয়ে মিষ্টির প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে লীনা বলল
-ওটা কার জন্য ?
-আরে প্রথম বারের মত শ্বশুর বাড়িতে এসেছি ! মিষ্টি আনতে হবে না ? একটু ধরো তো !
-হুম ! বুঝলাম !
-এই একটু ধরত মিষ্টির প্যাকেট টা ! মনে হচ্ছে মিষ্টি ওয়ালা আমাকে দুকেজি মিষ্টি বেশি দিয়ে দিয়েছে ! এতো ভারী তো হবার কথা না !
এই বলে জনি মিষ্টির প্যাকেট টা লীনার হাতে দিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়লো ! লীনা পেছন পেছন আসতে আসতে দেখে জনি বসার ঘরের ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ছোফায় বসে পরেছে ! এমন একটা ভাব যেন কত দিনের পরিচিত সে । প্রতিদিনই এই বাসায় আসছে সে ।
-আর তুমি পাঞ্জাবী পরেছ ?
-দেখো নি তুমি ?
লীনা আসলেই প্রথমে লক্ষ্য করে নি ।
জনিকে সে দরজার সামনে আশায় করে নি । তারপর ফুল মিষ্টি সব মিলিয়ে দেখার খুব একটা সুযোগও পায় নি ! এরখন ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলো কালো রংয়ের কাজ করা একটা পাঞ্জাবী পরেছে । সাথে হালকা নীল রংয়ের জিনস !
-সুন্দর লাগছে তোমাকে ! তুমি না বললে যে পাঞ্জাবী পরবে না ! এইটার ইতিহাস ভাল না !
-তাই ভেবেছিলাম ! কিন্তু পাঞ্জাবী না পরে পারাও গেল না । শ্বশুর বাড়ি আসার আদর্শ পোষাক হচ্ছে পাঞ্জাবী !
-হুম ! বুঝলাম !
লীনা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু লীনার মা চলে আসাতে বলতে পারলো না । জনিকে পরিচয় করিয়ে দেবে কি জনি নিজেই এগিয়ে গেল ।
লীনাকে কোন কথা সুযোগই দিল না ! জনির ওর মায়ের সাথে এমন ভাবে কথা শুরু করে দিল যেন কত দিন ধরে চিনে তাকে ।
জনি আর ওর মায়ের কথা বলা টা লীনা অনেকক্ষন দাড়িয়ে দেখলো । কি দেখলো ও নিজেও বলতে পারবে না কিন্তু দেখতে বেশ ভাল লাগছিল !
জামাই তার স্বাশুড়ি সাথে কথা বলছে । তার স্বাস্থের খোজ খবর নিচ্ছে । ঠিক যেমন তার বড় দুলাভাইয়েরা মায়ের খোজ নেয় একদম সেই রকম !
লীনা কেবল অনুভব করলো ওর সারা মন জুরে একটা আশ্চার্য ভালার অনুভুতি বয়ে গেল ।
হঠাৎ করেই ওর সব কিছু ভাল লাগতে শুরু করলো আর সাথে সাথে একটু লজ্জাও করতে শুরু !
-লীনা ! এই !
-হুম ! মা !
-এই ভাবে দাড়িয়ে কি ভাবছিস ?
-কই কিছু না ।
-টেবিলে খাবার দে !
-হুম দিতেছি !
লীনা খানিকটা কাঁপা পায়ে রান্না ঘরের দিকে পা দিল !
ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।