"Why, sometimes I've believed as many as six impossible things before breakfast.” - Alice Kingsleigh (from Alice in wonderland) ইদানিং সব ছেড়েছুড়ে দেশে চলে যেতে ইচ্ছে হয় শুধু। কিছুই আর ভালো লাগেনা । ভেবেছিলাম হয়তো একটা ভেকেশান-এ গেলে এই অস্থিরতাটুকু কেটে যাবে। অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি ম্যানেজ করে চষে বেড়ালামও আমেরিকার মিড ওয়েস্টের বেশ কিছু স্টেইটসের বেশ কিছু শহর। দীর্ঘ ১২ ঘন্টা ড্রাইভ করে শুরু করলাম ওবামার শহর শিকাগো থেকে।
চোখে মুখে এমন একটা ভাব করলাম যেন আহ্লাদে গলে যাচ্ছি। শহরের চিপায় চিপায় অলিতে গলিতে যেইখানে যা দেখেছি, তার সামনে পোজ মেরে ছবি তুলেছি - শয়ে শয়ে ছবি !! আসলে, এখন কেন জানি যা-ই দেখি সব একই রকম মনে হয় । একই রকম রাস্তাঘাট, একই রকম রাস্তার নাম, একই সব স্টোর ঘুরেফিরে । কিন্তু এতো নাচানাচি করে সবাইকে ১২ ঘন্টা ড্রাইভ করিয়ে, এখন যদি ভুলেও এই কথা বলতাম, মাইর মনে হয় একটাও মাটিতে পরতোনা। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিলো, কিন্তু মুখে একটা নূরানী হাসি ঝুলিয়ে রেখেছিলাম।
উইলিস টাওয়ারের নিচে - আমি
শিকাগোর বেকুবগুলি Pioneer Court-এ ২৬ ফিট উচু মেরলিন মনরোর এক স্কাল্পচার বানিয়েছে তার "The Seven Year Itch" ছবিটির সেই বিখ্যাত ম্যানহোল পোজে । এখন সেইটা নিয়ে দুনিয়ার অন্য বেকুবরা ঝগড়া-ঝাটি শুরু করে দিয়েছে। একদলের অভিযোগ - সেই মুভীতে মেরলিন তার প্যান্টি দেখাননি, কিন্তু এই স্কাল্পচারের প্যান্টি দেখা যাচ্ছে কেন? অন্যদল তেড়ে এসে বলছে - ওই মিয়ারা আপনারা তো স্ক্রীনের সামনে থেকে দেখেছেন, পিছনের থেকে দেখলে অবশ্যই তার প্যান্টি দেখা যেত। তাছাড়া সত্যিকারের মেরলিন তো আর ২৬ ফিট ছিলেন না! যাই হোক, সেই মেরলিনকে দেখতে দলে দলে মানুষ ভীড় করেছে Pioneer Court-এ। সবাই হাসিমুখে মেরলিনের স্কার্টের নিচে ছবি তুলছে।
আমিও "এই ছবি না তুললে মারা যাব" এমন একটা ভাব করে এক ডজন ছবি তুলে ফেললাম ।
মেরলিনের সেই স্কাল্পচার
১২ ঘন্টা ড্রাইভের পর হোটেলে চেক-ইন করে যেইনা একটু গা এলিয়েছি - সাথে সাথে সবাই হা হা হা করে দৌড়ানি দিলো - এক্ষুনি নাকি 'Cloud Gate' স্কাম্পচারটা দেখতে যেতে হবে, নাহলে নাকি শিকাগো না এসে শিমুলগাছের ডালে ঝুলে পরা ভালো ছিল। সাথের পোলাপাইন 'Source Code' মুভিটা যারা দেখেছে, তারা যেই চিপাতেই যাচ্ছে, সেখানেই মুভির অমুক কিংবা তমুক সিনের সাথে মিল পাচ্ছে। মুভির শেষ সিনটা নাকি সেই বিখ্যাত 'Cloud Gate' -এর সামনে ছিল, যাকে মানুষ আদর করে Bean ডাকে। অনেক কষ্টে মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টাএ ১০০ থেকে উল্টা দিকে গুনা শুরু করলাম ।
আমার মুখে ১,২ শুনে সাথের একজন হেড়ে গলায় Feist- এর 1 2 3 4 গান ধরলো। ওর দিকে লক্ষ্য করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা এক ৩৪-২৮-৩২ ভাইটালের এক সমকামী যুবক জাস্টিন বেইবার মার্কা মুচকি হাসি দিয়ে গেল । এরপর অবশ্য বন্ধু আমার সারা রাস্তা কোন গান ধরেনি। একফাকে আমাকে কানেকানে জিজ্ঞেস করলো -"সাদা প্যান্ট পরাটা কি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল দোস্ত?"। আমি বললাম -"নাহ! তবে গলায় ওড়না পরাটা মনে হয় slightly ভুল ধারনার সৃষ্টি করছে।
"
ক্লাউড গেটে শিকাগো স্কাই-লাইনের প্রতিফলন
সারাদিন টোইটোই করে ঘুরলাম নেভী পিয়ার , মিল্লেনিয়াম পার্ক , বাকিংহ্যাম ফাউন্টেইন , জে প্রেটস্ক্যার পেভিলিয়ন সহ শহরের যত অলিগলি কানাগলি - সে এক ইতিহাস। সাথে চলতেই থাকলো শপ-হপিং। আমাদের জেনেরেশন-Y এর মেট্রোসেক্স্যুয়াল ছেলেরা কিন্তু শপিং করতে মেয়েদের থেকে কম যায়না মাশাল্লাহ । আমার নূরানী হাসির স্টক ততক্ষনে শেষ। রাতে তিক্ত-বিরক্ত-ক্লান্ত আমি হোটেলে ঢুকে শওয়ার নিয়েছি কি নেইনি, রুমের দরজায় ঝুলানো 'ডু নট ডিস্ট্যার্ব' এর তোয়াক্কা না করে, প্রায় দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পরলো পঙ্গোপালের দল - 'জলদি চল'।
আমি মিনমিন করে বললাম - 'এই মাত্রই তো ফিরলাম, মানে মানে ইয়ে - কালকে চললে হতোনা?' আমার দিকে জোড়া জোড়া চোখ যেভাবে তাকালো, নাগিনের সর্পদৃষ্টি মনে হয় এর থেকে কম পয়সোনাস ছিল । বুঝলাম, আমি মাইনকা চিপায় পরেছ, কথা বলে আর আয়ুক্ষয় করে লাভ নেই। গন্তব্য - উইলিস টাওয়ার ( আমাদের অতি পরিচিত সেই সিয়ার্স টয়ার নামে আগে যেটা পরিচিত ছিল) । ১০৮ তালা এই জিনিসে যাওয়ার কোন ইচ্ছেই আমার ছিলো না, এর থেকে আমাদের সিএন টাওয়ার অনেক উঁচা-লম্বা জিনিস। আর তাছাড়া বিল্ডিং এর উপরে উঠে 'ওয়াও' 'ও মা'গড' করা আমার কাছে খুবি খ্যাত কাজ মনে হয়।
কই প্লেনে ফ্লাই করার সময় তো কেও এই রকম আদেখলামি করেনা! প্রায় ৪০ বছর আগে যখন এই জিনিস পয়দা হয়েছল, তখন হলে নাহয় একটা কথা ছিল। যাই হোক এই উইলিস টাওয়ারের ৯৫ তামায় নাকি "The Signature Room at the 95th® " নামে একটা ককটেইল লউঞ্জ আছে - সেইখানে গিয়ে পার্টি না করলে নাকি আমাকে সেই ৯৫ তালা থেকে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হবে । এমনিতেই আমার মাথা তখন ভনভন করে ঘুরছে, এর উপরে এই প্ল্যান শুনে ঢোক গিললাম। আজকে হয় মারা যাবো, নাহয় অপঘাতে মৃত্যু হবে।
Signature Room at the 95th-থেকে তোলা শিকাগো শহর
সে যাই হোক, দুদিন পর মরোমরো অবস্থায় রওনা দিলাম আয়ওয়া সিটির উদ্দেশ্যে - সেখানে নাকি এক কটেজে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর কিছুদিন ছিলেন।
মনে পরে গেল, কেন মনটা এতো খারাপ - মনে পরে গেল দেশের কথা।
৫টা বছর পর গত ডিসেম্বরে দেশে গেছিলাম। যাওয়া-আসা বাদ দিয়ে মাত্র ১৮ দিন ছিলাম - এর থেকে বেশি ছুটি পাইনি। স্বপ্নের মত কেটে গেছে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভেকেশন। ভেবেই পাইনি, মানুষ কেন আমার দেশটাকে এত খারাপ বলে! হয়তো যানজট আছে, ময়লা আছে, গৃহহীন মানুষ আছে - কিছু আরো কিছু আছে যেটা প্রচন্ড টানে আমাদের মত ঘর-ছাড়াদের।
বহু বছর আগে কোন সেই টিন-এজ কালে দেশ ছেড়েছি; আসলেই ছেড়েছি কি? আমি সত্যি অসম্ভব মজা করেছি ঢাকাতে। ফেরার পর থেকে গরম মাথা কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছেনা। সত্যিই ভাবছি ফিরে যাব এক্কেবারে। দেশ কি আমাকে ফিরিয়ে নেবেনা?? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।