সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা খয়রাতি মিয়া (৭৫) ১৯৭৮ সালে ১০টি ভেড়া নিয়ে খামার শুরু করেন। সে সময় একটি তামাক কারখানা থেকে সদ্য চাকরি ছেড়েছেন। সংসারে সাত ছেলেমেয়ে ছাড়াও তাঁরা স্বামী-স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা-বাবা ছিলেন। এতগুলো মুখে খাবার তুলে দেওয়া সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু সেই কঠিন কাজটি পেরেছেন তিনি।
ভেড়ার খামারই তাঁর পায়ের নিচে শক্ত মাটি তৈরি করে দিয়েছে।
খয়রাতি মিয়া ভেড়া বিক্রি করে ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পাঁচ ছেলের তিনজনকে দোকান করে দিয়েছেন। বিয়ে দিয়েছেন এক মেয়েকে। টিনের ঘরও এখন পাকা দোতলা হয়েছে।
খয়রাতি মিয়ার আশপাশের এলাকায় অনেক প্রবাসীর বসবাস। প্রবাসে আয়ের টাকায় তাঁদের সচ্ছলতাও এসেছে। খয়রাতি মিয়া বিদেশ জাননি, তাঁর কোনো ছেলেকেও পাঠাননি। তবে বিদেশের আয় দেশে বসেই করছেন। খরচ বাদ দিয়ে এখন প্রতি মাসে তাঁর আয় হয় ৫০ হাজারর টাকার মতো।
সীতাকুণ্ডের কালুশাহ মাজার এলাকায় সমুদ্রতীরে বেড়িবাঁধের ওপর কিছু জমি ইজারা নেন খয়রাতি মিয়া। সেখানেই তাঁর ভেড়ার খামার। বর্তমানে খামারে আছে ১৭৫টি ভেড়া। খয়রাতি মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালের দিকে সাগরপারে প্রায় ৬০ শতক জায়গায় খামার শুরু করি। সাত হাজার টাকা খরচ করে কিনি ১০টি ভেড়া।
খামারের নাম দিয়েছিলাম সীতাকুণ্ড আদর্শ ভেড়ার ফার্ম। ’
খয়রাতি মিয়া বলেন, ছয় মাস পরপর ভেড়া বাচ্চা জন্ম দেয়। এখন খামারে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ভেড়া বাচ্চা দিচ্ছে। একেকটি ভেড়া বিক্রি হয় তিন থেকে ১৫ হাজার টাকায়। প্রতিমাসে গড়ে সাতটি ভেড়া বিক্রি হয়।
একজন কর্মচারীর পেছনে খরচ হয় সাত হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ৫৫ হাজার টাকার মতো। ’
খয়রাতি মিয়ার খামারে ভেড়া দেখাশোনা করার জন্য একজন কর্মচারী আছে। খামারের সব কাজ তিনি নিজে করতে ভালোবাসেন। তবে তাঁর এক ছেলে এখন সহযোগিতা করেন তাঁকে।
খয়রাতি মিয়া বলেন, যে কেউ চাইলে লাভজনক এই খামার করতে পারেন। খরচ খুব কম। তবে তুলনামূলকভাবে উঁচু ও পরিচ্ছন্ন জায়গায় ভেড়া পালন করতে হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, খয়রাতি মিয়ার খামারটি সাগরপারে হওয়ায় তেমন রোগ দেখা দেয় না। তার পরও বছরে তিনবার কৃমির ওষুধ, একবার পিপিআর টিকা দিতে হয়।
এতে প্রতিটি ভেড়ার পেছনে ওষুধে ব্যয় হয় ৭০ টাকা।
এই বয়সেও স্বপ্ন দেখেন খয়রাতি মিয়া। ঋণ সহায়তা পেলে তাঁর ভেড়ার খামার বড় করবেন তিনি। তাঁর কথা, মানুষ চাইলে কী-না হয়!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।