সব সফল পুরুষের পেছনেই নাকি একজন নারী থাকেন। এদিক থেকে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে ‘ভাগ্যবান’ই বলতে হয়। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির জীবনে শুধু একজন নয়, অনেক নারীই এসেছেন। কেউ এসেছেন প্রকাশ্যে, কেউবা থেকে গেছেন লোকচক্ষুর আড়ালে।
জীবনে একবারই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন ৫২ বছর বয়সী ম্যারাডোনা।
সেটা ১৯৮৪ সালে। ক্লদিয়ার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি ঘটে ২০০৪ সালে। দুজনের সম্পর্কের অবশ্য তখনো ইতি ঘটেনি। পরের কয়েক বছরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখা যায় ম্যারাডোনা ও ক্লদিয়াকে। ২০০৬ বিশ্বকাপও একসঙ্গে উপভোগ করেন তাঁরা।
ক্লদিয়া ম্যারাডোনাকে উপহার দিয়েছেন দুটি কন্যাসন্তান—দালমা ও জিয়ান্নিনা।
ক্লদিয়াকে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই ইতালীয় তরুণী ক্রিস্টিনা সিনাগ্রার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ম্যারাডোনা। তিনি তখন ইতালীয় ক্লাব নাপোলিতে খেলেন। তাঁদের প্রেমের ফসল হিসেবে ১৯৮৬ সালে জন্ম নেয় এক পুত্রসন্তান। নাম রাখা হয় ডিয়েগো সিনাগ্রা।
সেই সন্তানকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হননি ম্যারাডোনা। ব্যাপারটা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পিতৃত্ব নিশ্চিত করতে ম্যারাডোনার ডিএনএ পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন আদালত। তবে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি তাতে সায় দেননি। এ অবস্থায় ১৯৯৩ সালে আদালত ঘোষণা দেন, সিনাগ্রা ম্যারাডোনারই সন্তান।
দেরিতে হলেও সিনাগ্রাকে অবশ্য ছেলে হিসেবে স্বীকৃতি দেন ম্যারাডোনা, ২০০৪ সালে আদালতে স্ত্রী ক্লদিয়ার সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের শুনানি চলার সময়। ২৬ বছর বয়সী সিনাগ্রাও এখন ফুটবল খেলেন। ইতালি অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে অভিষেকও হয়েছিল ম্যারাডোনাপুত্রের।
ক্লদিয়ার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর দীর্ঘ সময় ম্যারাডোনার সঙ্গে অন্য কোনো নারীকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তবে অনেককে নিয়েই ছিল গুঞ্জন।
তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আর্জেন্টাইন মডেল মারিয়া বেলেন ফ্রান্সিস, সিলভিনা লুনা ও ওয়ান্দা নারা। ২০১০ সালের গোড়ার দিকে আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের নায়ক স্বীকার করেন, তাঁর জীবনে নতুন একজন এসেছে, নাম—ভেরোনিকা ওজেদা। ওই বছরই ভেরোনিকার মা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় সে সন্তান আলোর মুখ দেখেনি।
ভেরোনিকার গর্ভেই এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেয় ম্যারাডোনার দ্বিতীয় পুত্র ডিয়োগো ফার্নান্দো।
কিন্তু এই সন্তানকে কেন্দ্র করেই চুকে গেছে তাঁদের সম্পর্ক। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমের খবর, এই সন্তান কিছুতেই নিতে চাচ্ছিলেন না ম্যারাডোনা। শেষ পর্যন্ত ভেরোনিকার জন্ম দেওয়া সন্তানের পিতৃত্ব মেনে নিলেও ছেলেকে জনসম্মুখে আনার ব্যাপারে আপত্তি ছিল ম্যারাডোনার।
সন্তানকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে আদালতেরও দ্বারস্থ হন তিনি। সফলও হন।
আদালত নির্দেশ দেন, এক বছর আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যম ম্যারাডোনার ছেলের ছবি প্রকাশ করতে পারবে না। কিন্তু সম্প্রতি ওই শর্তটা ভঙ্গ করেছেন ভেরোনিকা। টুইটারে পোস্ট করেছেন ছেলের ছবি। ক্ষুব্ধ ম্যারাডোনা আইনজীবীর মাধ্যমে সাবেক প্রেমিকাকে উকিল নোটিশও পাঠিয়েছেন।
ভেরোনিকাকে ‘সাবেক প্রেমিকা’ বলতে হচ্ছে।
কারণ, এরই মধ্যে নতুন একজনকে জুটিয়ে ফেলেছেন ম্যারাডোনা। নাম, রোসিও ওলিভা। যাঁর বয়স ম্যারাডোনার বয়সের অর্ধেকেরও কম! গত মে মাসে ২২ বছর বয়সী ওলিভাকে সঙ্গে নিয়ে দুবাই থেকে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে ফিরছিলেন ম্যারাডোনা। উদ্দেশ্য, সাবেক প্রেমিকা ভেরোনিকার গর্ভে জন্মানো তিন মাসের সন্তান ডিয়েগো ফার্নান্ডোকে প্রথমবারের মতো দেখা। বিমানবন্দর থেকেই ম্যারাডোনার পিছু নেন আলোকচিত্রীরা।
কিছু দূর যাওয়ার পর অতিষ্ঠ ম্যারাডোনা গাড়ি থেকে নেমে পড়েন এবং কুড়িয়ে পাওয়া পাথর ছুড়ে মারেন সাংবাদিকদের। কাছে থাকা একজনকে নাকি লাথিও মারেন।
ম্যারাডোনা-ওলিভার পরিচয় ২০১০ সালে। তবে তখন দুজনের সম্পর্কটা খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হয়নি। কারণ, প্রেমিকা ভেরোনিকার সঙ্গে বেশ কাটছিল ম্যারাডোনার।
তবে কয়েক মাস আগে দুবাইয়ে তাঁদের মধ্যে নতুন করে যোগাযোগ হয়। ভেরোনিকার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে সুযোগটা এবার হাতছাড়া করেননি ম্যারাডোনা।
বয়স মাত্র ২২ বছর, অথচ এরই মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক কুড়িয়েছেন ম্যারাডোনার নতুন প্রেমিকা ওলিভা। তাঁর সাবেক প্রেমিক পাবলো গিরন এখন কারাগারে। রিবার প্লেটের এক সমর্থককে হত্যা করায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে তাঁর।
এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি আর্জেন্টাইন একটি ম্যাগাজিনে ওলিভার কিছু ছবি প্রকাশিত হয়, যেখানে অন্য নারীর সঙ্গে চুম্বনরত অবস্থায় দেখা গেছে তাঁকে!
নতুন বান্ধবীর অতীত যা-ই থাক, ওলিভাকে নিয়ে সময়টা ভালোই কাটছে ম্যারাডোনার। কিন্তু দুজনের সম্পর্কটা কত দিন টেকে, এটাই এখন প্রশ্ন। ম্যারাডোনার নারীভাগ্য বিবেচনায় আনলে প্রশ্নটা অমূলকও নয়। ফুটবল মাঠের একসময়কার নিপুণ শিল্পী ম্যারাডোনা যে প্রেমের ময়দানেও ঝানু খেলোয়াড়!।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।