সীমান্ত হক
দেখা যাক ফিফা র্যাঙ্কিং। কার অবস্থান কোথায়। বর্তমান র্যাঙ্কিং-এ প্রথমে আছে ব্রাজিল। এরপরে পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় স্থানে আছে স্পেন, তৃতীয় স্থানে আছে পর্টুগাল, চতুর্থ-নেদারল্যাণ্ড, পঞ্চম-ইতালি, ষষ্ঠ-জার্মানি, সপ্তম-আর্জেটিনা, অষ্টম-ইংল্যাণ্ড, নবম- ক্রোয়েশিয়া ও দশম স্থানে আছে ফ্রান্স। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্রাজিল (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০,১৯৯৪, ২০০২) পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়।
এছাড়াও ব্রাজিল ১৯৫০ ও ১৯৯৮ সালে রানার আপ, ১৯৩৮ ও ১৯৭৮ সালে তৃতীয় এবং ১৯৭৪ সালে চতুর্থ হয়। আর আর্জেটিনা চ্যাম্পিয়ন হয় মোট দুইবার (১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে) । আর রানার আপ হয় আর্জেটিনা দুইবার ১৯৩০ ও ১৯৯০ সালে।
আর্জেন্টিনা কি এবার জিততে পারবে? খোদ আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীরাই নিশ্চিত নন। সম্প্রতি বুয়েনস আয়ারসের এক সংবাদপত্র সমীা চালিয়েছিল।
তাতে অনেকে উত্তর দিয়েছেন, না, পারবে না।
নির্বাচিত খেলোয়াড়রা যথেষ্ট প্রতিভাবান, কোনো কোনো পজিশনে বিশ্বসেরাও। এবারের টিম নিঃসন্দেহে ২০০২ এবং ২০০৬ সালের থেকেও শক্তিশালী। তবু আর্জেন্টিনা পারবে না। একটাই কারণ, কোচ ডিয়েগো ম্যারাডোনার ওপর আর্জেন্টিনার মানুষ ভরসা রাখতে পারছেন না।
তাঁদের ধারণা, একে তো টিম নির্বাচনই ঠিকমতো করা হয়নি, তার ওপর বিশ্বকাপ চলার সময় ম্যারাডোনা কারো পরামর্শ নিতে চাইবেন না। এমনকি টিমের জেনারেল ম্যানেজার কার্লোস বিলার্ডোর পরামর্শও নয়। প্রতি ম্যাচে দল নির্বাচনের সময় ম্যারাডোনা এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেবেন, যা দলের জন্য তিকর হয়ে দাঁড়াবে।
দলে জায়গা পাননি জেভিয়ার জানেত্তির মতো বিশ্বসেরা ব্যাক। যিনি ডান-বাঁ দুইদিকেই খেলতে পারেন।
এই জানেত্তি কয়েক দিন আগে ইতালির ইন্টার মিলানকে এনে দিয়েছেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব। বিলার্ডো নাকি জানেত্তিকে দলে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ম্যারাডোনা তাঁকে নিতে রাজি হননি। ডিফেন্সের দুর্বলতার জন্যই ম্যারাডোনার দল প্রাক-বিশ্বকাপে হেরেছে কলম্বিয়া, চিলি, এমনকি ইকুয়েডরের মতো দলের কাছে। দণি আফ্রিকায় তারা কী করে হারাবে জার্মানি, ইংল্যান্ড, ব্রাজিল বা স্পেনকে?
অ্যাটাকিং লাইনে আর্জেন্টিনার যা শক্তি, বিশ্বের অন্য কোনো দলে তা নেই। লিওনেল মেসি, কার্লোস তেভেজ, সেরেজেই আগুয়েরা, গঞ্জালো হিগুয়াইন, ডিয়েগো মিলিতো আর মার্টিন পালেরমো।
এই ছয়জন বিশ্বের যেকোনো ডিফেন্স ভেঙে দেওয়ার মতা রাখেন। আক্রমণ বিধ্বংসী করার জন্য ম্যারাডোনা এবার একজন বেশি স্ট্রাইকার নিয়েই বিশ্বকাপে যাচ্ছেন, একজন মিডফিল্ডার কমিয়ে। তা নিয়েও কম সমালোচনা হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাতের বদলে আটজন মিডফিল্ডার নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এখনকার ফুটবলে হার-জিত নির্ভর করে মিডফিল্ডাররা কেমন খেলবেন তার ওপর।
সেখানে ঘাটতি রাখা ভুল। স্পেন দুর্র্ধষ হয়ে উঠেছে, তাদের আট মিডফিল্ডারের জন্য। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য স্পেনকে তো হারাতেই হবে কোনো না কোনো পর্যায়ে। ম্যারাডোনা কি পারবেন?
আর্জেন্টিনার মধ্যমাঠে যাঁর দিকে ম্যারাডোনা তাকিয়ে আছেন, তিনি হলেন খুয়ান সেভেস্তিয়ান ভেরন। প্লে-মেকারের ভূমিকায় সম্ভবত তাঁর সঙ্গে থাকবেন জেভিয়ার মাসচেরানো।
ম্যারাডোনা ধরেই নিয়েছেন, বার্সেলোনা কাবে জাভি যেভাবে বল বাড়ান মেসিকে, সেই কাজটি করতে পারবেন ভেরন। কিন্তু আঘাত বা অন্য কোনো কারণে ভেরনকে পাওয়া না গেলে! তখন কে খেলাবেন মেসিকে? ভেরনের বদলি হিসেবে দলে আছেন পাস্টোর। তিনি তো আর্জেন্টিনার হয়ে কোনো ম্যাচই খেলেননি। প্রস্তুতি ম্যাচে আরো একটি দুর্বলতা ধরা পড়ছে ম্যারাডোনার দলে। মধ্যমাঠে স্পেন দল যেমন জমাট খেলাটা খেলে, ঠিক সে রকম খেলতে পারছে না আর্জেন্টিনা।
মিডফিল্ডারদের সঙ্গে অনেক সময় ব্যবধান থেকে যাচ্ছে অ্যাটাকিং লাইনের। এই সাংগঠনিক দুর্বলতা কিন্তু ভোগাবে আর্জেন্টিনাকে।
তবু দলটি তো আর্জেন্টিনা। ২৪ বছরের খরা কাটাতে যেকোনো সময় দানা বেঁধে যেতে পারে দণি আফ্রিকায়। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো যাওয়ার সময়ও এই পরিস্থিতি ছিল।
কেউ ভাবেননি আর্জেন্টিনা সেবার চ্যাম্পিয়ন হবে। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন ম্যারাডোনা। যিনি এবার একটি দুর্লভ কৃতিত্বের সামনে দাঁড়িয়ে। কোচ হিসেবে তিনি যদি বিশ্বকাপ জিততে পারেন, তাহলে ছুঁয়ে ফেলবেন বেকেনবাওয়ারের রেকর্ড। ১৯৮৬ সালের কোচ বিলার্ডো ফাটকা খেলেছিলেন ম্যারাডোনাকে দিয়ে।
ম্যারাডোনা এবার ফাটকা খেলতে চান মেসিকে দিয়ে। নিয়তি বলবে, তিনি পারবেন কি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।