তর্ক করে কি লাভ হবে আপসেতে যুক্তি চলে
ফুটবল বিশ্বে দু’জনকে সেরা মানা হয়। দু’জন এই জন্য যে, দুইজনের সমর্থনে পুরো বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী মানুষেরা দু’ভাগে বিভক্ত। কারো সমর্থন কোন অংশে কম নয়। ব্রাজিলের কালো মানিক পেলে ‘ফিফা’ জুরিতে প্রথম হলেও পাঠক সমর্থক ভোটে দ্বিতীয়। আজেন্টিনার ম্যারাডোনা সমর্থক ভোটে প্রথম এবং ‘ফিফা’ জুড়ি বোর্ডে দ্বিতীয়।
তাহলে কাকে সেরা বলবে। যার যার মতো করে সেরা বেছে নেওয়ার দায়িত্ব এখন আপনার। দু’জনের মতোও পথ কিন্তু ভিন্ন। নতুন নতুন ফুটবল প্রতিভার আগমন ঘটলে পেলে-ম্যারাডোনার সাথে তুলনা করা হয়। আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি যেনো এই সময়ে তাদেরই একজন।
মেসি প্রতিভাবান ফুটবলার এতে কোন সন্দেহ নেই। ম্যারাডোনা তাকে নিজের সাথে তুলনা করে বলেন ‘মেসি আমার চেয়ে সেরা খেলোয়াড়। ’ তার কথায় যুক্তি আছে। ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড় ও ইউরোপের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ইতিমধ্যে তিনি পেয়েছেন। তারপরও ম্যারাডোনা এবং ইউরোপ মিডিয়ার দাবি অনুযায়ী মেসি ম্যারাডোনার চেয়ে সেরা অর্থাৎ সর্বকালের সেরা ফুটবলার হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
মেসির যাদুকরি ফুটবল খেলা তাবৎ দুনিয়ার ফুটবপ্রেমীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেন। মেসি সম্পর্কে দুই ফুটবল কিংবদন্তি কি বলেন সেটাই জানাই। ২২ বছরের মেসিকে নিয়ে তার গুরু ম্যারাডোনা বলেন, কেউ যদি আমাকে হারাতে পারে তবে সে হবে একজন আর্জেন্টাইন। আর যদি মেসি হয় তাহলে আমি সবচেয়ে খুশি হব। একদিন সে নিজেকে এমন উচ্চতার নিয়ে যাবে এটা আমি আগে থেকেই জানতাম।
ওর ওপর আমার বিশ্বাস আছে আমি তাকে নিয়ে খুশি। কারণ সে খুব দ্রুত ফুটবলার হিসাবে আরো পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে ব্রাজিলের কালোমানিক আরেক কিংবদন্তি পেলে মেসিকে নিয়ে বলেন, ‘সে গ্রেট ফুটবলার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বার্সালোনায় সে খেলছেও দারুণ। কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে তার এমন পারফরম্যান্স আমরা কখনও দেখিনি।
সম্ভবত বার্সালোনায় সে (মেসি) যে দলে খেলে আর্জেন্টিনা দলটা এমন নয়।
ম্যারাডোনার কথার প্রতি উত্তরে কিছু বলার নেই। কিন্তু পেলের কথার সূত্র ধরে বলা যায়, মেসি এ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে ৪৩টি ম্যাচ খেলেছে গোল করেছে মাত্র ১৩টি। আর ক্লাব দল বার্সালোনার হয়ে ১৩৪টি ম্যাচ খেলে গোল করেছে ৭৯টি।
আপনারা জেনে অবাক হবেন, আর্জেন্টিনার একজন সাধারণ রেফারি যত বেশি জনপ্রিয় নিজ দেশ ততো বেশি জনপ্রিয় নন মেসি।
এ ফলাফল আর্জেন্টিনার একটি দৈনিকের জরিপের। আর্জেন্টিনার মানুষ তাকে কাতালু নিয়ান বলে ডাকে। আর্জেন্টিনায় সবচেয়ে অজনপ্রিয় ফুটবলার হলেন মেসি। ছোটবেলায় হরমোনের সমস্যায় পড়লে মেসির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। যার জন্য বার্সালোনার একাডেমির খরচে তাদের হাতে তুলে দেন বাবা-মা।
মেসি চিকিৎসার ব্যয়ভার কিন্তু প্রথম ক্লাব রোজারিওর নিওয়েলস নিতে অস্বীকার করে। ছোটবেলায় যার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার শক্তি ছিল না, সেই মেসি এখন বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ খেলোয়াড়। মেসির বার্ষিক আয় ২৯.৬ মিলিয়ন পাউন্ড। যা তাকে বার্ষিক আয়ের সেরা ফুটবলার খেতাব এনে দেয়। গতবারের প্রথম স্থানে বেকহ্যাম এখন দ্বিতীয় (২৭.৩ মিলিয়ন পাউণ্ড)।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (২৭ মিলিয়ন পাউণ্ড) তৃতীয়। কাকা (১৬.৯ মিলিয়ন পাউণ্ড) চতুর্থ। ও থিয়েরি অঁরি (১৬.১ মিলিয়ন পাউণ্ড) পঞ্চম।
২০০৪ সালে মেসিকে স্পেন নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মেসি সে প্রস্তাবে রাজি হননি।
পুরষ্কার স্বরূপ ২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-২০ দলে সুযোগ পান। যদিও ২০০৩-০৪ মৌসুমে বার্সালোনার পক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পোর্তোর বিপক্ষে অভিষেক হয়। ২০০৪ সালে অনুর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা শিরোপা জেতে। মেসি ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট ও বল পুরস্কার পান। সেই থেকে মেসি দুরন্ত দর্শনীয় ও উদীয়মান প্রতিভার ঝলক দেখাতে শুরু করেন।
স্পানিশ লীগে মেসির শুরু হয় ২০০৪ সালের ১৬ আগস্ট স্প্যানিওল বিপক্ষে ম্যাচে। বার্সালোনা জিতলেও মেসি গোল করতে পারেননি।
২০০৫-০৬ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন লীগে একটি ম্যাচে পেশী ইনজুরিতে পড়েন। সেটাই মেসি খেলোয়াড়ি জীবনে প্রথম বাজে ইনজুরি। গত বিশ্বকাপে জার্মানী বিপক্ষে কো. ফাইনাল ম্যাচে মেসি সাইড বেঞ্চে বসেছিলেন।
২০০৯ সালে বার্সালোনা চ্যাম্পিয়ন্স লীগসহ মোট ছয়টি টাইটেল শিরোপা জয় করে। মেসির অবদান যাতে সবচেয়ে বেশি ছিল। এ বছর লীগে সর্বোচ্চ ৩১ গোল ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন, ৩২ গোল করা রুনি ইনজুরিতে তিন সপ্তাহ বাইরে থাকার সুযোগে মেসি অনেক উপরে উঠে যাবেন সন্দেহাতীতভাবে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আসর অনুষ্ঠিত হবে জিরাফ, জেব্রা ও দারিদ্রপীড়িত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়। নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ থেকে আর্জেন্টিনার মানুষের জন্য বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখেন মেসি।
কারণ এই স্বপ্ন পূরণ হলে আর্জেন্টিনার মানুষের কাছে মেসির বদনাম ঘুচে যাবে। বার্সালোনার হয়ে ভালো খেলা শুধু নয় আর্জেন্টিনার হয়ে ভালো খেলে তার শ্রেষ্ঠ স্বপ্নপূরণ করবেন মেসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।