ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না আমাদের ঢাকা ও তার আশেপাশের এলাকার রাস্তাঘাটে লোকজনের আধিক্য যতটা দেখা যায় অন্যান্য এলাকায় অতটা নয় কিন্তু চীনের সব শহরই লোকে ঠাসা. আমি যে শহরে আছি এটাকে বেইজিং, শাংহাই, গুয়াংজুর সাথে তুলনা করলে বলতে হয় মফস্বল এলাকা অথচ এখানেই ৮০ লক্ষ লোকের বাস. তাহলে বুঝেন বাস, সাবওয়ে এমনকি আন্ত প্রদেশ ট্রেনগুলিতে কিরাম ভিড় হইতারে. লোকাল বাসগুলিতে বসার আসন সংখ্যা কম, বেশির ভাগ লোকজনকে দাঁড়িয়েই থাকতে হয়. আমি একটা জিনিস চিন্তা করি যদি সবাই বাসে বসে চলাফেরা করতো তাহলে বাসের সংখ্যা এখনকার তুলনায় ৩/৪ গুণ হত. ঢাকাতেও যদি এরকম দাঁড়াইয়া থাকুন্না বাস থাকত/ বুড্ডা বুড্ডা ৩টা বাস জোড়া দিয়া ১টা বানাইতো তাহলে জ্যাম কিছুটা হলেও কমত. এদের রাস্তাগুলি অনেক প্রশস্ত, এই ছোট্ট শহরেই দেখি অনেক রাস্তা এমন যে ঢাকা বিমানবন্দর টু উত্তরার দ্বিগুণ প্রশস্ত, ফ্লাইওভার এমনকি মাটির তল দিয়ে সাবওয়ে তো আছেই. "নারী পুরুষ সমান অধিকার" এই কথাটা যেমন মুখে বিশ্বাস করে তেমনি কাজেও. অফপিক আওয়ারে এমনও দেখেছি পুরো বাসে একটা মাত্র মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কোন ছেলে সিট ছেড়ে দিচ্ছে না, তবে বয়স্ক খুনখুনা বুড়োদেরকে ইয়াংরা সিট ছেড়ে দেয়. সিরিয়াল ধরতে হয় যেসব জায়গায় ওখানে মেয়েদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আলাদা কোন লাইন নাই. ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে ঠেলে ঠুলেই বাসে উঠে জায়গা করে নিতে হবে. কেউ যদি চীনে এসে মনে করে মেয়েদের সাইড দেই, তারা যাক এরপর আমি যামু.... তাইলে আর কাম হইছে ! এখানে ছেলেমেয়ে বলে আলাদা করে কোন দেখাদেখি নাই, ঠেলে চলে যেতে হবে. শরীরের কোথায় লাগল না লাগল এটা নিয়ে ওরা মাথা ঘামায় না. এমনও হয় যে আমি সিটে বসে আছি আর কোন ছেলে বাসের মাঝখানের অত্যধিক ভিড় থেকে তার জীবনসঙ্গীনিকে ঠেলে আমার দিকে দিচ্ছে, মেয়েটি তার শরীর আমার পায়ের সাথে/ হাতের ডানার একপাশের সাথে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে. আমি প্রথমদিকে অবাক হলেও এখন বিরক্ত হই. ভিড়ের মধ্যে একজনের জীবনসঙ্গীনি আর একজনের শরীরের সঙ্গে ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে আছে, এতে চৈনিক ছেলেরা কিছু মনে করে না. একদিন এক বাংলাদেশী বড় ভাইকে বাসের মধ্যে দেখেছিলাম তার বৌকে রক্ষা করার ব্যর্থ চেষ্টা. বাসে ৩ জনই দাঁড়িয়ে আছি. ভাই ভাবীকে এমনভাবে জড়াইয়া ধইরা আগলিয়ে রাখছে যেন অন্য কোন চৈনিক পোলার শরীর না ঘেঁষে কিন্তু শেষমেষ আর হয় নি. উনি একদিক রক্ষা করতে গেছে অন্যদিকে ছেলেদের সাথে ঘেঁষা লাগছে. আমাদের সমাজে মহিলারা একজন অন্যজনকে বলে, আপা আপনিই বলুন সরাসরি ব্লাউজের উপর দিয়ে ঘষা লাগলে কেমন লাগে, অন্ততঃ উড়নার উপর দিয়ে লাগলেও চলে. চৈনিক মেয়েদের মধ্যে এটা নাই, ওরা ভিড়ের মধ্যে নিজেরাই এমনভাবে ঠেলে চলে যে কখনও তাদের সামনের উপরের অংশের ছোঁয়া দিয়ে যায় আবার কখনও পেছনের নিচের অংশের. আমাদের সমাজের পোলাপান ঈদ,পূজার সময় বিপণি-বিতানের গেটে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে বা মেলায় গিয়ে চান্সে থাকে কিন্তু চৈনিক পোলাগো এত কষ্ট করা লাগে না. যে কোন কিছু ছোটবেলা থেকে দেখলে ওটা তার কাছে নরমাল ব্যাপার হয়ে যায়. চৈনিক মেয়েরা কাপড়-চোপড়ের ক্ষেত্রে ছোটো পোশাকই বেশি পছন্দ করে, গরমের দিনে এটা ভালভাবেই ফুটে উঠে. উত্তর চীনের লোকজন সামান্য রোদের তাপ সহ্য করতে পারে না, বাসের মধ্যে বয়স্কগুলা সিটে বসে মাথা পেছনে বাঁকিয়ে উচ্চশব্দে এমনভাবে শ্বাস নেয় যেন হাঁপানি রোগী. যুবতী বয়স্ক সব বয়সের অধিকাংশ মহিলার পড়নের কাপড় এত পাতলা যে আমাদের সমাজের মহিলাদের শুধু পেছন দিকের বক্ষবন্ধনী'র অংশবিশেষ দেখা গেলেও এদের সামনে পেছনে সব অংশই দেখা যায়. আবার অনেকের মিনি স্কার্ট এমনই মিনি যে বাতাস একটু জোরে-শোরে বইলে আন্ডি দেখা যায়. ফুটপাতে যেসব মহিলা হকাররা মাটিতে/ নিচু টুলে বসে জিনিস বিক্রি করে তারা হাঁটুর উপর আলাদা একটা কাপড় জড়িয়ে রাখে. এখানে আসার পর প্রথমদিকে এসব দেখে শরীর গরম হয়ে যেত কিন্তু এখন আর এসমস্যা হয় না. আসলে অভ্যস্ত হওয়ার ব্যাপার, অনেকদিন দেখলে নরমাল হয়ে যায় সবকিছু. মেয়েদের শ্লীলতাহানির ঘটনা এই ২ বছরে একদিনও দেখি নাই কিংবা কারো কাছে শুনিও নাই. চৈনিক ছেলেদের কাছে এগুলো খুব্বি স্বাভাবিক ব্যাপার. তবে ওরা শীতের দিনের তুলনায় গরমের দিনে সুন্দরী মেয়েদের ছোটো পোশাকে সেক্সিরুপে দেখতে পছন্দ করে. আর একটা কথা কি! ছেলেরা ছোটবেলা থেকে মেয়েদের যতই ছোটো পোশাকে দেখতে অভ্যস্ত হোক না কেন মাথায় মাল উঠলে তখন সে সকল আইন আদব-কায়দা ভদ্রতা ভুলে যায়. একদিন রাত ৯টার দিকে ট্যাক্সিতে আসার সময় একটুর জন্য একটা মেয়ে আমাদের ট্যাক্সির সাথে ধাক্কা খায় নাই. ঘটনা দেখে যতটুকু মনে হইছে ঐ মেয়ের পরিচিত এক ছেলেই তাকে ধরার জন্য পেছনে দৌড়াচ্ছিল, মেয়েটা ইচ্ছে করেই ফুটপাত ধরে না চলে রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড়াচ্ছিল যাতে ছেলেটা আর পিছ না ধরে, কিন্তু ঐ যে মাথায় মাল উঠলে কি আর হুঁশ থাকে. ট্যাক্সি ড্রাইভার ইচ্ছামতো পোলাডারে গাইলাইলো, ড্রাইভারদের মুখ ছুটলে যা হয়. আমি যদিও চাইনিজ ভাষা খুব্বি হালকা পাতলা পারি জাস্ট চলার মত তবে গালিগুলোর চাইনিজ ঠিকই মনে থাকে প্রবাদে আছে 'ভাল কথা মনে থাকে না কিন্তু কুকথা ঠিকই মাথায় গেঁথে যায়'. আমাদের সমাজে অনেক মহিলাদের সুরে কিছু পুরুষও সুর মিলিয়ে বলেন, মেয়েদের ছোটো পোশাক পরিধান কোন সমস্যা নয়. কিন্তু আসলে কি তাই, উনারা যদি পাতলা ফিনফিনে পোশাক দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে কোন সমস্যা নাই, আর সব কিছুর মত এটাও নরমাল মনে হবে কিন্তু যদি অভ্যস্ত না হয়ে থাকেন তাহলে দেখা যাবে আমি, আপনি, তারা সে যেই হই না কেন কারও না কারো শরীর গরম হবেই, সময়-স্হান-কাল ভেদে ছেলে/মেয়ের মুডের উপর ভিত্তিতে একজনের কাছে আর একজনকে কমলার কোয়া বা ললিপপ মনে হওয়ার কারনে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমনকি পীড়াপীড়ি করতে গিয়ে নিভে যেতে পারে কারো জীবন প্রদীপ. সব সম্ভবের দেশ: চীন-১
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।