প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে আত্মহত্যার নানা খবর। আত্মহত্যা এখন যেন মহামারি রূপ ধারণ করেছে। বাবার বকুনি, ভাইয়ের শাসন, এমনকি প্রেমে পড়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাচ্ছে আত্মহত্যার মতো ঘটনা। বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করছে না অবুঝ প্রেমিক-প্রেমিকেরাও। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর উত্তরখান তালতলা এলাকায়।
নম্র-ভদ্র কাজপাগল ছেলে মোকারম হোসেন পান্না (২২)। দীর্ঘদিন টেইলারিংয়ের কাজ করত চট্টগ্রামের চৌমুহনী সিটি টেইলার্সে।
পান্নার বড় ভাই মেহরাজ ও চাচাত ভাই শিপন অপরাধকণ্ঠকে জানান, পান্না লেখাপড়ায় খুব একটা মনযোগী ছিল না বলে বাবা জাহিদুল ইসলাম তাকে টেইলারিংয়ের কাজ শেখান। টেইলারিং কাজের সুবাদে পরিচয় হয় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাকার মেয়ে আয়েশার সাথে। পরিচয়, প্রেম, তারপর মন দেয়া-নেয়া।
সাথে চলে অর্থেরও লেনদেন। বিষয়টি পান্নার পরিবার প্রথমে বুঝতে পারেননি। সহজ-সরল পান্নার মাসিক বেতন এবং আনুষঙ্গিক উপাজর্নর টাকা আয়েশার পেছনে খরচ করা এবং পান্নার শারীরিক পরিবর্তন ঘটনায় তারা পান্নার দিকে নজর দেন।
সব বুঝেশুনে পান্নাকে আয়েশার পথ থেকে সরে আসতে বলেন তারা। কিন্তু প্রেম মানে না কোনো বারণ।
বাবার নিষেধ সত্ত্বেও সে লুকিয়ে আয়েশার সাথে দেখা করত। মোবাইলেও কথা বলত সারা রাত। দু’বার বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলেও আয়েশার কারণে তাকে বিদেশে পাঠানো যায়নি। পরিস্থিতি তাদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া এবং আয়েশার কবল থেকে থেকে পান্নাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সবাই মিলে ৪ মাস আগে পান্নাকে ঢাকায় তার চাচাত ভাই শিপনের তত্ত্বাবধানে ২০০৮/১, কলেজ তালতলা মোড়, সেন্টুদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
জানা যায়, এরই মধ্যে পান্না ওই মেয়ের পেছনে প্রায় ২ লাখ টাকা খচর করেছিল।
শিপন অনেক কষ্ট করে তাকে দক্ষিণখান এলাকায় ডিসিন ড্রেস কর্নারে ৪৪০০ টাকা বেতনে কাজে লাগিয়ে দেন। প্রথম তিনমাস সে ভালোই কাজ করছিল। অনুমান, গত এক সপ্তাহ আগে পান্না জানতে পারে তার সর্বস্ব লুটে ছলনাময়ী আয়েশা অন্য ছেলের সাথে প্রেমে মগ্ন। এ সংবাদ শুনে দিশেহারা হয়ে পান্না মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিজের কাজে যায়। সেখানে সে অচেতন হয়ে পড়ে।
অফিসের ২ কর্মচারী তাকে ধরাধরি করে তার বাসায় দিয়ে যায়।
সে সময় তার শরীরে প্রচ- খিঁচুনি হয় বলে জানা যায়। একটু সুস্থ হলে পান্না শিপনের স্ত্রীকে ‘আমি বাড়িতে যাব’ বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। গত ২৪ আগস্ট নামাজের আগে শিপন পাশের ঘর থেকে শুনতে পায়, মোবাইলে পান্না আয়েশার সাথে উচ্চ স্বরে কথা কাটাকাটি করছে। সকালে আবার কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সে তার মোবাইলটি আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে।
এরপর যে যার কাজে চলে গেলে দুপুর দেড়টার সময় শিপনের ছেলে সাগর বাসায় এসে চাচার ঘরে ঢুকে দেখে, ফ্যানের সিলিংয়ের রডের সাথে পান্নার লাশ ঝুলছে।
এ ব্যাপারে উত্তরখান থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে ঝুলন্ত অবস্থায় পান্নার লাশ উদ্ধার করে। মৃত পান্নার পরিবারের দাবি, আয়েশার কারণেই পান্নাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে। আয়েশার প্রেম-বিরহে সে নেশা করত ও কাজে অমনোযোগী ছিল। এ ব্যাপারে উত্তরখান থানায় একটি অপমৃত্য মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা নং-০৫, তারিখ : ২৫-০৮-১১। এ ব্যাপারে মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই সাইদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই ধারণা করছি। তবে আত্মহত্যার পিছনে কারো প্ররোচণা কিংবা সংশ্লিষ্টতা থাকলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।