যে বিশ্বাস নিয়ে একটা ছোট্ট শিশু হেসে ওঠে তাকে পরে ছুড়ে দেয়া হলে, তেমনি বিশ্বাস আমি করি তোমাকে। আমি জানি তুমি দুঃখ কখনও দেবেনা আমাকে। আমার বয়স ২৯। বিয়ে হয়নি আমার। এটা নিয়ে পরিবারের-স্বজনদের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।
জানতাম না যে এই দেশে ২৯ এর পর কোন অবিবাহিত মেয়ের বেচে থাকাটা এতটা কষ্টের।
আজ হঠাৎ নিজের রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখি দরজার ওপর একটা তাবিজ লাগানো। দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে গেছি। সাথে সাথে বাবা-মা কে ডাকলাম। মা দেখে আর এক দিকে তাকিয়ে আছেন।
যেন জানেন না কিছুই এমন ভাব করে আছেন। কারণ উনাদের এসব কাজ বরাবরই অপছন্দ আমার। আমি এটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারিনা। বাবা বললেন এটা তিনি লাগিয়েছেন। জানতে চাইলাম কেন এটা লাগানো হল।
বললেন, কোন বাবা-মা সন্তানের অমঙ্গল চাননা। তিনি এটা আমার মঙ্গলের জন্য লাগিয়েছেন। যখন সময় হবে তখন জানাবেন কেন লাগিয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি আমার বিয়ের উদ্দেশ্যে লাগানো হয়েছে কিনা। বললেন, যদি এই উদ্দেশ্যে ও হয়, তাতে ক্ষতি কি।
বিয়ের বয়স আমার হয়েছে।
আমি বিদেশে উচ্চ শিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরেছি। আমার পরিবারে শিক্ষিত কেউ ছিলনা। লোকে এটা নিয়ে নানা মন্তব্য করত। আমি পরিবারের সেই দূর্নাম ঘুচিয়েছি।
দেশে ফেরার পর থেকে আমার বিয়ের কথা চলছে। এই পযর্ন্ত কেউ আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। আমার দুর্ভাগ্যই হবে নিশ্চয়ই। আমি অসুন্দর, মানি। কিন্তু আমার চেয়ে অসুন্দর মেয়েদেরও বিয়ে হয়।
আমার হচ্ছে না। তাই বাবা-মায়ের করা এই তাবিজের অপমানও আমাকে মুখ বুজে সয়ে যেতে হবে।
দেশে ফেরার পর আমাকে কাজ করতে দেয়া হয়নি। ঘরে থেকে রূপচর্চা করা আমার এখন একমাত্র কর্তব্য। এভাবে বেচে থাকা অসহনীয় বলে আমি ঘরে বসে মানুষের এসাইনমেন্ট করে হাত খরচের টাকা জোগাড় করি।
কারন পার্লারে যেতে চাইলেই কেবল ঘর থেকে টাকা নিতে পারব, অথবা না। আর পার্লারে যাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। তাই টাকা দেয়া হয়না আমাকে।
যদি কোন দয়াবান অনুগ্রহ করে আমাকে বিয়ে করেন সেই অপেক্ষায় আছি। এতটা ফেলনা হয়েছি এখন।
মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে আত্মহত্যা করি। কিন্তু আমি জানি, এই সমাজ আমার বাবা-মা ভাই-বোনকে টিকে থাকতে দেবেনা। আমার ছোট বোনের ভাল বিয়ে হবে না আমি এই কাজ করলে। ওদের কথা ভেবে মরতে কষ্ট হয়। কিন্তু যারা আমাকে এভাবে অপমান করতে ভাবে না, আমি কেন ভাবি তাদের কথা!?
আমি অনেক বার বুঝিয়ে বলেছি, বাবা হয়ত এই তাবিজে কুফরি থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে আমার ইহকাল তো গেলই, পরকালও শেষ।
আমি আর মুসলমান থাকবনা। আল্লাহকে অনেক ভালবেসেও হয়ত আমি শেরকের দায়ে দোযখে যাব। ওরা আমার কথা মানতে নারাজ। আমার নামাজি মা তাবিজের সবচেয়ে বেশি পক্ষ নেন। বলেন, স্বামী যদি ভাল না বাসে, যদি অন্য কারও সাথে তার সম্পর্ক থাকে, তাবিজ দিয়ে নাকি তাকে ফিরিয়ে রাখতে পারব আমি।
যে আমাকে ভালবাসেনা, তাবজ নাকি তার ভালবাসা আমকে এনে দেবে।
কি করব আমি? কোথায় গিয়ে কার পায়ে ধরে অনুরোধ করব আমাকে বিয়ে করে এই নরক থেকে মুক্তি দিতে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।