আজ ২৪ আগস্ট, ইয়াসমিন ট্রাজেডির ১৬তম বার্ষিকী। এদিন দেশব্যাপী পালিত হবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে একদল পুলিশ সদস্যের হাতে তরুণী ইয়াসমিন নিমর্মভাবে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরের আমজনতা। প্রতিবাদী মানুষকে লক্ষ্য করে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সাতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
ঘটনায় দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষের দৃষ্টি নিবন্ধ হয় দিনাজপুরে। দিবসটি পালন উপলক্ষে সম্মিলিত নারী সমাজ, মহিলা পরিষদ, এডাবসহ বিভিন্ন মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট ভোরে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওগামী হাছনা এন্টারপ্রাইজ নৈশ কোচের সুপারভাইজার ইয়াসমিন নামে এক তরুণীকে দিনাজপুরের দশমাইল মোড়ে নামিয়ে দেণ। এক চায়ের দোকানদারকে বলেন,
সকাল হলে তরুণীটিকে যেন দিনাজপুর শহরগামী বাসে উঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সেখানে পৌঁছে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান।
পুলিশ সদস্যরা চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসে থাকা ইয়াসমিনকে নানা প্রশ্ন করে এক পর্যায়ে দিনাজপুর শহরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোরপূর্বক পুলিশ ভ্যানে তুলে নেয়। এরপর তারা দশমাইল সংলগ্ন সাধনা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। এ ঘটনায় দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে দোষীদের শাস্তি দাবি করা হয়। ২৬ আগস্ট রাতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জনতা কোতয়ালী থানা ঘেরাও করে।
২৭ আগস্ট সকাল থেকে প্রতিবাদী মানুষেরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। দুপুর ১২টার দিকে কয়েক হাজার জনতা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিতে যায়। এ সময় পুলিশ বিনা উস্কানিতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে সাতজনকে হত্যা করে।
আহত হয় প্রায় তিন শতাধিক। শহরের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। শহরে বিডিআর মোতায়েন করা হয়। দিনাজপুর থেকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তিনটি আদালতে ১২৩ দিন বিচার কাজ শেষে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মতিন মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার রায়ে আসামি পুলিশের এএসআই মঈনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিকআপ ভ্যান চালক অমৃত লাল বর্মণের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান ‘৯৫-এর ৬ (৪) ধারায় ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেন।
আলামত নষ্ট, সত্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এএসআই মঈনুলকে আরও ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়।
অপরদিকে, দ-বিধির ২০১/৩৪ ধারায় আলামত নষ্ট, সত্য গোপন, অসহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি দিনাজপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার আবদুল মোতালেব, ডা. মহসীন, এসআই মাহতাব, এসআই স্বপন চক্রবর্তী, এএসআই মতিয়ার, এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দেন। চাঞ্চল্যকর ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার দ-প্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয় আট বছর পর, ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
মামলার অন্যতম আসামী এএসআই মইনুল হক, পিতা-জসিমউদ্দীন, গ্রাম-বিশ্রামপাড়া, উপজেলা-পলাশবাড়ী, জেলা-গাইবান্ধা ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার, পিতা-এসএম খতিবুর রহমান, গ্রাম-চন্দনখানা, উপজেলা-ডোমার, জেলা-নীলফামারীকে রংপুর জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ২০০৪-এর ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় । অপর আসামি পিকআপ ভ্যানচালক অমৃত লাল বর্মণ, পিতা-লক্ষীকান্ত বর্মণ, গ্রাম-রাজপুর, উপজেলা-সদর,
লা-নীলফামারীকে রংপুর জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকর করা হয় একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে।
প্রতি বছর দিনাজপুরে সর্বদলীয়ভাবে দিবসটিকে পালনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়। প্রতিবারের মতো এবারও নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ২৪ আগস্ট দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ ও শোক রযালি। নিহত ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম ২৪ আগস্ট তার বাড়িতে ফকির-মিসকিনদের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও দোয়ার আয়োজন করেছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।