আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গঃ নারী-পুরুষ সমতা বিতর্ক, পর্ব-২

সত্য চীরকালই সত্য। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখলেই সত্য মিথ্যে হয়ে যায়না। প্রথম পর্বের আলোচনায় কিছু প্রশ্ন এসছে যেগুলোর বিশ্লেষণধর্মী উত্তরসহ আমার এই দ্বিতীয় পোষ্ট। প্রশ্নোত্তর সম্বলিত আলোচনা নিম্নরূপঃ “ভাইয়া, সম্পত্তির দিকটায় একটু তাকাবেন কি? ” অবশ্যই কেন নয়। আপনার কি ধারণা মেয়েদের উত্তরাধিকার আইনে ছেলেদের অর্ধেক করে ঠকানো হয়েছে? মোটেই নয়।

ইসলামে নারীর উপর এমন কোন অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা ও দায়-দায়িত্ব নেই, যা ন্যস্ত আছে পুরুষের কাঁধে। বিয়ের আগে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান, দায়-দায়িত্ব থাকে পিতা ও ভাইদের উপরে। বিয়ের পরে উক্ত দায়িত্ব বর্তায় স্বামী ও ছেলেদের উপরে। পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব ইসলামে পুরুষদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এসব দায়-দায়িত্ব পূরণ তাকে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য উত্তরাধিকারের অংশে তাকে দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে।

একটি উদাহরণ দিয়ে বলি- এক ব্যাক্তি তার এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্য এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা রেখে মারা গেল। এ অবস্থায় উত্তরাধিকার আইনে ছেলে পাবে এক লক্ষ টাকা আর মেয়ে পাবে পঞ্চাশ হাজার টাকা। এখন এটাকে একটু গভীর থেকে দেখার চেষ্টা করি। যেহেতু বাবার মৃত্যুর পর সংসারের আর্থিক তথা পুরু দায়-দায়িত্ব ছেলের ঘাড়ে বর্তায় সেহেতু আনুসাঙ্গিক প্রয়োজন মিটাতে তার আশি হাজার টাকা খরচ হয়ে গেল। তার হাতে থাকল মাত্র বিশ হাজার টাকা।

অপরদিকে মেয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওয়ার পর কোন খরচ করতে হয়নি বলে তার পুরু পঞ্চাশ হাজার টাকাই রয়ে গেল। তাহলে দাড়ালটা কি? অবশেষে ছেলে পেল- বিশ হাজার আর মেয়ে পেল পঞ্চাশ হাজার। আপনি কোনটা নিবেন? কোন পাগলেও এক লক্ষ টাকা নিতে চাইবে না যেটা থেকে আশি হাজার খরচ করে ফেলতে হবে। প্রিয় বোনেরা, আপেক্ষিকভাবে নয় কোরআনকে বুঝতে হবে হৃদয় দিয়ে। “কোন নারীবাদী বলেছেন যে নারী ও পুরুষ এক? তাঁরা একই অধিকারের কথা বলেন; তাইনা ভাইয়া!” নারী-পুরুষ ভেদাভেদ নাই।

সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার চাই। এটাইতো নারীবাদীদের স্লোগান। তাহলে আমাকে বলতে হবে কেন? “ভাইয়া, একজন মহিলা নবী, রাসুলের নাম বলতে পারলে উপকৃত হতাম। ” সৃষ্টি রহস্যে পুরুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে নেত্রীত্ব দেয়ার শক্তি দিয়ে। নবী শব্দের অর্থ নেতা।

একজন নারীর পক্ষে কি এই নেত্রীত্ব দেওয়া সম্ভব? আপনি তাই বিশ্বাস করেন? তাছাড়া নবী ও রসুলগণ সর্বাবস্থায় পাক, কোন নারীর পক্ষে কি সর্বাস্থায় পাক হওয়া সম্ভব? তাহলে সৃষ্টি রহস্যে নারী সৃষ্টির নারীত্ব থাকল কোথায়? “কোরআনের যে অংশে নারীকে পুরুষের অধীন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে” “স্বীকার করলেন তাহলে! মানুষ সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেই। সুযোগটা কি ইসলামের বাইরের? ” অবশ্যই সুযোগটা ইসলামের বাইরের। সুযোগসন্ধানীরা কি আপনার দৃষ্টিতে ভাল মানুষ? আমিও তো লিখেছি- “আইনকে বা লোকচক্ষুকে ফাঁকি দেওয়াই সর্বোচ্চ বুদ্ধিমানের কাজ নয়, আমানতকারীর বিশ্বস্ততাই আল্লাহ্র কাছে কাম্য। ” ““যারা চার বিয়ের পক্ষপাতি তাদের মনে রাখতে হবে, চার বিয়ের আয়াতটি নাজেল হয়েছিল ওহুদের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। শান্তির সময়ে বা সুস্থ সময়ে তা প্রযোজ্য নয়।

’’ অথর্ব , অযোগ্য ঐ আয়াতটাকে বাদ দিলে কেমন হয়? ( এখন প্রযোজ্য নয় তো তাই বললাম)” বাদতো অলরেডি দেওয়া হয়েই গেছে। আমার লেখায়তো সেটাই বুঝাতে চেয়েছি। রাখা হয়েছে ইতিহাস হিসাবে। নাকি আপনি ইতিহাস মূছে ফেলতে চান? ““বহু নারী বিধবা হন। বহু মেয়ে এতিম হন।

এই বিধবা, এতিম নারীদের সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যেই আয়াতটি নাজেল হয়েছে। ’’ হঠাৎ কোন যুদ্ধ লেগে গেলে এবং অনেক মহিলা নিহত হলে তখন একজন নারীকে(সংখ্যা কম) একাধিক পুরুষকে(সংখ্যা বেশি) বিয়ে করার অনুমতি দিয়ে আয়াত নাজিল হবে; তাইনা ভাইয়া!” হাসালেন আপনি! কোন ইতিহাসে আপনি পেয়েছেন যুদ্ধ লেগে অনেক মহিলা নিহত হয়ে মহিলাদের সংখ্যা কমে গেছে? এইরকম ইকটি ইতিহাসের নজীর দেখালে খুশি হতাম। তাছাড়া একজন পুরুষের একাদিক স্ত্রী থাকলে তাদের ঔরষজাত সন্তানের পিতৃ পরিচয়-মাতৃ পরিচয় খুব সহজেই পাওয়া যাবে। কিন্তু একজন নারীর যদি একাধিক স্বামী খাকে তাহলে সন্তানের পরিচয় কি হবে সেটাকি আপনি ভেবে দেখেছেন? বলতে পারেন ডিএনএ টেষ্ট করে। তাহলেতো প্রত্যেক ঘরে ঘরে পরীক্ষাগার স্থাপন করতে হবে।

কিন্তু কথা হচ্ছে আমিতো বহুবিবাহের পক্ষে কোন যুক্তি দেখাইনি। আপনি কেন এটা করলেন। কোরআনতো এক বিয়ের পক্ষেই আছে। ““ইবাদতের ক্ষেত্রে - নারী ও পুরুষ কে সমান ধর্ম কর্ম করতে হবে। ” নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে ( নফল নামাজ, নফল রোজা প্রভৃতি ) স্বামীর অনুমতির কথা বলা আছে যে কোথাও কোথাও।

হায়েজ-নেফাসের সময় নারীর ইবাদত বন্ধ থাকে। নারী ও পুরুষের ইবাদতের পরিমাণ সমান হবে কীভাবে? ” এটা আমল ও সওয়াবের ব্যাপার আপনার কি ধারণা আল্লাহ নারী একটু কম ইবাদত করল (হায়েজ-নেফাসের সময়) এইজন্য আল্লাহ মেয়েদের সওয়াব কম দিবেন? বেশি দিলেকি আল্লাহর কমতি পরবে? মোটেইনা। আল্লাহ অসীম দয়ালু ও পরম ক্ষমাশীল। লাইলাতুল কদরের এক রাত্রীর ইবাদতকে যে রকম হাজার রাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম করে দিয়েছেন, ঠিক সেরকম নারীদের এই ক্ষেত্রে ইবাদত আল্লাহ কমিয়ে দিয়ে নারীদেরকে সম্মানিত করেছেন। “ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, মেডিকেলসহ জ্ঞানবিদ্যার অন্যান্য শাখা যেমন কলা, ব্যবসায় শিক্ষা, অন্যান্য বিজ্ঞান প্রভৃতির ক্ষেত্রে কি হবে? মেয়েদের যদি এসব পড়ার যোগ্যতা থাকে তাহলে তারা কী পড়তে পারবে? তখন কিন্তু বেগানা পুরুষের সাথে মিশতে হবে ; ভাইয়া! ” পড়ার সাথে বেগানা পুরষের মেশার মানেটা আপনি কি বুঝাতে চাইলেন তা স্পষ্ট নয়।

পড়াতো পড়াই। জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে আপনার কোন বাধা নেই, তবে ইসলামী জ্ঞান আগে পড়ে অন্য জ্ঞান। তাহলেই বুঝতে পারবেন মিশতে হবে কি হবেনা। “রাজনীতি, ইমামতি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবে কি? যতদূর জানি এগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ। আপনি কি বলেন ভাইয়া!” আপনার এই প্রশ্নের উত্তর আগেই দিয়ে দিয়েছি।

নেতৃত্ব আল্লাহ পুরুষকে দিয়েছেন সৃষ্টি রহস্যের মাঝে, নারী সহযোদ্ধা। অধীনস্ত নয়। “আমার ভাই, বাবা, এমন সম্পর্কীয়দের থেকেও আমার স্ত্রীকে পর্দার জন্য আলাদা করে রাখতে হবে?(ইসলামে এমনটাই বলা আছে) যদি তাই হয় তাহলে দেয়ালের সংখ্যা বাড়ে না কমে? পর্দা মানেই আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হবে? ...নারীও বস্তু? যা বলেছেন না দাদা! ” পর্দার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’লা কি বলেছেন সেটিতো আপনি বুঝতেই পারেননি। নারীর পর্দার ক্ষেত্রে কোরআনে আল্লাহতা’লা বলেছেন- তাদের ছাড়া- তাদের স্বামী অথবা তাদের পিতা অথবা তাদের স্বামীদের পিতা (শ্বশুর) অথবা তাদের পুত্র। “নারী-পুরুষের সৃষ্টি, যৌনতা, যৌন মিলন প্রভৃতির সাথে সমতার সম্পর্ক কি? যদি থেকেই থাকে তাহলে এক্ষেত্রে ইসলাম কি অধিকার দিয়েছে নারীকে? হাদিস স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী স্ত্রীর সাথে যৌনকর্মের অনুমতি দেয়, স্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন মুল্যই নেই।

এমনকি চুলায় রান্না থাকা অবস্থায়ও যদি স্বামী স্ত্রীকে যৌনকর্মের জন্য ডাকে, স্ত্রীকে সে আদেশ পালন করতে হবে বিনা আপত্তিতে। এটা কী যৌনদাসীর চেয়ে কম কিছু?” এমন মনগড়া হাদিস আপনি কোথায় পেয়েছেন, সেটার উদ্ধৃতি দিলে আপনাকে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আমার জানামতে কোন সহীহ হাদিসে এটা নাই। আরো যেমন বলা হয়ে থাকে স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেস্ত। এগুলো বাংলা সিনেমার ডায়লগ।

স্ত্রীর ইচ্ছা অনচ্ছিার মূল্য যে স্বামী দিলনা সেতো স্বামী নয় শাসক। ইসলামে এর কোন বৈধতা নাই। “মাওলানা সাহেব, একটু সাবধানে; আমাদের কিছুটা বোধ-বুদ্ধি, কিঞ্চিৎ পড়াশোনা আছে। আপনার ধর্মকে এবং আপনাকে সম্মান দিয়েই বলছি “মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়”। মানুষের কল্যাণের জন্য ধর্মের আবির্ভাব।

কিন্তু ধর্মীয় গোঁরামী এই কল্যাণকে বিষময় করে তোলে। বিতর্ক করলে ধর্মের ক্ষতি ছাড়া লাভ হবেনা। তার চেয়ে ধর্মকে মানব কল্যাণার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। ভাল থাকবেন। ” আমি কোন মাওলানা নই ভাই, আমার আরবী কোন ডিগ্রীই নাই।

কোন পড়াশোনাও নাই, যেটা আপনার আছে বলে আপনি দাবী করেছেন। আমি পেশায় একজন চিকিৎসক। ইসলামকে বুঝার চেষ্টা করি। আপনার লেখায় ধর্মীয় গোঁরামী আপনি কোথায় পেলেন, সেটাই আমি বুঝলামনা। আমিতো গোঁরামীটাকেই ভাঙ্গার চেষ্টা করছি।

আমি কোথায় মানবের অকল্যানের চেষ্টা করলাম একটু ধরিয়ে দিলে কৃতার্থ হব।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।