আগামী প্রজন্মের জন্যে স্পপ্নের বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই। ইতিহাস যেন নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দলের জাদুর কাঠি। যখন যেভাবে প্রয়োজন সেভাবেই পরিবর্তিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়কে তারা রাজনৈতিক প্রয়োজনে বিকৃত করেছেন, করেছেন কলংকিত। এরকমই এক বিকৃতির স্বীকার গু আজমের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির ইতিহাসও।
তবে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তা কি সম্ভব? মোটেও না। সহব্লগার ও পাঠকদের অনুরোধ করব পুরোলেখাটা মনযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল।
গোলাম আজমের নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছেন জনপ্রিয় ফেসবুক ব্যাক্তিত্ব জাবি শিক্ষক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান অ্যাপেলো স্যার।
বাজারে একটি মিথ্যা প্রচারনা আছে যে, বিএনপি গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দিয়েছিলো। প্রসঙ্গ হচ্ছে-
১/ গোলাম আযমের নাগরিকত্ব কী বিএনপি দিয়েছে, না কী আদালত দিয়েছে?
২/ আদালত দিলে সেই বিচার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী কী ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং বিচারকরা নির্মোহ ছিলেন কী না?
বিষয়টি নিয়ে এই পেজ থেকে একটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছিলো [ক], তাতে প্রমান করে দেয়া হয়েছিলো যে-
১/ গোলাম আযমের নাগরিত্ব বিএনপি সরকার কোন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দেয় নাই, বরং ১৯৯২ সালে বিএনপি আমলে গোলাম আযমকে বিনা নাগরিকত্বে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করার কারণে গ্রেফতার হয়েছিলো।
২/ গোলাম আযম আদালতের রায়ে তার নাগরিকত্ব ফেরত পেয়েছিলো। সেই আদালতে বিচারক ছিলেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান, (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি এবং ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান), বিচারপতি লতিফুর রহমান (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান), বিচারপতি মোস্তফা কামাল (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি) এবং বিচারপতি এটিএম আফজাল (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি)। বিচারপতি হাবিবুর রহমান দেশের মধ্যে প্রগতিশীল যে অংশটার বিবেক হিসেবে পরিচিত তারা নিজেরাই 'বিএনপি গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দিয়েছিলো' তত্ত্বে বিশ্বাস করেন। অন্য তিনজন তো আওয়ামী লীগ আমলে (১৯৯৬-২০০১) প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।
বাকী রইলেন এটর্নী জেনারেল।
তৎকালীন এটর্নী জেনারেল আমিনুল হক বিচারপতি শাহাবুদ্দিন এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিয়োগ পেয়েছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং আওয়ামী পন্থী আইনজীবী ছিলেন। একজন ভিন্ন মতাবলম্বী আইনজীবীকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা নিযুক্ত রাখার কারণে সেই সময় বিএনপি সরকার প্রশংসিত হয়েছিলো। তাহলে দেখা যাচ্ছে সরকারীভাবে হস্তক্ষেপমুক্ত একটি আদালত কর্তৃক গোলাম আযম তার নাগরিকত্ব ফেরত পায়, যেই নাগরিকত্ব বাতিল করে গোলাম আযমকে বিদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলো খোদ বিএনপির সরকার!
সেই পোস্টে কিছু তথ্যগত ভুল ছিলো যা পরবর্তীতে একটি কমেন্ট সংশোধন করে দেয়া হয়েছিলো। ভূলগুলো ছিলো প্রথমত: গোলাম আযমের আমীর হবার তারিখ নিয়ে; পোস্টে বলা হয়েছিলো ১৯৯২ সাল যা বাস্তবে ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেমন্বর (২ দিনের পার্থক্য)। ভূল ছিলো একজন বিচারকের নামে; যা সংশোধন করা হয়েছে।
পোস্টে বলা ছিলো ফুল বেঞ্চ, বাস্তবে ছিলো চার সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ।
পোস্টে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ প্রধান কর্তৃক গোলাম আযমের নিকট রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ধর্না দেবার সত্যটাও উল্লেখ ছিলো। একটি ফেসবুক স্ট্যটাসে বেশি কিছু উল্লেখ করা যায় না বিধায় সেখানে গোলাম ১৯৭৮-১৯৯২ সাল পর্যন্ত গোলাম আযমের অবস্থানের বিস্তারিত বিবরণ বর্ননা করা হয় নাই এমন কী ১৯৯৩-৯৬ সময়কালে গোলাম আযমের দেয়া 'কেয়ার টেকার গভর্নমেন্ট' নিয়ে গোলাম আযমেরই নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামীর সাথে আওয়ামী লীগের যৌথ আন্দোলনের বিষয়েও বলা হয় নাই। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যে গোলাম আযমের আশ্রয়দাতা ছিলো আওয়ামী লীগ অনুমোদিত এরশাদের জাতীয় পার্টি, সেই বিষয়েও কিছু বলা হয় নাই।
সেই স্ট্যাটাসটি 'বিএনপি গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দিয়েছিলো' তত্ত্বকে পুরোপুরি ভুল প্রমান করায় ঐ তত্ত্বের প্রচারকদের প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছে।
এই পেজে এসে তারা গালাগালি করেছে, অবশেষে বিভিন্ন হুমকী ধামকী দিয়ে নিঝুম মজুমদার নামক এক ব্লগার ও সমাজসেবী পোস্টটিকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে একটি ব্লগ লিখেছেন [খ]। ব্লগটি পড়ে দেখলাম। তিনি স্ট্যাটাসের কমেন্টে স্বীকার করা ভূল তথ্যগুলো নিয়েই লেবু কচলেছেন এবং প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বিএনপি সরকার নয়, বরং আদালত ফিরিয়ে দিয়েছিলো। কী ভয়াবহ বৈপরিত্য!
পুরো ব্লগে উনার প্রচেষ্টা ছিলো ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ কর্তৃক গোলাম আযমের নিকট ধর্না দেবার বিষয়টি অস্বীকার করা; যদিও বিভিন্ন উদৃতি দিয়ে উনি নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে ঘটনা আংশিক সত্য। যুক্তিবাদী মানুষ মাত্রেই জানেন আংশিক সত্য বলে কিছু নেই; তাহলে বিষয়টি দাড়াচ্ছে ঘটনা সত্য।
এরপর উনি ১৯৭৯ সালে ঢাবি টিএসসিতে জিয়ার সাথে গোলাম আযমের হ্যান্ডশেকের একটি ভুল ছবি প্রকাশ করেছেন [গ]। ছবিটি যদি সত্য হতো তাহলে উনাদের আওয়ামী পন্থী ঢাবি শিক্ষরা অনেকেই এর সত্যতা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসতো। যেহেতু এখনো পর্যন্ত এই ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায় নাই, তাই ১৯৭৩ সালে ভুট্টো ও টিক্কার সাথে শেখ মুজিবের কোলাকুলি [ঘ] বা হ্যান্ডশেকের [ঙ] কাউন্টার হিসেবেই এই ছবির আগমন বলে ধরে নেয়া হলো।
সার্বিকভাবে নিঝুম মজুমদার আমাকে জামায়াতের সাথে বিএনপির সখ্যতার কথা চেপে যাবার অভিযোগে অভিযুক্ত করলেও নিজে জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের সখ্যতার কথা চেপে গেছেন। আর এই বাস্তবতা অস্বীকার করেছেন যে, কোন আন্দোলনের ফলে নয় বরং বিএনপির আগ্রহের কারণেই গোলাম আযমকে গ্রেফতার করে জেলে রাখা হয়েছিলো (আওয়ামী লীগের মত এসি কেবিনে নয়)।
তিনি বলতে ভুলে গেছেন ১৯৯১ সালে ঢাবিতে ছাত্রদলের ছেলেরা মতিউর রহমান নিজামীকে প্রহার করার পর সহমর্মী হয়ে শেখ সেলিম তাকে দেখতে গিয়েছিলো [চ]। তিনি বলতে ভুলে গেছেন সেই সময় শেখ হাসিনা নিজেকে জাপা ও জামায়াতে ইসলামীরও নেত্রী বলে দাবী করেছিলেন [ছ]।
গোলাম আজম মামলা বিষয়ে হাবীবুর রহমানের স্বীকারোক্তি [জ]।
এই ব্লগ লিখে তিনি কী আসলে কাউকে মিথ্যাবাদী প্রমান করতে পারলেন?
না পারেন নাই।
তিনি যদি প্রমান করতে পারতেন যে 'বিএনপি গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দিয়েছিলো' তাহলে তার প্রচেষ্টা সফর হতো।
তিনি তা প্রমান করতে পারেন নাই। কিছু ভুল তথ্যে নিয়ে টানা হেঁচড়া করে তিনি প্রাসঙ্গিক সত্যটাকে শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেই নিয়েছেন যে, গোলাম আযম নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন উনাদেরই আস্থাভাজন বিচার ব্যবস্থায়।
এইভাবে অন্যের চরিত্রহানী করে হয়তো উনি সাম্প্রতিক সময়ে উনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার হতাহতদের সাহায্যার্থে উত্তোলিত টাকা আত্মসাত, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের জন্য উত্তোলিত অর্থ ভাগাভাগির বিরোধ বা ফ্রিডম পার্টির সাথে সংশ্লিষ্টটার অভিযোগ থেকে সবার আলোচনাকে প্রশমিত করতে পারবেন তবে সত্যকে চাপা দিতে পারবেন না; গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের প্রহসন ধামাচাপা দিতে পারবেন না।
[অফ টপিক: জিয়াউর রহমান যদি গোলাম আযমকে দেশে ফিরতে না দিতেন তবে উনারা আজ কার বিচার করতেন? ১৯৫ জন চিন্হিত যুদ্ধাপরাধীকে তো উনারা আগেই পাকিস্তান ফেরত পাঠিয়েছিলেন। ]
-----------------
তথ্য সংযোক্তি
ক. স্যারের স্ট্যাটাস Click This Link target='_blank' >এখানে
খ. স্যারের স্ট্যাটাস নিয়ে রাজাকারের জামাতা নিজুম মজুমদারের ম্যাতকার
গ. জিয়াউর রহমানের সাথে বিচারপতি বিচারপতি মোস্তফা কামাল।
গায়ক আব্বাস উদ্দিনের ছেলে। অথচ হাম্বার দল এটাকে গোলাম আজম বলে দাবী করছে। ছবি
ঘ. জুলফিকার আলী ভুট্টুর সাথে শেখ মুজিবের গলাগলি, অথচ এই ভুট্টুকে ক্ষমতায় বসাতে টিক্কা খানরা বাংলায় রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল। কিসের এত খুশি
ঙ. বাংলার কসাই টিক্কা খানের সাথে শেখ মুজিবের করমর্দন। খুশিইতো ছিলেন মুজিব
চ. নিজামীর সাস্থের খোজ নিতে শেখ সেলিম হাসপাতালে।
রামের লীলা খেলা
ছ. হাসিনা যেন কারকার নেত্রী? ডান হতে রাজাকার বাম হাতে সৈরাচার যাবি কই?
জ. ্যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিচার প্রতি হাবিবুর রহমানের আর্টিকেল। ইন্ডিয়ার আলোতে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।