নিজকে আজও আবিষ্কার করতে পারিনি। পৃথিবীটা অনেক স্বার্থপর। পৃথিবীর এই স্বার্থপরতা ব্যথিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটা শুধু কঠিন না অনেকটা অসম্ভবও বটে। স্বার্থের মুড়কে আবৃত পৃথিবীর প্রতিটি কর্মের পিছনে যেমন একটা না একটা স্বার্থ থাকে তেমনি প্রতিটি সম্পর্কের মাঝেও কিছু স্বার্থ বিদ্যমান। আর এই বাস্তবতা অস্বীকার করার কোন পথ নেই।
যেখানে ঈশ্বরই স্বার্থের ঊর্ধ্বে নয় তবে আমারা কিভাবে স্বার্থ-মুক্ত জীবন করব। বিধাতাও এই বিশ্বলোক সৃষ্টি করেছিলেন তার আপন স্বার্থ সামনে রেখে। পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে সৃষ্টিকর্তার স্বার্থ তার প্রতি মর্ত বাসির উপাসনা। আর মর্ত বাসির উপাসনাও নিঃস্বার্থ নয়। ঈশ্বরের উপাসনার মধ্যমে স্বর্গগমন মর্ত বাসির স্বার্থ।
সুতরাং সৃষ্টিকর্তার সাথেই যেখানে আমাদের সম্পর্ক স্বার্থের ডুরে বাধা তবে মর্তলোক কি করে পারস্পরিক স্বার্থ মুক্ত থাকবে। তাই মানুষের চরিত্রে স্বার্থপরতা থাকাটা খারাপ কিছু নয়। একজন মানুষ সবকিছুর আগে তার নিজের কথা ভাববে এটাই স্বাভাবিক। সম্পর্ক আর স্বার্থ দুটি খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত। আদমের স্বার্থে বিধাতা হওয়াকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, আবার হওয়ার স্বার্থে আদমকে।
আর এর মধ্যে বিধাতার স্বার্থ ছিল তার সৃষ্টির বুকে মনুষ্য জাতির আবাদ করা (যদিও বিধাতা চাইলে অন্য যেকোনো ভাবেই তা করতে পারতেন)। স্বার্থ ছাড়া যেমন সম্পর্ক হয় না তেমনি সম্পর্ক না থাকলে স্বার্থও আসে না। যেকোনো নতুন সম্পর্ক কিছু স্বার্থ কেন্দ্রিক। ধরুন দুজন তরুণ তরুণী পরস্পরকে ভালবাসে। তারা কেন পরস্পরকে ভালবাসে? অনেক তরুণীর মধ্যে তরুণ কেন সেই নির্দিষ্ট তরুণীটিকেই ভালবাসেন, আর তরুণীটিই কেনবা ওই নির্দিষ্ট তরুণটিকেই ভালবাসেন? তার কারণ একটাই আর তাহলো স্বার্থ।
হয়ত সেই নির্দিষ্ট তরুণীটি অনেক রূপসী, আর তার রূপের স্বার্থে তরুণটি তাকে ভালবাসেন। নতুবা তার আচরণের কিছু দিক তরুণটিকে মুগ্ধ করেছে, যা কিনা তরুণটির কাম্য। অথবা তার সঙ্গ তরুণটিকে অনেক আনন্দ দেয়, আর এই আনন্দ পাওয়ার স্বার্থেই তরুণটি তাকে ভালবাসে। তরুণীটির ক্ষেত্রেও উল্লেখিত স্বার্থগুলির যেকোনো একটির কারণেই হয়ত সে তরুণটিকে ভালবাসে। আবার এমনও হতে পারে তারা দুজন দুজনের ভালবাসা পাওয়ার স্বার্থে পরস্পরকে ভালবাসেন।
এইসব স্বার্থ ছাড়া অনেক সময় আর্থিক স্বার্থও সম্পর্কের কারণ হতে পারে। আর এর কোনটি সম্পর্কের ভালবাসার নির্ণয়ের মাপ কাঠি নয়। আমি আগেই বলেছিলাম স্বার্থ ছাড়া সম্পর্ক হয় না ওই স্বার্থগুলোর উপস্থিতির কারণেই দুটি মানুষের মধ্যে সম্পর্ক হয়েছিল। প্রায় প্রতিটি সম্পর্কই এইরকম কিছু স্বার্থ দ্বারা আবর্তিত। এমনকি বাবার সাথেও প্রতিটি সন্তানের সম্পর্ক স্বার্থ কেন্দ্রিক।
বাবা সন্তানকে মানুষ করেন বড় হয়ে সন্তান তার মুখ উজ্জ্বল করবে, বার্ধক্যকে তার দেখা শুনা করবে, কিংবা বংশে বাতি দেয়ার ভবিষ্যৎ বংশধর রক্ষার স্বার্থকে সামনে রেখে। তার মানে এই নয় যে বাবা ও সন্তানের সম্পর্ক শুধু স্বার্থের বেড়াজালেই বন্ধী, আর আমরা বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক অনেক তুচ্ছ করে দেখব। এই স্বার্থগুলোই বাবা এবং সন্তানের সম্পর্কের স্রষ্টা। স্বার্থের উপস্থিতির কাছে সম্পর্ককে ছোট করে দেখার কোন যৌক্তিকতা ততক্ষণ নেই যতক্ষণ না স্বার্থের কাছে সম্পর্কের মর্যাদা কমে না যায়। স্বার্থ সম্পর্কে থাকবেই কিন্তু স্বার্থকে যখন সম্পর্কের চেয়ে বড় করে দেখা হয় তখন সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা-বোধ কমে।
আর শ্রদ্ধা বোধ ছাড়া কখনও সম্পর্ক টিকে না। সুতরাং স্বার্থ সম্পর্কের জন্ম দেয় স্বার্থ সম্পর্ক ভাঙ্গে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।