!!!
শাহেদ দাঁড়িয়ে আছে ধানমন্ডি রাফা প্লাজার পাশে মিতুর অফিসের নিচে,ছায়া মতো একটা জায়গায়। পাচটা বাজলেই মিতু অফিস থেকে বের হবে। এখন বাজে চারটা তেত্রিশ। আরো সাতাশ মিনিট শাহেদকে অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য সাতাশ মিনিট অপেক্ষা করা শাহেদের জন্য কোনো ব্যাপারই না।
তাছাড়া সেই অপেক্ষাটা যদি হয় মিতুর জন্য তাহলে সাতাশ মিনিট কেনো সাতাশ ঘন্টাও সে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে,তার একটুও বিরক্তি লাগবেনা।
মিতু আজ পর্যন্ত শাহেদকে যেখানে যে সময়ে আসতে বলছে শাহেদ নিদিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগেই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। কখনো কখনো তো দুইঘন্টা আগেও গিয়ে উপস্থিত হয়ে যায়।
প্রথম প্রথম মিতু এটা টের পেতোনা পরে কেমন করে জানি মিতু ব্যাপারটা ধরে পেললো। মিতুর সবচেয়ে বড় দোষটা হলো সে অসম্ভব বুদ্ধিমতি মেয়ে,তার কাছ থেকে কোনো কিছুই লুকিয়ে রাখা যায় না।
সাধারনতদেখা যায় সুন্দরী মেয়েদের বুদ্ধি কম হয় কিন্তু মিতুর ক্ষেত্রে একথা যায় না,সে সবকিছুই কেমন করে জানি বুঝে যায়।
শাহেদের আগে আগে আসার জন্য শাহেদকে মিতু অনেক বকাও দেয়।
মিতু খুবই গোছানো মেয়ে,কোন প্রকার অনিয়ম সে সহ্য করতে পারেনা।
এ কথাতো সে শাহেদকে প্রায়ই বলে আমি এমন একটা গুছানো মেয়ে হয়ে কেমন করে যে তোমার মতো এরকম ছানাবড়া টাইপ একটা মানুষকে ভালোবাসতে গেলাম আল্লাই জানে!
অবশ্য মিতুর বকা শুনতে শাহেদের খাপার লাগেনা বরং ভালোই লাগে। শাহেদের ধারনা মিতুর মতো এমন সুন্দর করে বকা দিতে আর কোন মেয়েই পারেনা।
আল্লাপাক কতো ক্ষমতা দিয়েই না মিতুকে পৃথিবিতে পাঠিয়েছে। ভাগ্যিস শাহেদের সাথেই মিতুর প্রেমটা হয়েছিলো।
শাহেদের ধারনা কোন এক জন্মে সে কোন একটি অসম্ভব ভালো কাজ করেছিলো বলে আল্লাপাক তার জন্য স্পেশাল করে মিতুকে বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।
প্রথম প্রথম তো মিতু শাহেদের সিগারেট খাওয়া একদম সহ্য করতে পারতোনা। পরে একদিন সে শাহেদকে বললো এখন থেকে প্রতিদিন পাচটার বেশী সিগারেট খাবেনা।
শাহেদ প্রচুর সিগারেট খায়,তার পক্ষে কোনভাবেই পাচটা সিগারেট খেয়ে থাকা সম্ভব না আর একথাই যখন মিতুকে বললো
মিতু শাহেদের সিগারেট প্রীতি অনুভব করতে পেরে প্রতিদিন তাকে দশটা পরযন্ত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলো। শাহেদের ধারনা মিতুর জায়গায় অন্যকোন মেয়ে হলে কখনোই তাকে দশটা সিগারেট খাওয়ার অনুমতি দিতো না।
শাহেদ কবিতা লেখে তার যাবতীয় সপ্ন কবিতাকে কেন্দ্র করে।
সে সপ্ন দেখে একদিন সে দেশ-বরন্যে কবি হবে। সবাই একনামে তাকে চিনবে।
কিন্তু মিতু চায় শাহেদ কবিতা লেখার পাশাপাশি একটা চাকরী করুক। চাকরীর ব্যাপারটা এলেই মিতুর সাথে শাহেদের অমিল হয়।
শাহেদ মিতুকে কোনভাবেই বোঝাতে পারে না তাকে দিয়ে এসব চাকরী-পাকরী হবেনা। শাহেদের পক্ষে কোন শৃঙ্খলে থাকা সম্ভব না। সবচেয়ে বড় কথা সে সময় মত কিছু করতে অভ্যস্ত না।
তবুও মিতুর কথা মত শাহেদ কিছুদিন একটা চাকরীতে জয়েনও করেছিলো। মাইনেও ভালো ছিলো-আট হাজার টাকা। কিন্তু শাহেদের পক্ষে চাকরীটা নিয়মিত করা সম্ভব হয় নি। অবশ্য ওটা সম্ভব হয়নি ভিন্ন একটা কারনে। শাহেদের সেই অফিসটা ছিলো গুলশানে।
অফিস শেষ হতো বিকাল পাচটায়।
পাচটা অফিস শেষ করে ধানমন্ডি মিতুর অফিসে আসতে আসতে তার সাতটা বেজে যেতো। ফলে মিতুর সাথে তার প্রতিদিন যে দেখাটা হতো সেটা আর হতো না।
এটা শাহেদের পক্ষে কোনদিনো মেনে নেয়া সম্ভব না। শাহেদের কথা হলো মিতু পৃথিবীর যেই প্রান্তেই থাকুক না কেনো তার সাথে প্রতিদিন অন্তত একবার করে দেখা হতে হবে।
শাহেদ অনেক কষ্ট করে গুলশানের চাকরীটা একমাস করেছিলো।
ঐ একটা মাস যে শাহেদের কি বিশ্রি কেটেছিলো তা একমাত্র শাহেদই জানে।
সেই মাসটা শুক্রবার ছাড়া মিতুর সাথে তার দেখাই হতো না।
একমাস পর যখন শাহেদ চাকরী ছেড়ে দিয়ে মিতুর অফিসের নিচে অপেক্ষা করছিলো তখন মিতু তাকে দেখেই বললো কি ব্যাপার তুমি আজ অফিসে যাওনি?
শাহেদ বললো আমি আর ঐ চাকরীটা করবোনা।
শাহেদের মুখ থেকে একথা শুনেই মিতু বুঝতে পেরেছিলো শাহেদ কেনো চাকরীটা করতে চাচ্ছে না কিন্তু শাহেদকে সেটা বুঝতে না দিয়ে মেজাজ খারাপ করে শুধু বললো আচ্ছা তুমি যে এসব পাগলামি কর-আমি যদি কোনদিন মরে যাই তখন তুমি কি করবে?
শাহেদ কোনদিনই মিতুর উপর রাগ করেনি কিন্তু সেদিন মিতুর মুখ থেকে একথা শোনার পর তার উপর অনেক রাগ করেছিলো।
সেদিন শাহেদ মিতুর সাথে একসাথে থেকেও প্রায় ত্রিশ মিনিট তার সাথে কথা বলেনি। মিতু যখন অনেকবার সরি বললো তখনো কথা বলেনি। এরপর মিতু যখন বললো আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আর কখনো এমন কথা বলবো না। তখন শাহেদ বললো কান ধর!মিতু কান ধরে প্রমিজ বলার পর শাহেদ মিতুর সাথে কথা বলেছে।
এরপর মিতু পাচশো টাকার একটা নোট শাহেদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো এই নাও।
চাকরী ছেড়ে দিয়েছো আরেকটা চাকরী না-হওয়া অবধি তো আমার খরচেই চলতে হবে।
মিতু বললো এই পর্যন্ত কতো টাকা নিয়েছো হিসাব করেছো?শাহেদ হ্যা সূচক মাথা নেড়ে টাকাটা হাত বাড়িয়ে নিলো। মিতু বললো হুম,হিসেব করে রাখো। বিয়ের পর সব টাকা কড়া-গন্ডায় আমাকে ফেরত দেবে।
আমি দেখি ধানমন্ডির মধ্যেই তোমার জন্য একটা চাকরী ম্যানেজ করতে পারি কিনা।
একথা শুনে শাহেদের আনন্দের আর সীমা রইলোনা। মিতু কেমন করে যে শাহেদের মনের কথা গুলো বুঝে যায় এটা অনেক চিন্তা করেও শাহেদ বের করতে পারেনা।
শাহেদের পকেটে কোন টাকা নেই একথা মিতুকে সে বলতে হয়নি। মিতুই বুঝে নিয়ে তাকে টাকা দিয়েছে। শাহেদের ধানমন্ডিতে চাকরী দরকার এটাও সে বুঝে নিয়েছে।
এসব ভেবেভেবেই মিতুর প্রতি তার ভেতরে ভেতরে অদ্ভত রকমের একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো।
শাহেদ এরপর নিজে নিজেও ধানমন্ডি এলাকায় অনেক গুলো অফিসে চাকরীর জন্য এপ্লাই করেছে। কয়েকটা চাকরী তার হয়েও গিয়েছিলো কিন্তু মিতুর অফিসের টাইমের সাথে তার অফিসের টাইম না মিলাতে সে চাকরী গুলো নিলোনা।
একথা মিতুকে বলার সাথে সাথেই মিতু তার উপর ক্ষেপে গেলো। শাহেদ প্রায়ি চেষ্টা করে মিতুকে রাগিয়ে দিতে,এই কাজটা সে ইচ্ছে করেই করে।
কারন রেগে গেলে মিতুকে এতো সুন্দর লাগে যে শাহেদ মিতুর এই রাগান্নিত চেহারা দেখার সুযোগটা মিস করতে চায়না।
তার কিছুদিন পর শাহেদ মিতুকে বলল আচ্ছা মিতু তোমার অফিসে কোন পোস্ট খালি নেই?
ইস তোমার অফিসে যদি জয়েন করতে পারতাম আমার আর কিছুই চাওয়ার ছিলো না।
মিতু একটা হাসি দিয়ে বললো আছে।
শাহেদ বললো সত্যি?
মিতু বললো হ্যা সত্যি,দারোয়ানের পোষ্ট,করবে?
শাহেদ বললো তুমি সত্যি বলছো?
মিতু বললো তুমি এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে তুমি দারোয়ানের চাকরী করবে?
শাহেদ উত্তর দিলো হ্যা,তাতে কি?আমি করবো?
মিতু বললো মানে?
মানে আবার কি দারোয়ানের পোস্টই তো আমার জন্য পারপেক্ট। কারো অনুগত হয়ে থাকতে হবেনা।
সারাদিন দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে,ইচ্ছে মতো ভাবা যাবে,কবিতা লিখা যাবে তাছাড়া তোমাকে দেখতে মন চাইলে ইচ্ছে মতো দেখা যাবে এরপর অফিস শেষে দুজন একসাথে বাসায় যাওয়া যাবে।
মিতু বললো তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?
না মিতু খারাপ হয়নি-প্লিজ তোমার কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই তুমি আমাকে এই চাকরীটা পাইয়ে দাও-প্লিজ।
মাইনে যাইহোক আমিএই সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইনা।
শাহেদের এই শিশু সুলভ আচরনটা মিতু প্রথমে মেনে নিতে চায়নি কিন্তু কিছুক্ষণ পর তার কি যে হলো হুট করে শাহেদের কথা শুনে নিজের প্রতি শাহেদের ভালোবাসা অনুভব করতে পেরেই বোধয় মিতুর চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। মিতু আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো শাহেদ যেনো তার চোখের পানিটা দেখে না যায়-তাহলে বিশ্রি ব্যাপার হবে।
একটা মানুষ একটা মানুষকে এতোটা ভালোবাসতে পারে!এটা মিতু জানতো না!
সে শাহেদকে সন্মতি দিলো।
মিতুর সন্মতি পেয়ে শাহেদের আনন্দের সীমা রইলোনা।
শাহেদের আনন্দিত মুখ দেখে মিতুরও অনেক আনন্দ হলো। মিতু মনেমনে বললো-জেনে-শুনে পাগলকে ভালবেসেছি এখন তার চাহিদাকে তো প্রশ্রয় দিতেই হবে!
বিঃদ্রঃশাহেদে চাকরীতে জয়েন করলো। জয়েন করার পর অফিসে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হলো।
যদিও সমস্যা সৃষ্টি হওয়াটাই সাভাবিক ছিলো কারন মিতু যে অফিসের চার-পাচজন উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের একজন আর শাহেদ সেখানকার দারোয়ান।
দারোয়ানের চাকরীটা শাহেদের মোটেও খারাপ লাগছিলোনা বরং সে উপোভোগ করছিলো।
তার কবিতা লেখায়ও কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। শাহেদকে নিয়ে মিতু যখন তার কলিগদের সামনে বিভিন্ন রকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লো তখন মিতু নিজেই বাধ্য হয়ে চাকরীটা ছেড়ে দিলো।
মিতু জানতো সে চাকরী ছেড়ে দিলে শাহেদও চাকরীটা করবেনা,হলোও তাই।
শাহেদ আর মিতু বিয়ে করেছে। শাহেদ এখন একটা প্রথম শ্রেনীর পত্রিকায় চাকরী করে,সাহিত্য সম্পাদক। তাদের দুটো যময মেয়েও আছে। লুতফা আর হরপ্পা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।