মানুষের চরিত্র বড়ই জটিল আর জটিল চরিত্রের মানুষকে নিয়ে কিছু লেখা আরো জটিল। হাসতে হাসতে টক, ঝাল, মিষ্টি একটা খবর সাপ্লাই দিল মমদেল। খবরটা বেজায় লোভনীয় গোত্রের না হলে সবাই এমন হা করে গিলতনা। মনে হয় এটিই আজকের খবরের কাগজের সবচেয়ে মজাদার আইটেম। শশুরের হাত ধরে ছেলের বউয়ের পলায়ন!
আমি একপাশ্বে বসে মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজের নিয়োগ বিজ্ঞাপনগুলো দেখছিলাম ।
ওদের হৈচৈ মেশানো খবরটা আমার কানে এমনভাবে আঘাত করল যে, আমি আর খবরের কাগজে মনোযোগ রাখতে পারিনি। ওরা সবাই মিলে বউ আর শশুর সর্ম্পকে কতসব রসালো মন্তব্য করছিল। কেউ শশুরকে দোষী করছিল, কেউ আবার বউকে। একজন বলতেছিল- শালা বুড়া বয়সে ভীমরতী হয়েছে। কেউ আবার ছেলেকে নিষ্কর্মা বলে ঘোষণা করছিল।
ব্যাপারটা শোনে আমি খুব একটা আশ্চার্য হইনি কারন মানুষ সব পারে (এটা আমার ব্যক্তিগত ধারনা)। মানুষ যতটা না ভাল হতে পারে তার চেয়ে বেশি খারাপ হতে পারে। স্বার্থের তরে মানুষ সবকিছুকে জলাঞ্জলী দিতে পারে। হয়তবা এর চেয়েও কোন জঘন্য খবর চাপা পড়ে আছে আপনার মনের গহীন অন্ধকারে। যেমনটি রয়েছে আমার অন্তরে।
আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। কত আর বয়স হবে, তের কি চৌদ্দ। তবে বয়সের তোলনায় বুদ্ধিটা (মন্দ বুদ্ধি) একটু বেশিই ছিল বোধ হয়। বাড়ির সবাইকে বড় জ্বালাতন করতাম তা আজও মনে আছে। আমার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রথমদিন বিয়ে করে ঘরে বউ আনলেন ছোট মামা।
মনে মনে ভাবলাম এবার আমার লিস্টে আরো একজন যোগ হল।
কিছুদিন যেতে না যেতেই আমি মামীর খুব ভক্ত হয়ে গেলাম। মেয়েটি যাদুটোনা জানে কিনা এব্যাপারে আমার সন্দেহ হতে লাগল। যদি তা না জানে তবে আমার মত বাদর মানুষ হচ্ছে কিভাবে। পড়ার সময় ঘুম, খাওয়ার সময় খেলা এইসব রুটিনগুলো নিজের অজান্তেই পাল্টে গেল।
মেয়েটিকে আমার খুব শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছা করে, ওকে মা বলে ডাকতে ইচ্ছা করে। একসময় ওকে মা বলা শুরু করে দিলাম।
মামীর যখন বিয়ে হয়েছিল তখন আমার থেকে বয়সে মাত্র তিন বছরের বড় ছিলেন। আমাকে খুব আদর যত্ন করতেন তিনি। প্রতিদিন আমার জন্য কিছু একটা হলেও স্পেশাল রান্না করতেন।
মামী আমাকে নিজের ছেলের চেয়েও হয়ত বেশিই স্নেহ করতেন। এইভাবেই চলে গেল দুই বছর। মামী প্রথম সন্তানের জন্ম হবার কিছুদিন পর আমি মেট্রিক পাশ করলাম। সেই সাথে আমার নানার বাড়িতে থাকার ইতি ঘটল, আমাদের বাড়িতে চলে এলাম আমি।
প্রায় দুই বছর মামা মামীর সাথে দেখা হয়নি আমার।
ইতিমধ্যেই মামী আবারো মা হলেন। এবার তিনি একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দিলেন। হঠাৎ মামার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে গেলাম সেখানে। সেবার দুদিন ছিলাম মামার পাশ্বে। মামীর সাথে খুব একটা কথা হয়নি তখন।
মামা কিছুটা সুস্থ হবার পর আমি আবার চলে গেলাম আমার গন্তব্যে। এবার বুঝতে পারলাম মামী নিজের সন্তান পেয়ে আমাকে ভুলে গিয়েছেন।
কিন্তু না, নিজের সন্তানের জন্য নয়। পরে জানতে পেরেছিলাম তিনি পাশ্বের বাড়ির এক ছেলেকে দুরসর্ম্পকীয় ভাগ্নে থেকে ছেলে বানিয়েছেন। আর পাতানো সেই ছেলেকে পেয়ে আমার কথা তিনি ভুলে গিয়েছেন।
যে ছেলেকে ছেলে বলে আদর স্নেহ করছেন তার আর মামীর বয়সের মধ্যে মোটামোটি বার বছরের ব্যবধান হতে পারে। ছেলেও শোনেছি নতুন মা পেয়ে মহা খুশি। ভাবলাম ভালই হল। বাড়িতে অন্য কোন মানুষ থাকেনা, মামা প্রায়ই ব্যবসার কাজে বাইরে থাকেন। মামী অন্তত কথা বলার মত একজন মানুষ পেলেন।
আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে মামা মামীর প্রতিদিনের খবর রাখা আমার জন্য মোটেও কষ্টকর নয়। এমনিতেই সকল খবর আমার কানে চলে আসতেছে অবলীলায়। সেদিন যে খবরটি আমার মাথা নষ্ট করে দিয়েছিল তা হল, পাতানো ছেলের হাত ধরে এক রমনীর গৃহত্যাগ!
খবরটি শোনে আমি আশ্চর্য হইনি মোটেও। কারন আমার মনে হয় মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে। পৃথিবীর কোন সম্পর্ক-ই স্বার্থের উর্দ্ধে নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।