~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
আমাদের এক ছোট ভাই বাবু গতবছর ফোন করে বলেছিলো “ভাই, একটা সুখবর আছে। আমার বউ এর ভিসা হয়ে গেছে। দোয়া করবেন”। নিঃসন্দেহে সুখবর। আমরা সবাই খুব খুশী হই, ওকে কনগ্রেচুলেট করি, বাসায় আসতে বলি।
একদিন বাসায় এসে সে সবাইকে পিজা খাওয়ায়। সবাই মিলে আনন্দ করে। লজ্জা লজ্জা মূখ নিয়ে ওদের সম্পর্কে কিছু কথা বলে। ওদের সম্পর্ক প্রায় তিন বছরের। নেট’এ পরিচয়ের সুত্র ধরে প্রেম।
অস্ট্রেলিয়াতে আসার আগে সবার অজান্তে বিয়ে। দু’বাড়ীর ঝামেলা মিটে যেতে সময় লেগেছিলো দুই মাস। তারপর থেকে বাবু’র বউ মাঝে মাঝেই বাবু’দের বাসায় গিয়ে থাকতো। সায়মা খুব ভালো মেয়ে, ভালোই মানিয়ে নিয়েছিলো ওদের বাড়ীতে। এর কিছুদিন পর বাবু তার বউ নিয়ে আসে অস্ট্রেলিয়াতে।
বাসা নেয় সিটির কাছেই। আমি সায়মা’র কাজের ব্যাবস্থা করে দেই আমার কাজের যায়গাতেই। মাঝে মাঝে আসতে যেতে দেখা হতো সায়মার সাথে, সায়মার খুশী খুশী মূখটা দেখতে ভালোই লাগতো। ছোট্ট দুইটা মানুষ, কি করে সংসার করে দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার। কিন্তু ওরা বার বার যেতে বললেও না না ঝামেলাই থেকে আমার আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি ওদের বাসায়।
হঠাৎ করে একদিন সায়মা কাজে আসা বন্ধ করে দেয়, খোঁজ নিতে গিয়ে গিয়ে দুঃসংবাদটা শুনলাম। বাবু আর সায়মা’র নাকি সেপারেশন হয়ে গেছে কিছুদিন আগে। বাবু কোথায় আছে, কেমন আছে কেউ জানে না, ও বাসায় নেই, ওর মোবাইলটাও বন্ধ। আর সায়মা বাবু’র বন্ধুর সাথে মেলবোর্ন চলে গেছে !!! বাবু, সায়মা আর ওই ছেলেটা একই বাসায় থাকতো। নতুন বউ নিয়ে এসে নতুন সংসার সামলাতে বাবুকে অনেক বেশী কাজ করতে হয়েছে কয়েকদিন।
সেই সময় বাবুর বন্ধুর সাথে সায়মার একটা সম্পর্ক তৈরী হয়, আর তার ফলাফল হিসেবে সেপারেশন।
অস্ট্রেলিয়াতে এমন ঘটনা এটাই প্রথম না। বাঙ্গালী ফ্যামিলিতে আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, পরেও ঘটবে। কিন্তু আমরা সবাই মিলে যেটা নিয়ে আলাপ করেছিলাম, সেটা হলো, একটা সম্পর্ক ধরে রাখে কোন জিনিসটা? কিসের টানে দু’টা মানুষ বছরের পর বছর এক সাথে থাকে? বিয়ে একটা শক্ত বাধন, কিন্তু বিয়েটা কি পারে দু’টি মানুষের মন কে একসাথে ধরে রাখতে? বাবুদের ক্ষেত্রে তা তো হয়নি। সায়মা তো ভালবেসেই বিয়ে করেছিলো বাবুকে।
তাহলে কিসের টানে সায়মা অস্ট্রেলিয়াতে আসার কয়েক মাসের মদ্ধেই এমন একটা কাজ করলো?
আমি তো কোন রিলেশন বিশেষজ্ঞ না, কিন্তু আমার মনে হয়, দু’জন মানুষের ভালোবাসা ধরে রাখার জন্য কিছু সাধারন নিয়ম মেনে চললে সম্পর্ক ভালো থাকে বা স্থায়ী হয়।
১) Understanding: ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝতে হবে। নিজের মত করে না, তার মত করেই তাকে বোঝা উচিৎ। মনে রাখতে হবে যে সে একজন আলাদা মানুষ। তার জীবনটাকে সে নিজের মত করে দেখতে ভালবাসে।
তার একটা আলাদা গন্ডি আছে, নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে। তার চিন্তাগুলোকে সন্মান দিতে হবে। হয়তো তার চিন্তাধারায় অনেক ভুল থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিটা মানুষই আলাদা। কেউই ১০০% যৌক্তিক চিন্তা করে না, অথবা এক এক জনের ক্ষেত্রে যুক্তিটা এক এক রকম হয়। তার চিন্তা ধারাকে অনুসরন করতে পারলে অনেক সমস্যা আপনা থেকেই সমাধান হয়ে যাবে।
২) Be Honest every time: Honesty’র কোন বিকল্প নেই। প্রতিটা কাজে, কথায়, emotion’এ Honest থাকলে দু’জনের জন্যই দু’জনকে বুঝতে অনেক সুবিধা হয়।
৩) Give time: দু’জনের দু’জনকে সময় দিতে হবে। ২৪ ঘন্টা একসাথে থাকতে হবে, এমন কোন কথা নেই, কারণও নেই। কিন্তু যেটুকু সময় একসাথে থাকা যায়, সে সময়টাতে সে যেন বুঝতে পারে যে আমি তার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম।
আর একসাথে থাকার সময়টা যেন হয় “শুধুই আমাদের”।
৪) Let him/her know: ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে। এটা আশা করা ঠিক না যে সব সময় সে আমার মনের ভাষা বুঝে নেবে। মন মানূষিকতার আর পরিবেশের উপর এই বুঝে নেয়াটা নির্ভর করে, কিন্তু মানুষের মন মানূষিকতা সব সময় এক রকম থাকে না। কাজেই, মনের ভাবটা ভালবাসারই হোক, অথবা রাগের, বুঝতে দিতে হবে তাকে।
৫) Rearranging things: ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের মত করে গড়ে নিতে চায় সবাই। তার খারাপ অভ্যাসগুলো অথবা তার খামখেয়ালিপনা, যাই হোক না কেন, তাকে তার ভূলগুলো ধরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এই কাজটা করতে হবে খুব সাবধানে। তার দুর্বলতার কারনে তাকে কখনই ছোট করা যাবে না। বরং তাকে ভালবাসা দিয়ে বোঝাতে হবে, তার খারাপ অভ্যাসগুলো কি ভাবে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তা বলতে হবে।
আর ছাড় দিতে হবে নিজের ক্ষেত্রেও। আমার যদি ইচ্ছে করে যে তাকে আমি আমার মত করে গড়ে নেবো, তবে তারও অবস্যই এই একই ইচ্ছে করে।
৬) Present gifts: উপহার পেতে সবারই ভালো লাগে। উপহারের একটা নিজস্ব ভাষা আছে, তা হলো “I care”. কিন্তু উপহার যে শুধু দোকানের দামী কোন জিনিশ হতে হবে, এমনটা কখনই না। একটা ফুল, চকলেট বা একটুকরো হাসিও খুব ভালো উপহার হতে পারে যদি আপনি ঠিক সময়ে সঠিক ভাবে সেটা দিতে পারেন।
৭) Sex: জৈবিক এই চাহিদাটিকেও গুরুত্ব দিন। ছোট থেকেই আমরা সেক্স সম্পর্কে একটা ভুল ধারনা নিয়ে বড় হই। আমাদের শেখানো হয় যে সেক্স হচ্ছে একটা নিষিদ্ধ ব্যাপার, এই বিষয়ে আলোচনা করাটাও যেন অন্যায়। ফলে বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে তৈরী হয় সঙ্কোচ আর অনেক তথ্য জানা না থাকার কারণে অনেকেরই সেই একান্ত নিজেদের সময়টা কাটে বিভিষিকার মধ্যে। সমাধান? নিজেকে জানুন, নিজের সম্পর্কে জানুন, আপনার সঙ্গি সম্পর্কেও জানুন।
সমস্যা মনে হলে ডাক্তারের সাহায্য নিন।
সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য আরো অনেক কিছুই করা উচিৎ। মনে রাখতে হবে যে জীবনটা আমারই, কাজেই জীবনটাকে সুন্দর রাখার দায়িত্বটাও আমার। আর সব সময় যে সব কিছু নিজের মত করে নেয়া যাবে, তার কোন মানে নেই। আলো আছে বলেই আমরা অন্ধকারকে অনূভব করতে পারি।
* Yahoo! 360 ব্লগে পুর্বে প্রকাশিত
** তথ্যসূত্রঃ 9to5 ম্যাগাজিন
*** বাবু এবং সায়মা নাম দুটো কাল্পনিক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।