জয় বাংলা ..... আমার পিতা একজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনি তেমন পড়াশোনা করতে পারেননি , মোটামুটি মানের শিক্ষিত বলতে পারেন।
উনার আত্নসম্মানবোধ প্রখর ছিল, উনি নিজের এবং তার স্বজাতিকে বৈষম্মের শিকার হতে দেখে কষ্ঠ পেতেন, হায়েনারা বাঙালীকে মানুষের মত মূল্যায়ন করে না বলে উনার খারাপ লাগত। উনি সবসময় বৈষম্মহীন গর্বিত এক বাঙালী জাতির স্বপ্ন দেখতেন।
উনি বিশ্বাস করতেন একমাত্র স্বাধীনতাই সব সমস্যা দুর করতে পারে। তাই মাত্র ১৮-২০ বছর বয়সে শত্রু খতম করে দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলেন।
নয় মাস ধরে প্রতি মূহুর্তে নিজের জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে বাঙালীদের স্বাধীনতা অর্জনে ভুমিকা রেখেছিলেন।
উনি তার বিনিময়ে কিছুই আশা করেননি, অভাব অনটন বিহীন সম্মানীত জীবন যাপন করার স্বপ্ন ছিল তার মধ্যে।
দেশ স্বাধীন হয়েছে বহু বছর, এতদিনে বাবা বহুকিছু দেখেছেন। আমিও বাবার বড় সন্তান হিসেবেও বহুকিছু দেখেছি। এতদিনে আমার উপলব্ধি হযেছে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শেস্ঠ সন্তান শুধু বইয়ের পাতায়।
তাদেরকে সবসময় লিখিত ভাবে সম্মান দেয়া হয় আর বাস্তবে শুধু অপমান ছাড়া আর কিছু করা হয় না। যাই হোক এগুলা বিশাল ঘঠনা সামনে হয়ত ধারবাহিক ভাবে লিখব।
গতকালের একটা ঘঠনা বলি
দেশে আবার মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে সনদ দেয়া হচ্ছে। আর এ জন্য ২ কপি ছবি জমা দিতে হবে, আর সেই ছবি প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করাতে হবে। বাবা গতকাল সকালে সেই ছবি সত্যায়িত করানোর জন্য মতিঝিলস্থ রাজউক ভবনে গিয়েছিলেন।
এ ভবনে তিন তলায় সর্বমোট ৪০ টারও বেশী কক্ষ আছে আর সব কক্ষ মিলিয়ে এ ভবনে গেজেটেড কমকর্তা রয়েছেন আমার ধারনা মতে প্রায় ৩০ জনেরও বেশী।
আর এই রাজউক ভবনে আমার বাবাকে ২ কপি ছবি সত্যায়িত করার জন্য প্রতিটা রুমে রুমে যেয়ে সম্মানীত গেজেটেড কর্মকর্তাদের অনোরোধ করতে হয়েছে। সম্মানিত গেজেটেড কমকর্তারা একজন মুক্তিযোদ্ধার ছবি সত্যায়িত করতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছিলেন। তারা তার এই অনোরোধের প্রেক্ষিতে তাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে একপ্রকার তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
আমার বাবা তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখানোর পরও অনেক সম্মানিত গেজেটেড কর্মকর্তারা জিজ্ঞেস করেছেন, আপনাকে ত আমার চিনি না আমার কোন আপনার ছবি সত্যায়িত করব?
আমার বৃদ্ধ বাবা প্রায় দুই ঘন্ঠা ধরে দুই কপি ছবি সত্যায়িত করারা জন্য রাজউকের ৩ তলার প্রায় সব রুমের কর্মকতাদের অনোরোধ করার পরও তার ছবিতে কোন সম্মানিত গেজেটেড কর্মকর্তাদের সাইন আর সীল জোঠেনি।
[
শেষমেস এক কমকর্তা আমার বাবাকে সিলেটের এক গেজেটেড কমর্তার রোম নাম্বার বলে তার কাছ থেকে যেয়ে সত্যায়িত করাতে বলেন কারন আমাদের গ্রামেরবাড়িও সিলেট। যাই হোক সিলেটের ওই কর্মকর্তার রোমে যাওয়ার পরে ঘঠে আরেক বিপত্তি, ভদ্রলোক আজ অফিসে আসেননি এখন কি হবে , বাবা আবার পাশের রোমের সম্মানিত গেজেটেড কমকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী, মোঃ শাহজাহান এর কাছে যেয়ে অনোরোধ করেন কিন্তু প্রথমে তিনিও দিতে রাজী হননি। তারপর তাকে বহু কষ্ঠে বুঝিয়ে এবং বহুবার অনোরোধ করে অবশেষে পেলেন সেই বহুল কাঙ্খিত গেজেটেড কর্মকর্তার সীল।
বাবার মুখে এই ঘঠনা শুনার পর আমি বিব্রত হইনি কারন বোঝ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এরকম বহুবার দেখেছি। একসময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে গর্ব বোধ করলে এখন কেমন জানি মনে হয়।
এসব ঘঠনা শুনার পর শুধু বাবার সেই স্বপ্নগুলার কথা মনে হয়।
---------------------------------------------------------------------------
উনি নিজের এবং তার স্বজাতিকে বৈষম্মের শিকার হতে দেখে কষ্ঠ পেতেন, বাঙালীকে মানুষের মত মূল্যায়ন করে না বলে উনার খারাপ লাগত। উনি সবসময় বৈষম্মহীন গর্বিত এক বাঙালী জাতির স্বপ্ন দেখতেন। উনি বিশ্বাস করতেন একমাত্র স্বাধীনতাই সব সমস্য দুর করতে পারে।
---------------------------------------------------------------------------
হ্যা বাবা তোমার স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে, বাঙালী আজ বৈষম্যহীন গর্বিত এক জাতী।
তারা আজ সমঅধিকার পায়। তাদরেকে আজ আর শাষক বাহিনী বন্দুকের নলের ভয়ে মাথা নত রেখে কথা বলে না। তাদেরকে আজ আর কেউ নির্বিচারে হত্যা করে না। বাঙালীরা আজ তাদের যোগত্যা অনুষারে চাকুরী পায়।
হ্যা বাবা বাঙালীরা আজ গেজেটেড কর্মকর্তা,
তারা আজ আর সেদিনের মুক্তিযোদ্ধাদের অর্জনের কথা মনে রাখে না,
লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, তার মাঝে তোমার মত সমান্য এক মুক্তিয়োদ্ধাকে অপমান করলে কার কি আসে যায় ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।