আবু কাওসার ( সমকাল-২১/০৪/২০১১ )----
অসচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাড়িঘর নির্মাণ করবে সরকার। যেসব মুক্তিযোদ্ধার স্থায়ী আয়ের কোনো উৎস ও চাষাবাদের জন্য নিজস্ব জমি নেই তারা এ সুবিধা পাবেন। গ্রামে বসবাসরত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী অর্থবছরের (২০১১-১২) বাজেটে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের 'সম্মানী ভাতা'ও বাড়ছে আসন্ন বাজেটে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ২ হাজার ৫০০ টাকা করা হচ্ছে। বর্তমানে ভাতা ২ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বর্তমান সরকার নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগামী বাজেট ঘোষণার পর থেকে
তা বাস্তবায়ন শুরু হবে। প্রস্তাবিত কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে_ অসচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য আবাসন গড়ে তোলা, প্রত্যেক উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, জেলা পর্যায়ে মার্কেট তৈরি ইত্যাদি।
এছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমাধিস্থল সংরক্ষণ, সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বধ্যভূমি সংরক্ষণ, পাশাপাশি এগুলো উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য আসন্ন বাজেটে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার জন্য অতিরিক্ত ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে আগামী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির মাধ্যমে।
জানা গেছে, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্প নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৬ কোটি টাকা। সারাদেশে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও প্রাথিমিকভাবে ১৭ হাজার বাড়িঘর নির্মাণ করা হবে। প্রথম ধাপের কাজ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী বাস্তবায়ন করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে ৫০০ স্কয়ার ফুট আয়তনের একটি করে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
যেসব মুক্তিযোদ্ধার নিজস্ব বসতভিটা থাকবে না তাদের জমির ব্যবস্থা করে দেবে সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হবে। কারা এ সুবিধা পাবেন সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও থাকবে। আগামী বাজেটে বরাদ্দ নিশ্চিত হওয়ার পর এর কাজ শুরু হবে। দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে কমপ্লেক্স ভবন নির্মানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য প্রকল্পে বাস্তবায়নে বাজেটে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৪০৬ কোটি টাকা। কমপ্লেক্স ভবনের নিচতলায় থাকবে মার্কেট, দোতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অফিস, তিনতলায় থাকবে কমিউনিটি সেন্টার। মার্কেটগুলো পরিচালনা করা হবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। এখান থেকে যে আয় আসবে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।
এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে একটি করে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি টাকা। রাজধানীর কাকরাইলে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতলবিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সম্মানী ভাতা বাড়ছে : বর্তমানে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ২ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। আগামী বাজেটে ভাতা আরও ৫শ' টাকা বাড়ানো হচ্ছে।
বর্তমানে দেড় লাখ মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্মানী ভাতা ৩ হাজার টাকা এবং উপকারভোগীর সংখ্যা আরও ২৫ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে। এ জন্য আগামী বাজেটে এ খাতে ৫০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তার এ পর্যন্ত ওই খাতে বরাদ্দের সব অর্থ ছাড় করেছে।
আগামী বাজেটে উপকারভোগীদের সংখ্যা বাড়ানো হবে না, তবে ভাতার হার বাড়ছে।
বর্তমান সরকার তার প্রথম মেয়াদের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী ভাতা চালু করে। ২০০০ সালে প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা চালু করা হয়। তখন ৩০০ টাকা করে দেওয়া হতো। পর্যায়ক্রমে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হয়।
গত বছর এ ভাতার পরিমাণ ছিল ১৫০০ টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে আরও ৫০০ টাকা বাড়িয়ে সম্মানী ভাতার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার টাকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।