আমরা শুধু আপন মানুষ খুঁজি, আপন মানুষদের খুঁজতে হয় না, তারা পাশেই থাকে !!
হঠাৎ করেই যেন কবরগুলোর উদয় হলো ।
নামফলকে লিখা রয়েছে: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের কবর/ সমাধিস্থল ! "এখানে শায়িত আছেন সিলেট এমসি রনাঙ্গনে যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকগন। ১৯৭১ সালের চৌদ্দ ডিসেম্বর তারিখে পাক হানাদার বাহিনির সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে 'বি' এবং 'ডি' কোম্পানির সৈনিকগন এখানে শাহাদাত বরন করেন । " তার মানে এটি মোটেও একটি সাধারণ কবর নয় । এ কবর গুলোতে শুয়ে আছেন নাম না জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধা ।
যারা ১৯৭১ এ পাক হানাদারের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন ।
এখানে লিখা আছে- শহীদ সুবেদার ফয়েজ আহমেদকে মরনোত্তর 'বীর উত্তম' ও শহীদ নায়েক মো: আফসাল আলী কে মরনোত্তর 'বীর বিক্রম' উপাধি দেয়া হয়” ! বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে থেকে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন জনকে তাদের অবদানের ভিত্তিতে বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম ও বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করেন। বীর উত্তম বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বীরত্বের পুরস্কার। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ৬৮ জনকে এবং পরবর্তীতে আরো একজনসহ এখন পর্যন্ত মোট ৬৯ জনকে এই উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। বীরবিক্রম তৃতীয় সর্বোচ্চ উপাধি।
মোট ১৭৫ জনকে এই উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ভাবতে গর্বে বুকটি ফুলে যাচ্ছে আমি যে এলাকাটিতে থাকি সেটি ১৯৭১ সালে সরাসরি রনাঙ্গন ছিল । শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে যখন দেখি এই গনকবরগুলোতে শুয়ে আছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান । যার মধ্যে রয়েছেন একজন বীর উত্তম ও একজন বীর বিক্রম ।
এখানে এই কবরগুলোর খবর শুধুমাত্র তৎকালীন সম্মুখ যুদ্ধে এ এলাকাটিতে যারা অংশ নিয়েছিলেন ও বাংলাদেশ সেনাবিহিনিই জানতো ।
মাত্র কয়েকদিন এ কবর গুলো বাঁধাই করা হয়েছে । বাঁধাই করার আগে বাংলাদেশ সেনাবাহীনি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মাটি খুড়ে খুড়ে অনেক হাড়গোর পেয়েছে এবং বিস্তর গবেষণা করা জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছে ।
কিভাবে আসবেন: সিলেট শহরের টিলাগড় থেকে আম্বরখানা রোডে মাদানী ঈদগাহের মুখেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রোড । এ রোডে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে । যেমন, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জেলা ছাগল উন্নয়ন খামার, টিলাগড় ইকো পার্ক, জেলা দুগ্ধ খামার, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র ইত্যাদি ।
এ রোডে ঢুকে কয়েককদম হাটলেই বড় গনকবরটি দেখতে পাবেন । ধারনা করা হয় এখানে সবচে বেশী মুক্তিযোদ্ধা কবর দেয়া / পুতে ফেলা হয়েছে । মাটির সিড়ি করে দেয়া হয়েছে । কবরগুলো ঠিক টিলার মাঝখানে । এর একটু পরেই সামান্য হাটলেই দুগ্ধ খামার ।
খামারের মেইন গেট দিয়ে ঢুকে অফিসটার সামনেই ছায়া ঘেরা আরো একটা গন কবর । আমার চাচা চাকুরী করতেন এখানে সেই সুবাদে এখানে অনেক এসেছি । ক্যাম্পাসে ভর্তি হবার পর বন্ধুদের নিয়ে আড্ডার ছলেও এখানে এসেছি । এরপর থেকে আসবো শ্রদ্ধা নিয়ে, মাথা নূয়ে । দুগ্ধ খামার থেকে বেড়িয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের দিকে হাটতে থাকলে উচূ নিচু সবুজ টিলা গুলো আপনার মন ভরিয়ে দিবে ।
এগুতে এগুতে সিকৃবি টিচার্স-অফিসার্স ডরমেটরীর সামনেই টিলার কোলে আরেকটি গণ কবর !
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশই যেন একটি গণকবর ছিল । কতো মানুষ কতো জায়গায় গুলি খেয়ে পড়েছিল ইয়াত্তা নাই । স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধের বিরোধীশক্তি এখনো লাল সবুজের পতাকা খামচে ধরে আছে । অথচ আমরা গোল্ড ফিশের মস্তিষ্কধারীরা সব ভূলে গেছি । টাকা, ক্ষমতা, স্বার্থের জন্য আপোষ করছি , চেতনা বিসর্জন দিচ্ছি ।
হায় বাংলাদেশ !
আমি সিলেট জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনিকে অনুরোধ করবো অতিসত্ত্বর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য কিংবা স্মৃতিফলক বানিয়ে দেয়ার জন্য । আমার বন্ধু তালিকায় অনেক সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক রয়েছেন । আপানারা প্লিজ আসুন , এ গনকবরগুলো নিয়ে আরো গবেষনা করুন , খবর করুন সারা বাংলাদেশকে জানিয়ে দিন । সামনের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি মহান বিজয় দিবস । তার আগেই ১৪ই ডিসেম্বর বাংলার মেধাকে হত্যার দিবস ।
এদিনে আমাদের এলাকাটিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন দিন । যেটি এতোদিন আমাদের কাছে অজানা ছিল । ১৯৭১ সালে ১৪ই ডিসেম্বর টিলাগড় আলুতল পাহারতলীতে এক রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন । যাদেরকে এখানেই সমাহিত করা হয়েছে । প্রিয় সিলেটসহ বাংলাদেশবাসী, আশা করি অন্ত:ত ১৪ ডিসেম্বরে আপনারা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে এখানে আসবেন ।
জয় বাংলা ! বাংলাদেশ চিরজীবী হোক !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।